॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ হঠাৎ অশান্ত হয়ে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। প্রতিনিয়ত পাহাড়ে ঝড়ছে রক্ত। শক্তিমান চাকমার রক্তের দাগ শুকাতে না শুকাতে আবারো ১২ জনের রতে রঞ্চিত হয়েছে পাহাড়ের মাটি। পাহাড়ীদের জনপ্রিয় নেতা শক্তিমান চাকমার দাহক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেরার পথে গাড়ীতে হামলার ঘটনায় গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ এর নেতা তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা নিহত সহ ৫ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো ৭ জন। দুই দিনে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরে নিহত হয়েছে ৬ জন। এ ঘটনায় পার্বত্য অঞ্চলের আবারো ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বাড়ছে।
পুলিশ জানায়, সন্ত্রাসীদের গুলিতে গত বৃহস্পতিবার নিহত রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমার দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানে আসার পথে জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মীদের বহনকারী গাড়ি বহর খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি সড়কের নানিয়ারচর উপজেলার বেতছড়ি ফরেষ্ট টিলার কাঠাল বাগান এলাকায় এসে পৌছালে সন্ত্রাসীরা গাড়ীর উপর ব্রাশফায়ারে চালকসহ ৫ জন নিহত ও ৭ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে।
এ ঘটনায় নিহতরা হলেন ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক দলের আহবায়ক তপন জ্যোতি চাকমা বর্মা, জন সংহতি সমিতি(এমএন লারমা) কর্মী সেতু লাল চাকমা (৩৮), প্রনব চাকমা, সুজন চাকমা ও মাইক্রো চালক মো: সজিব (৩৬)।
আহতদের মধ্যে রয়েছে দিগন্ত চাকমা (২৮), অর্চিন চাকমা (২৯), অর্জুন চাকমা (২৯) জেলযী কুমার চাকমা, মিহির চাকমা ওরফে কদম চান (৩০), জীবন্ত চাকমা (৩০), কান্তি রঞ্জন চাকমা (৩৫), প্রীতি কুমার (৩৮)।
আনুমানিক বেলা পোনে ২টার দিকে হতাহতদের খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। এরমধ্যে ২ জন মারা যায়। নিহত সেতু লাল চাকমা (৪০) ও মাইক্রো চালক মো: সজিব (৩৬) এর লাশ খাগড়াছড়ি হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৮জনকে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরমধ্যে আশংকাজনক অবস্থায় ৪জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়।
ঘটনার খবর পেয়ে রাঙ্গামাটি থেকে সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তারা ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছেন। সেনা সদস্য পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্তওনে নেয়। এসময় ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা তিন জনের লাশ উদ্ধার করে একটি চাঁেদর গাড়ীতে (খোলা জীপ) তোলা হয়। শুক্রবার বিকাল ৪টায় বেতছড়ি থেকে খাগড়াছড়ি দুরত্ব কম থাকায় লাশ গুলো খাগড়াছড়ি হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
জনসংহতি সমিতি এমএন লারমা গ্রুপের রাজনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক বিভূরঞ্জন চাকমা গুলিবর্ষণের জন্য প্রতিপক্ষ ইউপিডিএফকে দায়ি করেছেন। তিনি বলেন, শক্তিমান চাকমার দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে বেতছড়ি ফরেস্ট টিলার কাঠালবাগান এলাকায় ইউপিডিএফর সন্ত্রাসীরা গাড়ি বহরে গুলিবর্ষণ করে। এতে চালক মো: সজিব সহ ৫ জন নিহত ও ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহতদের মধ্যে আশংকা জনক অবস্থায় ৪ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
রাঙ্গামাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম জানান, খাগড়াছড়ি থেকে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে নানিয়ারচর যাচ্ছিলেন তারা। গাড়িটি বেতছড়ির কাঠাল বাগানে পৌছালে মাইক্রোবাসে একদল দুর্বৃত্ত হটাৎ ব্রাশফায়ার করে। এতে গাড়িটির চালক গুলিবিদ্ধ হলে মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে উল্টে সড়ক থেকে ছিটকে পড়ে। পরে এলাকাবাসী ও আইন শৃংখলাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে ৩জনের লাশ এবং গুলিবিদ্ধ ১১ জনকে উদ্বার করে।
নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন তালুকদার জানিয়েছে, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এলাকায় সেনা বাহিনী ও পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে।