॥ আলহাজ্ব এ,কে,এম মকছুদ আহমেদ ॥ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বহু মাত্রিক প্রশানিক জটিলতা দূর করে সম্মিরিত ভাবে উন্নয়ন কর্মসূচী প্রনয়ন করতে হবে। বাস্তবায়নে জবাবদিহিতা থাকতে হবে। নতুবা তা বিফলে যাবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়ণ স্থিতিশীলতা রক্ষা করার জন্য প্রথমে প্রয়োজনে ১৯৮৯ সালের স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনীর মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে জনগনের সার্বিক উন্নয়নে যে উদ্দেশ্যে স্থানীয় সরকার পরিষদ ( জেলা পরিষদ), পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তা বাস্তবায়ন হয়নি। জেলা পরিষদ এবং আঞ্চলিক পরিষদের সহিত মুষ্টিমেয় হাতে গোনা কিছু লোকের ছাড়া অন্যদের উন্নতি হয়নি। যারা জীবনে বিয়ে করতে পারেনি তাদের কয়েকজন বিয়ে করতে পেরেছে। অনেকেই বাড়ী গাড়ী জায়গা সম্পত্তির মালিক হয়ে বহাল তবিয়তে আছে। যাদের জন্য এসব প্রতিষ্ঠান তৈরী করা হয়েছে তাদের কোন উন্নতি হয়নি। লেংটি পরাই রয়ে গেছে।
২৯ বছর পর্যন্ত জেলা পরিষদ গুলোর নির্বাচন দেয়া হয়নি। ভোটার তালিকা জটিলতার কারণে নির্বাচন দেয়া হচ্ছে না। বার বার কমিটি পরিবর্তন করে নতুন কমিটির ভাগ্যোন্নয়ন করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সৃষ্টির পর থেকে নির্বাচন ও হয়নি। কোন কমিটি ও পরিবর্তিত হয়নি। যে সব সদস্য মৃত্যু বরণ করেছে তাদের স্থানে সরকার সমর্থিতদের নতুন নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যেখানে বর্তমান ভোটার তালিকা দিয়ে স্থানীয় সংসদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, নির্বাচন হচ্ছে (সম্প্রতি কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হয়েছে)। সেখানে একই ভোটার তালিকা দিয়ে জেলা পরিষদও আঞ্চলিক পরিষদ এর নির্বাচন হতে পারবে না কেন? বর্তমান ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন দিতে হবে জরুরী ভিত্তিত।
অন্যদিকে ১৯৮৯ স্থানীয় পরিষদ আইন অনুযায়ী জেলার যেসকল সরকারী অফিস জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। সে গুলো সম্পূর্ণভাবে হস্তান্তর করে জেলা পরিষদের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ বাজেট প্রনয়ন করতে হবে। ২০/৩০/৪০ কোটি টাকা থেকে বরাদ্দের মাধমে উন্নয়ন সম্ভব নয়। পূর্ণাঙ্গ বাজেট প্রনয়ন করে বাস্তবায়ণ করতে হবে।
সঠিক উন্নয়ন করতে হলে বহুমাত্রিক প্রশাসনিক জটিলতা থেকে বের হয়ে সরকারের নির্দেশনা এক আইনের মাধমে সম্মিলিত ভাবে করতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন প্রশাসনের ভিন্ন ভিন্ন আইন দ্বারা চালানো সম্ভব নয়।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষার সাথে জড়িত সকলকে একত্রিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সীমান্তে বিজিবি ক্যাম্প (চৌকি) স্থাপন করতে হবে। সড়ক নির্মাণ ত্বরান্বিত করতে হবে। সীমান্তে চোরাচালন বন্ধ করতে হবে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন করতে হবে।
ভেঙ্গে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কে আমুল পরিবর্তন করতে হবে। তিন জেলার একটা রোগীকেও যেন বাহিরে রেফার করতে না হয় সেই দিকে কড়া দৃষ্টি দিতে হবে।
অন্য দুই জেলা বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় দুটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা জরুরী। তিন পার্বত্য জেলার জেলা সদরের হাসপাতাল গুলোকে কমপক্ষে ৫শত শয্যায় উন্নীত করতে হবে।
উপজেলা সদরের হাসপাতাল গুলোকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে পর্যন্ত পরিমান ঔষদ সরবরাহ এবং নির্ধারিত ডাক্তারের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
তিনটা জেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার সময় অনেক রোগীই পথিমধ্যেই মারা যাচ্ছে। এছাড়াও আশা যাওয়া অনেক টাকা এবং সময় নষ্ট হচ্ছে।
