চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাটে বন্দরের ৪০০ মিটার জেটি প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরু হতে যাচ্ছে

বন্দর সূত্র জানায়, ২০১১ সালে বন্দরের নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ান মেরিটাইম অ্যান্ড ড্রেজিং করপোরেশন ওই এলাকায় খননকাজ শুরু করেছিল। ২০১৩ সালের আগস্টে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খননকাজ বন্ধ করে দেয়। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার এক বছরের মধ্যে পলি জমে ভরাট হয়ে যায় প্রকল্প এলাকা। এ কারণে প্রকল্পের আওতায় ৪০০ মিটার জেটি নির্মাণ হলেও সেখানে এখন পর্যন্ত জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হয়নি।

মনোরম পরিবেশের প্রকল্প এলাকা এরপর থেকে উন্মুক্ত রাখা হয়। কিছুদিনের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠে ৪০০ মিটারের এই জেটি এলাকা। যা পরবর্তীতে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা নেভালের কিছুটা অনুরূপ হওয়ায় লোকেমুখে প্রকল্প এলাকা ‘নেভাল-২’ নামে পরিচিতি পায়। দীর্ঘ চার বছর ধরে ‘নেভাল-২’ চট্টগ্রামের অন্যতম বিনোদন স্পট হিসেবে নগরবাসীর কাছে জনপ্রিয়।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, জেটি চালু করতে অসম্পূর্ণ কাজের দায়িত্ব পেয়েছে বাংলাদেশে নৌবাহিনী। নৌবাহিনী চট্টগ্রামের সদরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতুর উজান পর্যন্ত নদীর তীরের সোয়া তিন কিলোমিটার এলাকা খনন করবে। কাজ শুরু হওয়ার এক বছরের মধ্যে ওই এলাকা থেকে ৪২ লাখ ৮০ হাজার ঘনমিটার পলি মাটি অপসারণ করা হবে। খননকাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম বন্দরে লাইটার জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের একটি জেটি চালু করা যাবে। জেটির সামনে নদীতে পলি জমে থাকায় জাহাজ ভেড়ানো যাচ্ছেনা। এছাড়া নদী খননের ফলে নগরের আটটি খালের মুখের অংশে যেগুলো কর্ণফুলীর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ রয়েছে সেইসব খালের গভীরতা বাড়বে। এতে খালগুলো দিয়ে নগর থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশন সম্ভব হবে বলে আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা।

প্রায় ২৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নৌবাহিনীর মাধ্যমে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে খননকাজের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। চার বছরের এই প্রকল্প কিছুদিনের মধ্যে শুরু হতে পারে।

২০১৪ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষ মালয়েশিয়ান মেরিটাইম অ্যান্ড ড্রেজিং করপোরেশন সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে খননকাজের উদ্যোগ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের কাজ বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৩৬ লাখ ঘনমিটারের মধ্যে ১৫ লাখ ঘনমিটার বালু মাটি অপসারণ, তীর রক্ষা বাঁধ এবং ৪০০ মিটার জেটি নির্মাণ করে।

সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পূর্বের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ফেলে যাওয়া খননযন্ত্র, ক্রেন, এস্কেভেটর পড়ে আছে। বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী পরিবার কিংবা বন্ধুদের নিয়ে নদী তীরে জেটিতে ভিড় করেছে। খনন করে তোলা পলি মাটি বিভিন্ন জায়গায় স্তূপ আকারে আছে। এছাড়া নৌবাহিনী কাজ শুরুর আগে খনন কাজের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও এস্কেভেটর একদিকে রাখা আছে।

চার বছর পড়ে থাকার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে অসমাপ্ত কাজ শেষের দায়িত্ব দিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য পুরোদমে খননকাজ শুরু হবে। জেটির কাজ শুরু হলে একদিকে যেমন বন্দরের কন্টেইনার জট কমবে তেমনি নগরীর জলাবদ্ধতাও কিছু অংশে লাঘব হবে। এক প্রশ্নের জবাবে জাফর আলম বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রাখায় উন্মুক্ত প্রকল্প এলাকায় দর্শনার্থীরা ঘুরে বেড়িয়েছে। কিন্তু প্রকল্প এলাকা বিনোদন স্পট নয়। তাই কিছুদিনের মধ্যে প্রকল্প এলাকা কিংবা ‘নেভাল-২’ যে নামে ডাকুক তা সর্বসাধারনের প্রবেশ বন্ধ হয়ে যাবে।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031