৬ মাসে ২০ জন নিহত ও ৩০ জনের বেশী অপহৃত : পাহাড় আবারো অশান্ত

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে প্রাণ দিতে হলো রাঙ্গামাটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক নেতা এ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমাকে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের দল বল ও নতুন দল গঠন সহ নানা ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন শক্তিমান চাকমা। সম্প্রতি নানিয়ারচর ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় কয়েকটি হত্যাকান্ডের ঘটনা নিয়ে আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ ও জেএসএস সংস্কার গ্রুপের সাথে দ্বন্ধ চরমে উঠে। তারই প্রতিহিংসায় শক্তিমান চাকমাকে বলি হতে হয়েছে বলে মনে করেন রাঙ্গামাটির আঞ্চলিক রাজনৈতিক নেতারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্বত্য অঞ্চলের কয়েকজন আঞ্চলিক দলের নেতা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বর্তমানে ৪ টি আঞ্চলিক দল গঠন হয়। এর মধ্যে প্রথম দল হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, দ্বিতীয় দল হিসাবে ১৯৯৭ সালে ইউনাইটেড পিপলস্্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ), তৃতীয় দল হিসাবে ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমালে জেএসএস সংস্কার (এমএন লারমা) গ্রুপ, এবং সম্প্রতি ২০১৭ সালের নভেম্বরে আত্মপ্রকাশ ঘটে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক দল হিসাবে। দীর্ঘদিন ইউপিডিএফ এবং জেএসএস সংস্কার গ্রুপের মাঝে সখ্যতা থাকলেও বছর খানেক ধরে তাদের মাঝে দুরত্ব বেড়ে যায়। এরমধ্যে জেএসএস মুল দল এবং ইউপিডিএফ এই দ্ইু গ্রুপের মাঝে আবারো সখ্যতা শুরু হয়। এই ভাবে এক দল আরেক দলের উপর শক্তি সঞ্চয় শুরু করে। গত ২ মাস ধরে নানিয়ারচর উপজেলা একটি অস্থির উপজেলা হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। তারই প্রতিহিংসার কারণে গতকাল বলি হতে হলো জেএসএস সংস্কার পন্থী নেতা এ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমাকে।
এদিকে পার্বত্য অঞ্চলে আঞ্চলিক রাজনৈতিক সহিংসতায় গুম, খুন, অপহরণ ও বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ৬ মাসে পার্বত্য রাঙ্গামাটিতে প্রায় ২০ জনের অধিক আঞ্চলিক দলের শীর্ষ নেতা ও কর্মী নিহত হয়েছে। আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গুলোর কারণে বাড়ী ছাড়তে হয়েছে কয়েক শত পরিবারকে। সর্বশেষ গতকাল প্রকাশ্য দিবালোকে নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমাকে হত্যা করা হয়েছে। অপহরণ করা হয়েছে প্রায় ৩০ জনেরও বেশী ব্যক্তিকে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ছেড়ে দেয়া হলেও অনেক জনের হদিশ এখনো মিলেনি। এছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন আস্তানা থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
এদিকে ১১ এপ্রিল নানিয়ারচর উপজেলা সাবেক্ষংয়ে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে প্রতিপক্ষের হামলায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের একজন হলেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট নেতা জনি চাকমা এবং অপর জন জেএসএস এমএন লারমা গ্রুপের সদস্য সাধন চাকমা। নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে।
গত ১৭ এপ্রিল রবিবার সন্ধ্যায় রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের মারিশ্যা-দিঘিনালা সড়কের জোড়া ব্রিজ এলাকায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) কর্মী তপন চাকমাকে (৪০) গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সীমান্তবর্তী বাঘাইছড়ি উপজেলার মারিশ্যা-দিঘিনালা সড়কের ৮-৯ কিলো নামক স্থানে ইউপিএিফের আরেক কর্মী বিজয় চাকমাকে (৩২) হত্যা করে প্রতিপক্ষ।
