সমালোচিত ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা বিলুপ্ত করে সেগুলোর বিস্তারিত বিন্যাস সংযোজনের মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের প্রস্তাবে সরকার সায় দিলেও ওইসব ধারায় হওয়া আগের মামলাগুলো কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন আইজিপি একেএম শহীদুল হক।
সোমবার বিকালে পুলিশ সদর দফতরে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পুলিশপ্রধান বলেন, “আইন যখন তৈরি হয় বা ওই আইন যখন সংশোধন বা রদ হবে, ওই আইনের অতীতের সব কর্মকাণ্ড কিন্তু অব্যাহত থাকবে। তা কখনও বাতিল হয় না।
“কিন্তু যেদিন থেকে ওই আইন সংশোধন বা এনফোর্স হবে সেদিন থেকে পুরনো আইন বাতিল হবে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন- ২০১৮’ এর খসড়া অনুমোদন পায়।
নতুন আইন পাস হলে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা বিলুপ্ত হবে। তার বদলে এসব ধারার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে অপরাধের প্রকৃতি অনুযায়ী শাস্তির বিধান রাখা হচ্ছে নতুন আইনে।
প্রস্তাবিত আইনে জামিনযোগ্য ও জামিন অযোগ্য বেশ কিছু ধারাও রয়েছে।
সদরদপ্তরের নির্দেশ ছাড়া মামলা নিতে নিষেধ করেছেন জানিয়ে আইজিপি বলেন, “এরপর যেসব মামলা নেওয়া হয়েছে তা যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হয়েছে। সত্যতা আছে তাই কিছু মামলা নেওয়া হয়েছে।”
নতুন আইনেও ৫৭ ধারার মত কিছু ধারা রয়েছে, সেক্ষেত্রেও একই নির্দেশ পুলিশ সদরদপ্তর থেকে থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নতুন আইন যেটা হবে সেটা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত কিছু বলতে পারব না।
“যে অপরাধের জন্য ৫৭ ধারা দেওয়া হয়েছিল সেই অপরাধগুলো যদি থাকে তাহলে তো মুশকিল। তবে বিস্তারিত না জেনে কিছু বলা যাবে না।”
২০১৬ সালের ২২ অগাস্ট ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া মন্ত্রিসভার নীতিগত অনুমোদন পায়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালালে বা তাতে মদদ দিলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা জরিমানা করা যাবে।
এছাড়া বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধের জন্য খসড়ায় সর্বোচ্চ ১৪ বছর জেল এবং এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে বলে সেদিন জানিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন অথবা যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহলে এ কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে।
এই অপরাধে সর্বোচ্চ ১৪ বছর ও সর্বনিম্ন সাত বছর কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে বিদ্যমান আইনে।