প্রত্যেকটা হাসপাতালে এ্যাম্বুলেন্স ডাক্তার এবং অপারেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমানে হৃদরোগে আক্রান্ত এবং ডায়াবেটিকস্্, চক্ষুরোগী এর রোগী অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেছে। জরুরী ভিত্তিতে হৃদরোগ হাসপাতাল, চক্ষু হাসপাতাল এবং ডায়াবেটিকস্্ সমিতি হাসপাতালে উন্নীত করে জনগনের ঘরের দুয়ারে সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রথামিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হতে। ঝড়ে পড়া বন্ধ করতে হবে। স্থানীয় অথবা শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষার জন্য দ্বিগুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম আরও ত্বরান্বিত করে সঠিক শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করা অপরিহার্য্য। বান্দাবানে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করে খাগড়াছড়িতেও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।
সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শূণ্যপদগুলো সহজ উপায়ে নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করতে নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। শিক্ষা কোটা বন্ধ করতে হবে নতুনবা সমভাবে বন্টনের মাধ্যমে ভর্তি করতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আসল উদ্দেশ্য সফল হয়নি
১৯৭৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগনের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড গঠণ করেন এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে। যে উদ্দেশ্যে উন্নয়ন বোর্ড স্থাপন করা হয়েছিল সঠিক অর্থে উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হয়নি।
প্রথম দিকে যৌথ খামার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল সেটাই একমাত্র সর্বপেক্ষা বেশী সফলতায় পৌছেছিলো। অন্য প্রকল্প গুলো সফলতার মুখ দেখেনি। যে সব প্রকল্প নেয়া হয়েছিল সুষ্ঠ’ পরিকল্পনার মাধ্যমে না নেয়াতেই ব্যর্থতার পরিনত হয়েছে। যেকোন প্রকল্প গ্রহণ করার পূর্বে যাচাই বাছাই করে প্রকল্প গ্রহণ করা উত্তম। বোর্ডের যে কনসালটেটিভ কমিটি রয়েছে তার কার্যক্রম কি জনগনের নিকট বোধগম্য নহে। স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। ১৯৭৬ সনে প্রতিষ্ঠিত পর্যন্ত বোর্ডে এ পর্যন্ত যে টাকা ব্যয় করা হয়েছে তা বিরাট পাহাড় সমান। এখানকার গম চাউল কিনা হলে সে গম চাল হ্রদের পানিতে ফেলে দিলে সেখানে ও পাহাড় সৃষ্টি হতো এক কথায় হাজার কোটি টাকা হৃদের পানিতে ফেলে দেয়ার শামিল।
বোর্ডে বর্তমানে আইসিডিবি’র পাড়া কেন্দ্রেই সর্বোত্তম প্রকল।প। আর তেমন চোখে পড়ার মতো নয়। বোর্ডের জবাবদীহিতা নেই। বোর্ডের কার্যক্রম সম্পর্কে জনগন কিছুই জানেনা। বোর্ডের সকল কার্যক্রম সম্পর্কে জনগনকে অবহিত করতে হবে।
শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা বন্টনে অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন অনিয়মের জন্য কর্মকর্তাদের স্বচ্ছাচারিতাই দায়ী। এগুলো বন্ধ না হলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। বোর্ডের কার্যক্রম সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারনা দরকার। ২/১ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে ক্ষতিই বেশী হবে। প্রকৃত অর্থে যে উদ্দেশ্যে উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তা সত্যিকার অর্থে প্রতিফলন হচ্ছে না। মাউন্টেন বাইক প্রতিযোগিতা দেখিয়ে বিশ্বজয় করা কঠিন।
প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুরের তৎপরতায় উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বান্দরবান জেলার অভ’তপূর্ণ উন্নয়ন হয়েছে। মাইলফলক হিসাবে দেখা যায়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয় কি উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হয়েছে ?
