গত তিন দিনের টানা বর্ষণে রাঙ্গামাটির মানুষের মাঝে আতংক বাড়ছে। সড়ক গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বড় ধরনের কোন পাহাড় ধ্বস না হলেও বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধ্বসে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক। এ অবস্থায় যে কোন মুহুর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম সড়কও। পাহাড়ের ঝুকিপূর্ন এলাকা থেকে সড়ে আসার জন্য প্রশাসনের পক্ষ শহরে মাইকিং করা হচ্ছে। অপরদিকে প্রবল বর্ষণে কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্পীলওূেয়র ১৬টি গেট সামান্য খুলে দিয়ে পানি ছেড়ে দিচ্ছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
রাঙ্গামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ১ মাস ৩ দিন পর রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কে মাটি ভরাটের মাধ্যমে সংযোগ পুনস্থাপন করে হালকা যানবাহনের জন্য খুলে দেয়া হলেও রাঙ্গামাটিতে গত তিন দিনের টানা বৃস্টির কারনে রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের কুতুকছড়ির মোনতলীতে সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে বৃষ্টির পানির তোড়ে ক্ষতি হওয়ার আশংকা দেখা দেয়ায় আবারো যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ এমদাদ হোসেন এ কথা নিশ্চিত করে জানান আবারো প্রবল বৃষ্টির কারনে এ সড়কে চলাচল ঝুকিঁ হয়ে উঠায় আপাতত এখন আর কোন যান চলাচর করতে দেয়া হচ্ছেনা। তবে যে কোন সময় সড়কটিতে যানবাহন চলাচল শুরু হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে রাঙ্গামাটিতে আবারো অতিবর্ষণের ফলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতকর্তা জারী করা হয়েছে। পাহাড়ের ঝুকিপূর্ন এলাকা থেকে সড়ে আসার জন্য প্রশাসনের পক্ষ শহরে মাইকিং করা হচ্ছে। সতর্কতামূলক মাইকিংয়ের কারণে শহরের বিভিন্ন ঝুকিপুর্ন এলাকা থেকে সড়ে এসে সাধারন মানুষ নিরাপদস্থানসহ বিভিন্ন অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে। অতিবর্ষণে শহরের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসা সাধারন মানুষের সহযোগীতায় সার্বক্ষনিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন রাঙ্গামাটি পৌরসভার কাউন্সিলররা।
গত কয়েকদিন আবহাওয়া ভালো থাকায় শহরের ৪ টি আশ্রয় কেন্দ্র গুলো থেকে আশ্রিত লোকজন চলে যেতে শুরু করে। কিন্তু গত ৩ দিনের টানা বর্ষণে আবারো আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে ভীড় করছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষ। গতকাল সকাল পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্র দেড় হাজারেরও বেশী মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছেন রাঙ্গামাটি জেলা ত্রাণ পুনর্বাসন কর্মকর্তা বিশ্বনাথ মজুমদার।
উল্লেখ্য ১৩ জুন একটানা ভারী বর্ষণ ও প্রচন্ড বজ্রপাতের কারণে রাঙ্গামাটি শহরে ঘটে যায় স্মরণ কালের ভয়াবহ পাহাড় ধ্বস। ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসের ফলে রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কের খামার পাড়া ও কুতুকছড়ির মোনতলা এলাকার ৬ কিলোমিটার এবং ৮ কিলোমিটার অংশে রাস্তার দুটি অংশে বিশাল এলাকা ধ্বসে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
দীর্ঘদিন পর এই রাস্তার সংযোগ করায় এলাকার জনগনর মাঝে স্বস্থি ফিরে আসে। গত একমাস রাস্তা বিচ্ছিন্ন থাকায় রাঙ্গামাটির সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় খাগড়াছড়ি, নানিয়ারচর, বাঘাইছড়ি, লংগদু ও কুতুকছড়ি এলাকাবাসীর।
দীর্ঘ একমাস চেষ্টা চালিয়ে সড়ক বিভাগের কর্মীরা মাটি ভরাট করে ১৭ জুলাই সড়কটি পূন সংযোগ স্থাপন করে। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, এই রাস্তার হালকা যানবাহনের জন্য খুলে দেন।
অপরদিকে প্রবল বর্ষণে কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধির কারণে পানির চাপ ধারণ ক্ষমতায় রাখতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্পীলওূেয়র ১৬টি গেট খুলে পানি ছাড়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবস্থাপক আব্দুর রহমান। কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমান ৮৭.৫২ এম.এস.এল (মিন সী লেভেল) থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে ১০৫.০৫ এম.এস.এল.। যা রুলকার্ভ এর হিসাব থেকে ১৮ফুট বেশী। এ কারণে বর্তমানে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৬ স্পিলওয়ে থেকে ২ ফুট করে পানি ছাড়া হচ্ছে।