সুদৃশ্য মোজাইক পাথরে আবৃত বিশাল মসজিদ প্রাঙ্গণ। একটু সামনে এগিয়ে যেতে চোখে পড়লো, ছোট একটা কামরায়দু’জন মানুষ প্রার্থনারত। এই কামরায় ভেতরেই কাঁচের বাক্সে সংরক্ষণ করা হচ্ছে দুটি পাথরের পবিত্র পদচিহ্ন। সেই কাঁচেরবাক্সটি আবার স্টিলের একটি কাঠামো দিয়ে বেস্টনি দেয়া হয়েছে। গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশের সৌজন্যে। বেস্টনির ডান পাশের পদচিহ্ন বরাবরেবাংলায় লেখা রয়েছে: ‘সরওয়ারে কায়েনাত হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম–এর কদম মোবারক’। বাম পাশের পদচিহ্ন বরাবরে লেখারয়েছে : ‘হযরত গাউসুল আজম আব্দুল কাদের জিলানী (র.) এর কদম মোবারক’।
মসজিদের সহকারী ইমাম মো. সোলায়মানের কাছ থেকে জানা গেছে, কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা, প্রথম মোতোয়াল্লি নবাব ইয়াসিনমুহাম্মদ খান (র.) ১৭১৯ খ্রিষ্টাব্দে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে মহানবী (স.)-এর ডান পায়ের ছাপ বিশিষ্ট প্রস্তরখ–টি এবং বাগদাদ থেকে বড়পীর হজরতআব্দুল কাদের জিলানী (র.)-এর পদচিহ্ন সংগ্রহ করেছিলেন।
কামরার বাইরে দেয়ালের ওপরে সেই একই বর্ণনা বাংলায় ছাপা হরফে লেখা রয়েছে। জানা যায়, ‘কদম মোবারক’ নামকরণ হয়েছে এই দুটি পবিত্রপাথরের পদচিহ্ন থেকে।
যেখানে পবিত্র পদচিহ্ন দুটি সংরক্ষণ করা হয়েছে সেটিই হচ্ছে মসজিদের মুল অংশ। এর বাইরে বর্ধিত অংশটি পরে নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদেরসহকারী ইমাম মো. সোলায়মানও বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বর্তমানে জামালখান ওয়ার্ডে অবস্থিত মোগল–আমলের অনুপম পুরাকীর্তি কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অধীনে রয়েছে।
মসজিদের পেছনের দিকে গেলেই নজরে আসে এর সত্যিকার স্থাপত্য শৈলীর নির্দশন। বিভিন্ন সময়ে সংস্কার ও সম্প্রসারণের পরও মোগল স্থাপত্যেরসৌন্দর্য বজায় রাখা হয়েছে বলে জানা যায়। উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত শতবর্ষের স্মৃতিবাহী আয়তাকার মসজিদটি পাঁচ গম্বুজের। একটি বড় গম্বুজ আরদুপাশে দুটি ছোট গম্বুজ রয়েছে। যার উত্তর ও দক্ষিণে চারকোনা আরও দুটি গম্বুজ রয়েছে। স্থাপত্যের ক্ষেত্রে মোগলেরা খিলান গম্বুজ ও খিলান ছাদকেপ্রাধান্য দিত। লতাগুল্মের নকশা, আরবি ক্যালিওগ্রাফি, জ্যামিতিক রেখাচিত্র, মোজাইক নকশা বসানো পাথরের সাজে সজ্জিত মসজিদটি।
গম্বুজের অস্তিত্ব অক্ষত থাকলেও সেগুলোর গায়ে শেকড় গেড়েছে বুনো গাছপালা। এর সামনে সীমানা দেয়ালের পাশ ঘেঁষে ছোট–বড় বিভিন্ন গাছগাছালিরঘন জঙ্গল তৈরি হয়েছে। মসজিদের সামনের দেয়ালের মাঝের দরজার দুপাশে আছে খিলান দেয়া তিনটি দরজা।