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয় একটি পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রনালয়। এটার কাজ কি? পার্বত্য টট্টগ্রামের জনগন জানে না। তবে ফেইসবুকে দেখা যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমনের খবর এবং ছবি। এর সাথে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের সফরসঙ্গী হতে দেখা যায়। সম্প্রতি ২রা এপ্রিল ২০০৮ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যগণ ১০ দিনের সফরে মালয়েশিয়া গিয়েছে কেউ কেউ ছেলে মেয়েদের সাথে নিয়েছে দুরভাগ্য সাংবাদিকদের কারও ভাগ্যে একবারও জোটেনি। এসব সফরে কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হচ্ছে এটা বন্ধ করা দরকার।
বিদেশ শ্রমনে যে টাকা নষ্ট হয় সে টাকা দিয়ে জনগনের উপকারে আসে মতো কোন প্রকল্প গ্রহণ করে তা সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করলে কাজে লাগতো। মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ভ্রমনে না পাঠিয়ে তিন পার্বত্য জেলার পল্লী অঞ্চলে প্রকল।প পরিদর্শনে পাঠালে অনেক উপকারে আসতো।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস ঐহিস্য কৃষ্টি, সংস্কৃতি তুলে বই প্রকাশ করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে দেশবাসী এবং বিদেশীরা অবহিত হতে পারতেন। একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিব (যিনি রাঙ্গামাটিতে এডিসি হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তিনি আমাকে কিছুদিন পূর্বে মন্ত্রনালয় থেকে প্রকাশিত একটি বই বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্ঠার লেখার বিষয়ে বলেছিলেন। ঐ লেখাতে ভুয়া তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। সেই বইটি আমি এখনও দেখিনি কাজেই যাচাই করতে পারিনি। বইটি উন্নয়ন বোর্ডে খুঁজেছি, তাদের কাছে নেই। পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেছি উনি বলেছিলেন মন্ত্রনালয়ে কোন লোক পাঠানে পাঠিয়ে দিবেন। মন্ত্রনালয়ে পাঠানোর মতো কাউকে পাইকিনা খুঁজেছি।
মন্ত্রনালয়ের প্রেরিত চেয়ারম্যান অথবা প্রতিমন্ত্রীর নিকট দাখিলকৃত আবেদনের কার্যক্রম অত্যন্ত ধীরগতি। কয়েকজন আবেদনকারী দুঃখ করে জানিয়েছেন গত এক বছরেও আবেদনের কোন খবর পাওয়া যায়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত অনেক বই জমা পড়ে আছে। যারা টাকার অভাবে বই প্রকাশ করতে পারছে না। পার্বত্য মন্ত্রনালয় থেকে এই সব বই প্রকাশনার ব্যবস্থা নেয়া হয় তাহলে অনেক কাজে লাগতো এবং অনেক সত্য ইতিহাস বেরিয়ে আসতো, এছাড়াও প্রকাশনা ব্যবসায়িক ভিত্তিতে করা যায় সেখান থেকে অনেক টাকা আয় হতো।
মন্ত্রনালয়ে আবেদন নিবেদনের বিষয়ে তিনটি জেলা পরিষদে মাধ্যমে গ্রহণ করার ব্যবস্থা নিয়ে মন্ত্রনালয়ে প্রেরণের ব্যবস্থা নিলে জনগনের অনেক সুবিধা হতো।