শিরোনাম
প্রচ্ছদ / গণমাধ্যম / প্রধান বিচারপতির পদকে কলঙ্কিত করেছেন এস কে সিনহা: হাছান মাহমুদ

প্রধান বিচারপতির পদকে কলঙ্কিত করেছেন এস কে সিনহা: হাছান মাহমুদ

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে শপথ ভঙ্গ সংবিধান লঙ্ঘনের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগ নেতা হাছান মাহমুদ বলেছেন, তিনি প্রধান বিচারপতির পদকেকলঙ্কিত প্রশ্নবিদ্ধকরেছেন

মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক মানববন্ধন ও সমাবেশে এস কে সিনহা পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন মন্তব্য করে তার পদত্যাগও দাবি করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক।

‘বির্তকিত প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ’ শিরোনামে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগ আয়োজিত ওই সমাবেশে হাছান মাহমুদ বলেন, “যখন কোনো বিচারপতি শপথ গ্রহণ করে, তখন তিনি শপথ গ্রহণ করেন- ‘আমি অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হব না’।

“এই মামলায় যারা পক্ষ নয় তাদের প্রতি বিরাগের বশবর্তী হয়ে আপনি তাদের পক্ষ বানিয়েছেন। অর্থাৎ আপনি আপনার শপথ ভঙ্গ করেছেন। বাংলাদেশের সংবিধানে লেখা আছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আপনি আপনার রায়ে বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। আপনি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।”

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, “আপনি শপথ ভঙ্গ করেছেন, সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আপনি রাষ্ট্রদ্রোহিতার কাজ করেছেন কিনা- সেটিও আজকে চিন্তা ভাবনার বিষয়।

“সুতরাং আপনি পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। অনুরোধ জানাব মাননীয় প্রধান বিচারপতি শপথ ভঙ্গের অপরাধে, সংবিধান লঙ্ঘনের অপরাধে, রাষ্ট্রপতিকে খাটো করা, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অপরাধে আপনি আপনার পদ থেকে পদত্যাগ করুন।”

রাষ্ট্রপতিকে ‘রাষ্ট্রের প্রতীক’ অভিহিত করে তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টায় দেশদ্রোহিতা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার কথাও বলেন হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নিয়ে কেউ যদি প্রশ্ন তোলে, রাষ্ট্রপতিকে যদি প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয় সেটি দেশদ্রোহিতা কিনা সেটি চিন্তা করার বিষয় রয়েছে। আইনজ্ঞরা এ ব্যাপারে ভালো মতামত দিতে পারবেন।

“আপনি সংসদকে অপরিপক্ক বলেছেন। যদি সংসদ অপরিপক্ক হয়, এই সংসদই কিন্তু আপনার বেতন-ভাতা মঞ্জুর করেছে। অনুরোধ জানাব রায়ের পর্যবেক্ষণে যে যে কথা বলেছেন- এই পর্যন্ত যত বেতন-ভাতা গ্রহণ করেছেন এই সংসদে পাশ হওয়ার পর তা ফেরত দিন।”

সংখ্যালঘু এবং ‌‘উপজাতি’ বিবেচনায় এস কে সিনহাকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, “১৯৯৯ সালে দুটি বিবেচনায় আপনাকে হাই কোর্টের বিচারপতি করা হয়েছিল। প্রথমত আপনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দ্বিতীয়ত আপনি উপজাতীয় সম্প্রদায়ের।

“বাংলাদেশে সবার যে সমান অধিকার, এই অনগ্রসর শ্রেণি থেকেও যে বিচারপতি হতে পারে- সে উদাহরণ সৃষ্টির জন্যই আপনাকে বিচারপতি করা হয়েছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী বলে আপনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে উপজাতীয় শ্রেণি এবং সংখ্যালঘু শ্রেণির পক্ষ থেকে আপনি প্রধান বিচারপতি হয়েছেন।”

হাছান মাহমুদ বলেন, “কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য প্রধান বিচারপতির পদকে আপনি কলঙ্কিত করেছেন। প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। আপনি যেহেতু একাত্তরে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন, সেজন্য আদালতে বসে আপনি পাকিস্তানের উদাহরণ দেন।

“এটি পাকিস্তান নয়। পাকিস্তানকে তাড়িয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। আর এটি আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ জানে কেউ যদি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সেটি কিভাবে মোকাবেলা করতে হয়।”

হাছান মাহমুদ বলেন, “যথাযথ সম্মান রেখেই বলতে চাই আপনি ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা চলাকালীন নিজের মুখে স্বীকার করেছেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য গ্রামে গ্রামে যে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়েছিল, আপনি সে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। অর্থাৎ আমাদের দেশের মানুষ যখন স্বাধীনতা যুদ্ধে অকাতরে প্রাণ দিচ্ছিল তখন আপনি পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন।

“আপনি আপনার এ পরিচয় গোপন রেখেছিলেন। নিজেই মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন। আমার মতে, মৌলভীবাজার কোর্টের একজন আইনজীবী… শেখ হাসিনা যদি প্রধানমন্ত্রী না হত, কোনোদিন হাই কোর্টের বিচারপতি হতে পারতেন না।”

প্রধান বিচারপতির বক্তব্য উদ্ধৃত করে হাছান মাহমুদ বলেন, “আপনি বলেছেন বিচার বিভাগ অনেক ধৈর্য ধরেছে। আমরা আওয়ামী লীগও অনেক ধৈর্য ধরেছি। দেশের মানুষ অনেক ধৈর্য ধরেছে। অতীতের উদাহরণ বলতে চাই না। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির দরজায় লাথি মারা হয়েছে। এখনো সেই ঘটনা ঘটে নাই। সেই ঘটনা ঘটুক চাই না।

“বাংলাদেশে কামাল উদ্দিন হোসেনকে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে ড. এস কে মনিমকে প্রধান বিচারপতি করার পর তিনি এক বছর এজলাসে বসতে পারেননি। এজলাসে বসতে না পারা অবস্থাতেই প্রধান বিচারপতির পদ থেকে তাকে বিদায় নিতে হয়েছে। আমরা চাই না দেশে সে ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক।”

রায় নিয়ে লাফালাফি নয়

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ‘লাফালাফি’ না করতে বিএনপিকে আহ্বান জানিয়েছেন হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, “বিএনপিকে বলব রায় নিয়ে লাফালাফি করবেন না। এই সিনহা বাবুর রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা আছে, জিয়াউর রহমান সামরিক শাসন জারি করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল। তার আইনগুলো অবৈধ।

“আবার বিচারপতি খায়রুল হকের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে যে রায়, সে রায়ে সামরিক শাসন জারি করে জিয়াউর রহমানের কর্মকাণ্ডকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।”

হাছান বলেন, “অর্থাৎ জিয়াউর রহমান সামরিক শাসন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে যে বিএনপি গঠন করেছে সেটি অবৈধ। কেউ যদি নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বলে, তাহলে নির্বাচন কমিশন কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আপিলের ভিত্তিতে আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও করতে পারে।”

সমাবেশে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আবুল কাশেত চিশতী, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব, কৃষক লীগ সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

পড়ে দেখুন

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

॥ ডেস্ক রিপোর্ট ॥ অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের শহীদদের …