“চোরাকারবারিরা বিজিবি ও বিএসএফের কমন শত্রু : সীমান্তে রাতে থাকবে ড্রোন

“চোরাকারবারিরা বিজিবি ও বিএসএফের কমন শত্রু। তাই তাদের প্রতিরোধের লড়াইও হবে যৌথভাবে। এখন থেকে এখনে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনী যৌথভাবে টহল দেবে।”

শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশের যশোর সীমান্তের পুটখালী ও দৌলতপুর বিওপি এর আওতাধীন সীমান্ত এবং বিপরীত দিকে ভারতের কাল্যাণী ও গুনারমঠ বিওপির আওতাধীন এলাকার ৮ দশমিক ৩ কিলোমিটার সীমান্ত ‘ক্রাইম ফ্রি জোন’ ঘোষণা করা হয়।

যশোরের শার্শা সীমান্তের বিপরীতে ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁও সীমান্তের কাল্যাণী বিওপিতে এ অনুষ্ঠানে যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন এবং বিএসএফ মহাপরিচালক কে কে শর্মাসহ দুই দেশের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিতি ছিলেন।

বিজিবি প্রধান বলেন, ২০১৭ সালের অক্টোবরে ভারতের নয়া দিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধের কৌশল হিসেবে ‘ক্রাইম ফ্রি জোন’ ঘোষণার প্রস্তাব তোলা হলে বিএসএফ মহাপরিচালক তাতে সমর্থন দেন।

এর ধারাবাহিকতায় উভয় দেশের সম্মতিতে পরীক্ষামূলকভাবে এই ‘ক্রাইম ফ্রি জোন’ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়।

ওই সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে অপরাধ বন্ধে ইতোমধ্যে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা, সার্চ লাইট, থার্মাল ইমেজারসহ বিভিন্ন নজরদারি প্রযুক্তি বসিয়েছে বিজিবি।

বিএসএফ প্রধান কে কে শর্মা অনুষ্ঠানে বলেন, “ ভারত ও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। আমরা চাই সীমান্ত এলাকার মানুষের জীবনমান আরও উন্নত হোক। এই অপরাধমুক্ত এলাকায় নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।”

নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি  সীমান্তে অপরাধ প্রতিরোধে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির ওপর জোর দেন বিএসএফ ও বিজিবি প্রধান।

এই ৮ দশমিক ৩ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকার মধ্যে চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচার, মানব পাচার, মাদক, অস্ত্র ও বিস্ফোরক পাচারের মত কোনো আন্তঃসীমান্ত অপরাধ বা কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যাতে ঘটতে না পারে, সেজন্য পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজিবি ও বিএসএফ।

এছাড়া সীমান্ত অপরাধে জড়িতদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে এনে কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে দুই পক্ষ।

মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বলেছেন, পর্যায়ক্রমে সীমান্তের অন্যান্য এলাকায় ‘ক্রাইম ফ্রি জোন’ ঘোষণার লক্ষ্যে বিজিবি ও বিএসএফ সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

ভারতের কালিয়ানি গ্রামের বাসিন্দা অমিত বলেন, তাদের সরকার ইতোমধ্যে সীমান্তবাসীদের জন্য ১০০ দিনের কাজের একটি প্রকল্প শুরু করেছে। সেখানে প্রতিদিন কাজের জন্য একজন ১৪১ রুপি পান।

সীমান্তবর্তী গ্রামের দরিদ্র মানুষকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারলে সীমান্ত অপরাধ কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশের দৌলতপুরের বাসিন্দা আতাউর রহমানও মনে করেন, অপরাধমুক্ত এলাকা ঘোষণা করায় নজরদারি বাড়বে, তা সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের জন্যই ভালো হবে।

তবে দীর্ঘ সীমান্তের আট কিলোমিটার এলাকা অপরাধমুক্ত ঘোষণা করে অপরাধ কমানো কতটুকু সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে কারও কারও।

তারা বলছেন, চোরাচালানের জন্য পুটখালী এলাকার কুখ্যাতি আছে। যদি ওই এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়, তাহলে চোরাকারবারিরা আরও উওরে গাতীপাড়া সীমান্ত ব্যবহার করতে পারে।

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এক গ্রামবাসী বলেন, গাতীপাড়া সীমান্ত দিয়ে চোরাকারবারিরা  ইছামতি নদী ব্যবহার করে তেরঘর এলাকায় ঢুকতে পারে।

নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকা বাহিনী ও সংস্থাগুলো সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে অপরাধ অনেকাংশে কমে যাবে বলে মনে করেন তারা।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31