প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সশস্ত্র সন্ত্রাস আর চাঁদাবাজির অভিযোগে শীর্ষে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। শান্তিচুক্তি বিরোধী এ দলটির পাশাপাশি তিনটি সশস্ত্র গ্রুপের বেপরোয়া চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও প্রভাব বিস্তারের ঘটনায় যেন আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে পার্বত্য জনপদ। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সাধারণ মানুষ। প্রায় ১৯ বছর আগে শান্তিচুক্তির বিরোধীতা করে জন্ম নেওয়া ইউপিডিএফ এরই মধ্যে ভেঙে দুই ভাগ হয়েছে।
গত ১৫ নভেম্বর সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, নিজ দলের নেতা-কর্মীকে খুন করার অভিযোগ এনে ‘ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক’ নামে নতুন একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ইউপিডিএফ থেকে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বহিষ্কৃত ও জনসংহতি সমিতির সংস্কারপন্থি অংশের কিছু নেতাকর্মী এই দলটি গঠনের পেছনে রয়েছেন বলে জানা যায়।
সম্প্রতি শান্তিচুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ (প্রসিতা খিসা) নেতাদের গর্হীত সব অপকর্মের চিত্র পার্বত্যবাসীর সামনে তুলে ধরে ‘খোলা চিঠি’ দিয়েছে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক’। যা নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে পাহাড়জুড়ে। তারই একটি কপি গ্লোবালভিশন টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে এসে পৌঁছেছে।
‘খোলা চিঠি’তে ‘ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক’-এর পক্ষ থেকে সংগঠনটি ভাঙার কারণ জানিয়ে তা পার্বত্যবাসীর কাছে বিলি করা হচ্ছে। এতে সেখানে ইউপিডিএফ নেতাদের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, স্বেচ্ছাচারিতা, নারী কেলেঙ্কারী ও নিজ দলের নেতাকর্মীকে খুন করাসহ অপকর্মের লম্বা ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে। এতে ইউপিডিএফের কাছে যারা জিম্মি রয়েছেন তাদের এক জোট হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
১৬ পৃষ্ঠার খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তিবিরোধী বিশেষ মহলের প্ররোচনায় ইউপিডিএফ নাম দিয়ে জুম্ম জনগণের একটা অংশকে বিভ্রান্ত করে চলেছে। জুম্ম জনগণের একটা অংশ এই জঙ্গিচক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। কারণ, এই সংগঠনে যোগ দেওয়া যায় কিন্তু সরে আসার কোনো সুযোগ থাকে না।
‘ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক’-এর চিঠিতে সংগঠন ভাঙার কারণ উল্লেখ করে বলা হয়, ‘আমরা জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সংগঠনের নেতৃত্বে যারা আছেন তাদের প্রতি আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল। কিন্তু মুখোশের আড়ালে নেতাদের যে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা ছিল আমরা বুঝে উঠতে পারিনি। সময়ের পরিক্রমায় তাদের মুখোশ উন্মোচিত হলে আমরা বিষয়টি বুঝতে পেরে পার্টির নিয়ম অনুযায়ী সমালোচনা ও দ্বন্দ্ব নিরসনে গঠনমূলক উপায়ে পার্টির ভাবমূর্তি রক্ষার চেষ্টা করেছি। পার্টির নেতৃত্ব দুর্নীতিবাজ নেতাদের রক্ষা করে সৎ ও যোগ্য নেতাকর্মীদের পদে পদে বঞ্চিত করেছে। ’
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এসব কারণে অনেক নেতাকর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে দেশে-বিদেশে অবস্থান করছেন। আবার দলের শীর্ষ নেতাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করায় পার্টি কর্তৃক অনেককে খুন করা হয়। চিঠিতে ১০ জনের একটি তালিকা দিয়ে বলা হয়েছে, ইউপিডিএফ ছেড়ে দিয়ে নিষ্ক্রিয় হতে চাইলে তাদের আর্থিক দণ্ড দিতে হয়। নিজ কর্মীদের খুনের উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়েছে, ইউপিডিএফ যদিও নিজেদের গণতান্ত্রিক পার্টি দাবি করে কিন্তু তাদের কাজকর্মে মনে হয় তারা ডাকাতের পার্টিতে পরিণত হয়েছে। এ কারণে ইউপিডিএফ তার নিজ কর্মীকে মেরে ফেলতে দ্বিধাবোধ করে না। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হওয়া নেতাকর্মীদের তালিকাও প্রকাশ করেছে দলটি।
খোলা চিঠিতে বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়। এ তালিকায় রয়েছেন পার্টির কেন্দ্রীয় কালেক্টর রবিচন্দ্র চাকমা (অর্কিড/অর্ণব), সমাজপ্রিয় চাকমা, জেএসএস থেকে বহিষ্কৃত প্রগতি চাকমা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব চাকমা, সুনেন্দু চাকমা, সমশান্তি চাকমা, কাঞ্চন চাকমা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রদীপন খীসা, কালোপ্রিয় চাকমা, শান্তিপ্রিয় চাকমা, সমির চাকমা, সুগত, জ্যোতিবিন্দু চাকমা, হ্যাচ্ছ্যা চাকমা, রাঙ্গ্যা চাকমা, রঞ্জনমুনি চাকমা প্রমুখ।
চিঠিতে মোবাইল নম্বরসহ নাম দেয়া হয়েছে বর্মা চাকমা ও তরু চাকমার। উল্লিখিত মোবাইল নম্বরে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তা খোলা পাওয়া যায়নি।
গ্লোবালভিশন টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমএম