॥ নন্দন দেবনাথ/মিল্টন বাহাদুর ॥ রাঙ্গামাটি জেলায় পাহাড় ধ্বসে ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০৫ জনে দাড়িয়েছে । রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের কন্টোল রুম খেকে বুধবার সন্ধ্যায় এ তথ্য জানানো হয়। বুধবার দ্বিতীয় দিনে উদ্ধার কর্মীরা ১০টি মৃত দেহ উদ্ধার করে। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
এর মধ্যে রাঙ্গামাটি শহরে ৪ সেনা সদস্যসহ ৫৮ জন, কাউখালী উপজেলায় ২৩ জন, কাপ্তাই উপজেলায় ১৮ জন, জুরাছড়ি উপজেলায় ৪ জন ও বিলাইছড়ি উপজেলায় ২ জন মারা গেছে।
এর মধ্যে শিশু হচ্ছে ৩৩ জন, মহিলা ৩০ জন পুরুষ ৪২ জন। এর মধ্যে নিখোঁজ রয়েছে অন্তত ২০ জন। আহত হয়েছে ৮২ জন। এর মধে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বেশ কয়েকজন চলে গেলেও ৩৯ জন রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
রাঙ্গামাটি ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম জানান বিভিন্ন গ্রুপে তারা উদ্দার কাজ চালাচ্ছেন। তিনি জানান দ্বিতীয় দিনে উদ্ধার তঃপরতা কঠিন হয়ে পড়ে। প্রচন্ড গরমে মাটি শক্ত হয়ে পড়ায় সমস্যা হচ্ছে। তারপরও মৃতদেহ উদ্ধারে চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।
এদিকে বুধবার সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাঙ্গামাটি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন। এর আগে তিনি সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের জানান, রাঙ্গামাটি ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পুর্ণবাসন ও সহায়তায় সরকার সব রকম সহযোগিতা করবে।
তিনি ত্রাণ মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে তাৎক্ষণিক ভাবে রাঙ্গামাটির দূর্গত মানুষের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা নগদ ১০০ মেট্রিক টন চাল, প্রত্যেককে ৫শত বান্ডিন টিন ও ৩ হাজার করে টাকা প্রদানের ঘোষণা দেন।
তিনি রাঙ্গামাটির চট্টগ্রাম সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা পুর্ণ স্থাপনের জন্য এবং রাঙ্গামাটি শহরে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করতে যা কিছু করার দরকার দ্রুত সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টদের নিদের্শ দেন।
এসময় এসময় আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক সুচিৎ কুমার নন্দী, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসিম কুমার উকিল, চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।
পরে তারা রাঙ্গামাটি শহরের মানিকছড়ি, শিমুলতলী, ভেদভেদী এলাকায় পাহাড় ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ও আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
দুপুরে রাঙ্গামাটি ক্ষতিগ্র্স্ত এলাকা পরিদর্শনে আসেন ত্রানমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন মায়া । ক্ষতিগ্র্স্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে তিনি জেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠিত সভায় যোগ দেন এবং ক্ষতিগ্রস্থতদের সব সকম সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালের কর্তরত চিকিৎসক ডাক্তার মাসুদুর রহমান জানান বুধবার মৃত এসেছে ১০ জন। ছাড়া রাঙ্গামাটি শহরে ৮২ জনকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৩৯ জনের অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাদেরকে ভর্তি দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৪৩ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি ।
এদিকে রাঙ্গামাটি জেলায় পাহাড় ধ্বসের ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা দাঁড়িছে ৭২০ পরিবার। ক্ষতিগ্রস্থ ঘর বাড়ির মধ্যে রাঙ্গামাটি সদরে ৯০,কাউখালী-১৯০, নানিয়ারচর-৩০ বরকল-৭০, চিংমরং, ওয়াগ্গার রাইখালী ৩৪০।
অন্যদিকে, রাঙ্গমাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, রাঙ্গামাটি- কাপ্তাই সড়ক, রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক বিছিন্ন রয়েছে।
রাঙ্গামাটি শহরে গত ৪ দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিছ্ছিন্ন রয়েছে। বাজারে জ্বালানি তেলের সংকট দিয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক বিঘœ ঘটায় টেলিযোগাযোগ ব্যহত হচ্ছে। পানি ও বিদ্যুৎ সংকটে মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের মাটি ভেঙ্গে পড়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
রাঙ্গমাটি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদ হোেসেন জানান , রাঙ্গমাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এর শাল বন এলাকায় ১০০ মিটার রাস্তা ৩০ ফুট জায়গা পাহাড়ের নীচে তলিয়ে গেছে। রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের বিভিন্ন স্থানে ১০০ মিটার রাস্তা ৪০থেকে ৫০ ফুট গভীরে তলিয়ে গেছে।
খাড়া পাহাড়ে পুনরায় কেটে বাইপাস করে সড়ক তৈরীর চেস্টা করছে সেনা বাহিনী ও সড়ক বিভাাগের কর্মীরা। এলজি ইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আদনান হোসেন জানান কাইখালী –ঘাঘড়া, বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া অভ্যন্তরীন রুটে রাজার হাট, লিচু বাগান, কারিগর পাড়া রাস্তার উপর পাহাড় ধ্বসে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
গত তিন দিনের একটানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি উচ্চতা বেড়ে যাওযায় নি¤œাঞ্চলে জেলার বিলাইছড়ির ফারুয়া, জুরাছড়ি এবং বরকলের ভুষণছড়ার নি¤œাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। জুরাছড়িতে ৩৩ শতাংশ জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।