এদিকে পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২০ বছর পুর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার সহ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় আওয়ামীলীগ নিধন যোগ্য। রাঙ্গামাটির জুরাছড়ি ও নানিয়ারচর উপজেলায় ১১ ঘন্টার ব্যবধানে জুরাছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অরবিন্দু চাকমা ও নানিয়ারচর উপজেলায় ইউপিডিএফ নেতা সাবেক ইউপি সদস্য অনাদী রঞ্জন চাকমাকে গুলি করে হত্যা করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। একই দিনে বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রাসেল মারমাকে হত্যার চেষ্টা করে। পরদিন রাতে রাঙ্গামাটি শহরেই জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ঝর্ণা খীসাকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে দুবৃত্তরা। এসব ঘটনায় তিনটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। ওই মামলায় ৮ ডিসেম্বর গ্রেফতার হন বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেএসএস’র উপজেলা সভাপতি শুভমঙ্গল চাকমা ও তার ছেলেসহ ১৯ নেতা-কর্মী। শুভমঙ্গল আওয়ামীলীগ নেতা রাসেল মারমার হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভূক্ত আসামী।
লংগদুর গোলাছড়িতে ২৯ জুন সন্ত্রাসী আস্তানায় সেনাবাহিনীর অভিযানে এ-কে-৪৭সহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার। ৩জুলাই বাঘাইছড়িতে অভিযানে অস্ত্রসহ আটক করা দুই ইউপিডিএফ কর্মীকে। সর্বশেষ ২১ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটির বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়ন থেকে ৫ ইউপি মেম্বারসহ ২০ জনকে অপহরণ করা হয়। একদিন পর তারা স্ব-স্ব গ্রামে ফিরে আসে।
৫ ডিসেম্বরঃ রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরে প্রতিপক্ষের গুলিতে অনাদি রঞ্জন চাকমা নামে সাবেক এক ইউপি মেম্বার নিহত হন। নানিয়ারচর উপজেলার তৈচাকমা দজর পাড়ার ১৮ মাইল নামক স্থানে সাবেক ইউপি মেম্বার আদি রঞ্জন চাকমা তার বাসা থেকে বের হয়ে হাটছিলেন।
৫ ডিসেম্বরঃ রাঙ্গামাটির জুরাছড়িতে দুর্বৃত্তের গুলিতে উপজেলা যুবলীগ নেতা অরবিন্দু চাকমা নিহত হন।
৫ ডিসেম্বরঃ রাঙ্গমাটিতে শিমুলতলী এলাকায় চলন্ত বাসের ছাদ থেকে পড়ে এক যুবক নিহত হয়।
৫ ডিসেম্বরঃ বিলাইছড়ি উপজেলা সদরের তিলিক্যাছড়ি এলাকায় উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি রাসেল মারমা আড্ডা দেয়ার সময় একদল দুর্বৃত্ত তার উপর লাঠি-ক্রিজ নিয়ে হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে।
৬ ডিসেম্বরঃ রাঙ্গামাটি শহরের বিজয় নগরের ভালেদি আদামে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী ঝর্ণা খীসা নামে এক মহিলাকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে।
১৫ ডিসেম্বরঃ রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের ধামাইছড়া নামক পাহাড়ি গ্রামে প্রতিপক্ষের গুলিতে ইউপিডিএফ নেতা অনল বিকাশ চাকমা প্লটো (৪২) ওরফে লক্ষী নিহত হয়।
২১ ডিসেম্বরঃ রাঙ্গামাটির বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়ন থেকে ৫ ইউপি মেম্বারসহ ২০ জনকে অপহরণ করা হয়। একদিন পর তারা স্ব-স্ব গ্রামে ফিরে আসে।

মুক্ত গণমাধ্যম চাই : সকল গণমাধ্যমে এক নীতিমালা, তথাকথিত ওয়েজ বোর্ড বাতিল, নিজস্ব বেতন বোর্ড, বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্র নীতিমালা নিয়ন্ত্রণ মুক্ত, প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মূল্য কমানো ও মফস্বলের পত্রিকাগুলো সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে টিকিয়ে রাখতে হবে

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031