বারী সিদ্দিকী আর নেই

ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এই কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার, বাঁশিবাদকের মৃত্যু হয়।

তার ছেলে সাব্বির সিদ্দিকী বলেন, তার বাবা হৃদরোগ ছাড়াও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।

গত ১৭ নভেম্বর রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে বারী সিদ্দিকীকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক আবদুল ওয়াহাবের তত্ত্বাবধায়নে সাত দিন আইসিইইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হলেও তার অবস্থার অবনতি ঠেকানো যায়নি।

মূলত লোকগান ও আধ্যাত্মিক ধারার গানের জন্য পরিচিত এই শিল্পী গত শতকের শেষ দিকে সারা দেশের শ্রোতাদের কাছে পৌঁছান কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে। চলচ্চিত্রের প্লেব্যাকে তার দরদী কণ্ঠের বেশ কিছু আবেগমাখা গান দারুণ জনপ্রিয়।

শুক্রবার সকালে বারী সিদ্দিকীর মরদেহ নেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে। সেখানে ভক্ত আর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কর্মীরা তার জানাজায় অংশ নেন।

এরপর তার কফিন নেওয়া হয় বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রাঙ্গণে। সেখানে আরেক দফা জানাজার পর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে এই শিল্পীর জেলা নেত্রকোণায়।

সাব্বির সিদ্দিকী  জানান, আসরের পর নেত্রকোণা সরকারি কলেজ মাঠে তার বাবার জানাজা হবে। পরে চল্লিশা কালী গ্রামে হবে দাফন।

১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর ভাটি অঞ্চলের এই জেলাতেই আবদুল বারী সিদ্দিকীর জন্ম। পরিবারেই শৈশবে তার গান শেখার হাতেখড়ি হয়।

কিশোর বয়সে নেত্রকোণার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের কাছে তালিম নিতে শুরু করেন বারী। পরে ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ বহু গুণীশিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য পান।

একটি কনসার্টে বারি সিদ্দিকীর গান শুনে তাকে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন ওস্তাদ আমিনুর রহমান। পরে ছয় বছর ধরে চলে সেই প্রশিক্ষণ।

সত্তরের দশকে নেত্রকোণা জেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হন বারী সিদ্দিকী। পরে ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ধ্রুপদী সংগীতের ওপর পড়াশোনা শুরু করেন। এক সময় বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং উচ্চাঙ্গ বংশীবাদনের প্রশিক্ষণ নেন।

নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন বারী। দেশে ফিরে লোকগানের সঙ্গে ধ্রুপদী সংগীতের মিশেলে গান শুরু করেন।

ঢাকার বিভিন্ন স্টুডিওতে বাঁশি বাজিয়ে বেড়ানোর মধ্যেই ১৯৯৩ সালে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে তার বাসায় এক অনুষ্ঠানে বাঁশি শোনাতে যান বারী সিদ্দিকী। সেই অনুষ্ঠানে বারীর বাঁশির চেয়ে তার কণ্ঠে গাওয়া রশিদ উদ্দিন বাউল আর উকিল মুন্সির গানই বেশি পছন্দ হয় হুমায়ূনের।

পরে লেখক হুমায়ূনের আগ্রহেই বারীর কণ্ঠে ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়,’ ‘পুবালি বাতাসে’ গানগুলো রেকর্ড করা হয়।

টেলিভিশনে ‘রঙের বাড়ই’ নামে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’ গানটি প্রচার করা হলে বারী সিদ্দিকী পৌঁছে যান সারা দেশের শ্রোতাদের হৃদয়ে।

১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় শ্রাবণ মেঘের দিন চলচ্চিত্রে সাতটি গানে কণ্ঠ দেন বারী সিদ্দিকী। ‘শুয়া চান পাখি’ গানটি সে সময় তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।

ওই বছরই জেনেভায় বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে যোগ দেন বারী সিদ্দিকী।

পরে রূপকথার গল্প, নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ, ও আমার দেশের মাটিসহ আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকে গেয়েছেন এই শিল্পী। তার কণ্ঠের গান নিয়ে ডজনখানেক অ্যালবামও প্রকাশিত হয়েছে।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930