জাতীয় সংসদে রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্যের তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে পানি সম্পদ মন্ত্রী

কর্ণফুলী নদী ও কাপ্তাই হ্রদের ভাঙ্গন রোধে তিনটি আলাদা প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিরোধ ও পুণঃ খনন কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। তিনটি আলাদা প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যায় বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৭৯৬ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলো ইতোমধ্যে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে চুড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন। জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনে রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদারের তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে পানি সম্পদ মন্ত্রী এ তথ্য জানান। তিনটি প্রকল্পের মধ্যে ১২৮ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা প্রথম প্রকল্পের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদের ভাঙ্গন রোধে রাঙ্গামাটি সদরে ফিসারী ঘাট হতে পুরাতন বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক বাঁধটির উন্নয়ন ও সংরক্ষণের কাজ করা হবে।
এ ছাড়া ১৬৫ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রাঙ্গামাটি জেলার কর্ণফুলী ও কাচালং নদীর বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গনরোধে প্রতিরক্ষা কাজ শীর্ষক আরো একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন থাকার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলা এবং রাঙ্গামাটি জেলার কর্ণফূলী ও ইছামতি নদী এবং সংযুক্ত খাল সমুহের উভয় তীরবর্তী বিভিন্ন ভাঙ্গন কবলিত এলাকা রক্ষাকল্পে নদীসমূহের ড্রেজিং ও তীর সংরক্ষণে সর্বমোট ৫০২ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকার আরো একটি প্রকল্পসহ মোট তিনটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মন্ত্রী সংসদে জানান, কাপ্তাই হ্রদের ভাঙ্গন রোধ ও ড্রেজিংয়ে বর্তমানে কোনো প্রকল্প চলমান না থাকলেও এ নিয়ে প্রকল্পের গুরুত্ব সরকারের বিশেষ বিবেচনায় রয়েছে। তিনি জানান, ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এবং পর্যটন নগরী খ্যাত পাহাড় ও হ্রদ বেষ্টিত পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি করে অত্রাঞ্চলের নিন্মাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। পানির ¯্রােতে এই অঞ্চলের কিছু অংশ প্রতি বছরই ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। এতে করে পার্বত্য এই জেলার প্রার্ন্তিক পর্যায়ের বিরাট একটি অংশ চরম দারিদ্রতা ও সহায়সম্বলহীন হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় এই ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় উদযোগ নিতে যাচ্ছে বর্তমান সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
এদিকে বিগত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে সর্বমোট ৬৩টি সেতু/কালভার্ট নির্মিত হয়েছে জানিয়ে ত্রাণ-দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া-বীর বিক্রম বলেছেন, গ্রামীণ রাস্তায় কম-বেশী ১৫মিঃ দৈর্ঘ্যের সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় চলতি ২০১৭-১৮ অর্থ বছরেই রাঙ্গামাটি জেলায় সেতু/কালভার্ট নির্মাণে দরপত্র আহবান প্রক্রিয়াধীন আছে এবং শীঘ্রই দরপত্র আহবান করা হবে।
মন্ত্রী জানান, বিগত ২০১৬/১৭ অর্থ বছরে রাঙ্গামাটির সদর উপজেলায়-৫, কাউখালী উপজেলায়-৫, কাপ্তাই উপজেলায়-৬, বরকল উপজেলায়-৭, বাঘাইছড়ি উপজেলায়-৮, নানিয়ারচর উপজেলায়-৫, রাজস্থলী উপজেলায়-৫, লংগদু উপজেলায়-১৩, বিলাইছড়ি উপজেলায়-৩ এবং জুড়াছড়ি উপজেলায় ৬টি সেতু/কালভার্ট প্রকল্প বাস্তবায়িত করা হয়েছে।
১০ম জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে রাঙ্গামাটির স্বতন্ত্র সংসদ উষাতন তালুকদারের পক্ষ থেকে তারকা চিহ্নিত প্রশ্ন ১১৪৭ এবং ১১২৮ এর জবাবে পানি সম্পদমন্ত্রী ও ত্রান-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী উপরোক্ত তথ্যাবলি জানিয়েছেন।
এরআগে একই দিনে সংসদ অধিবেশনে তারকা চিহ্নিত প্রশ্ন ৫৯ এর মাধ্যমে সংসদ উষাতন তালুকদার প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান পার্বত্য চুক্তি পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হবে কিনা; হইলে কবে নাগাদ করা হবে; না হলে তাহার কারণ কি?
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদারের এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, সরকার কর্তৃক গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিয়ষক জাতীয় কমিটির সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পার্বত্য চুক্তি বা শান্তি চুক্তি ৪ খন্ডে বিভক্ত। “ক” খন্ডে ৪টি, “খ” খন্ডে ৩৫টি, “গ” খন্ডে ১৪টি এবং “ঘ”খন্ডে ১৯টি মিলে সর্বমোট ৭২টি ধারা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, শান্তিচুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারা ইতোমধ্যে সম্পূর্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে এবং ৯টি ধারা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। চুক্তির বাস্তবায়ন কার্যক্রম বেগমান করার লক্ষ্যে সম্প্রতি সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহকে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি পূর্নগঠন করা হয়েছে। এছাড়া ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুর্নবাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্ভাস্তু নির্দিষ্ট্যকরণ ও পুর্নবাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্স, খাগড়াছড়ির কার্যক্রম বেগবান করতে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের সাথে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ সম্পৃক্ত উল্লেখ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চুক্তির অবাস্তবায়িত ধারাসমূহ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০১৬ (সংশোধিত) জারি করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন বিধিমালা,২০১৭ (খসড়া) চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এছাড়া শান্তিচুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে এ যাবত রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদে ৩০টি, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদে ৩০টি এবং বান্দরবান জেলা পরিষদে ২৮টি বিষয়/বিভাগ হস্তান্তরিত হয়েছে। অবশিষ্ট বিষয়/বিভাগগুলো হস্তান্তরের লক্ষ্যে কার্যক্রম চলমান আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে এবং অবাস্তবায়িত ধারা সমূহ বাস্তবায়নের জন্য সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

মুক্ত গণমাধ্যম চাই : সকল গণমাধ্যমে এক নীতিমালা, তথাকথিত ওয়েজ বোর্ড বাতিল, নিজস্ব বেতন বোর্ড, বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্র নীতিমালা নিয়ন্ত্রণ মুক্ত, প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মূল্য কমানো ও মফস্বলের পত্রিকাগুলো সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে টিকিয়ে রাখতে হবে

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
2425262728