চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দিন বলেছেন, সারাদেশে মাদক ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে জাতিকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এই ভয়াবহ অপতৎপরতা থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হরে মাদকের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে তাতে জয়ী হতে হবেই। মাদক বিরোধী অভিযানের পাশাপাশি মাদকের চাহিদা ও সরবরাহের পথ বন্ধ করে দিতে হবে। একই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে আমাদের কোন সন্তান যেন নতুন করে মাদকে না জড়ায়। তিনি গতকাল বিকেলে নগরীর জামালখানস্থ এক্সক্লুসিভ কনভেশন হলে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম জেলা আয়োজিত পবিত্র রমজানুল মোবারক উপলক্ষে সংস্কৃতিকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভা, ইফতার ও দোয়া মাহফিলে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন একথা বলেন।তিনি উপস্থিত সংস্কৃতিকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন আমি মনে করি খেলাধুলা ও সংস্কৃতিচর্চার পরিবেশ সংকুচিত হওয়ার কারণেই মাদকের আগ্রাসন ছড়িয়ে পড়েছে। তাই তরুণ প্রজন্মকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে সংস্কৃতি ও খেলাধুলার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তিনি আরো বলেন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে আমাদেরকে সমবেতভাবে প্রয়াস চালাতে হবে। সংস্কৃতিক চর্চার ক্ষেত্রে চট্টগ্রামে বন্ধ্যাত্ব বিরাজমানÑএই বাস্তবতা স্বীকার করে আমাদেরকে এই প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হবে। তিনি আরো বলেন, সংস্কৃতিকর্মীরা সমাজ প্রগতির অগ্রতির বাহিনী। ৫২’ ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাংষ্কৃতিকর্মীরা ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। সারা বাংলাদেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের চিত্র তুলে ধরতে সংস্কৃতিকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সেবার মনমানসিকতা নিয়ে মানব কল্যাণে কাজ করতে হবে। বিমেষ অতিথির ভাষণে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি আলহাজ্ব নঈম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ৫০/৬০ এর দশকে এদেশে গণতান্ত্রিক ও অসম্প্রদায়িক আবহ তৈরিতে সংস্কৃতিকর্মীরা সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। তাঁরা বাঙালির ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। এই ধারা অব্যাহত রাখতে এবং প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানসিকতাকে সুদৃঢ় করে সমাজ প্রগতিতে বেগবান করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধকালীর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠ সংগীত শিল্পী ওস্তাদ মিহির লালা বলেন, এই প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আজকে তরুণ প্রজন্ম যেভাবে নিজেদের বিচার বিবেচ্য নৈতিকতাকে কাজে না লাগিয়ে যে ধরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে তাতে শংকা হচ্ছে। আজ সময় এসেছে মুক্তিযুদ্ধের সকল শক্তি এক জোট হয়ে এসব জঙ্গিবাদ ও বিষাক্ত মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। তবেই আমাদের প্রজন্ম রক্ষা হবে। যে প্রজন্ম আমাদের সুন্দর ভবিষ্যত রচনা করবে। আমরা যদি এটা করতে ব্যর্থ হই তাহলে বুঝতে হবে আমরা আমাদের অস্তিত্বই হারাতে যাচ্ছি। বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সহ-সভাপতি, বাচিক শিল্পী রনজিত রক্ষিত বলেন, দেশ যখন এগিয়ে যায় মানুষ যখন আনন্দ উচ্ছ্বাস করে তখন আমাদের উপর মৌলবাদীদের আঘাত নেমে আসে। তিনি আরো বলেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা সংস্কৃতি চর্চার সুকৃতি থেকে উৎসারিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে সংস্কৃতিকর্মীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। জঙ্গিবাদ বিরোধী মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠাই আজ সংস্কৃতিকর্মীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম জেলার সহ সভাপতি সুমন দেবনাথ‘র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংস্কৃতিকর্মীদের সাথে মতবিনিময় ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন একুশ মেলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ও চট্টল ইয়ুথ কয়ার সভাপতি অরুণ চন্দ্র বণিক, নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য প্রকৌশলী বিজয় কুমার চৌধুরী কিষাণ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নাট্যজন সাইফুল আলম বাবু, কবি আশীষ সেন, সংগীত শিল্পী দীপেন চৌধুরী, তারুণ্যের উচ্ছাস এর সাধারণ সম্পাদক বাচিক শিল্পী মুজাহিদুল ইসলাম, মঞ্চশিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শিল্পী কামরুল আজম চৌধুরী টিপু, ত্রিতরঙ্গ আবৃত্তি সংগঠনের কর্ণধার বাচিক শিল্পী দেবাশীষ রুদ্র, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সম্পাদক ইয়াছির আরাফাত। আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাধীণ বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গীতশিল্পী মুক্তিযোদ্ধা জয়ন্তী লালা, সাংস্কৃতিক সংগঠক শওকত আলী সেলিম,, নজরুল ইসলাম মোস্তাফিজ, ডা: আশীষ চৌধুরী, কবি সজল দাশ, দিলীপ সেন গুপ্ত, শিল্পী শীলা চৌধুরী, সঙ্গীতশিল্পী কাজল দত্ত, মোজাহেরুল ইসলাম, শিল্পী কাজল দত্ত, শিল্পী রূপম মুৎসুদ্দী টিটু, শিল্পী অচিন্ত্য কুমার দাশ, শিল্পী পলাশ কুমার দেব, তানভীরুল ইসলাম নাহিদ, নারায়ণ দাশ, সংস্কৃতিকর্মী এড. টিপুশীল জেয়দেব, মুজিবুর রহমান, রুমকী সেন গুপ্ত, সোনিয়া সালাম, শিলা আক্তার, প্রিয়ন্তী বড়–য়া, দেবু দাশ, মো: রোকন উদ্দিন প্রমুখ। ইফতার পূর্বে দেশ ও জাতির কল্যাণে এবং ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৫২‘র ভাষা আন্দোলন ও ৭৫‘র ১৫ আগস্ট কালোরাত্রিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ স্বপরিবারে নিহত সকল শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবত পালন করা হয়। ইফতার পূর্বে প্রধান অতিথি সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দিন সংস্কৃতিকর্মীদের সাথে মতবিনিময় এবং সকল সংস্কৃতিকর্মীদের সাথে কুশল বিনিময় করেন।