ঈদ মানেই উৎসব। ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদ প্রতিবছর নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট রীতিতে এক অনন্য আনন্দ-বৈভব বিলাতে ফিরে আসে। এক মাস কঠোর সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নানা নিয়মকানুন পালনের পর উদযাপিত হয় ঈদুল ফিতর। আর এরই ধারাবাহিকতায় রাঙ্গামাটিতে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্বির্য্যের মধ্যে দিয়ে ও উৎসব মুখর পরিবেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। রৈরি আবাহাওয়ার কারণে রাঙ্গামাটি সকল ঈদ জামাত সমূহ ঈদগা মাঠের পরিবর্তে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়।
রাঙ্গামাটি প্রধান ঈদ মাজাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৮টায় তবলছড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। এছাড়া ঈদের প্রধান প্রধান ঈদ জামাত হয় রিজার্ভ বাজার জামে মসজিদ, কালেক্টর জামে মসজিদ বনরূপা জামে মসজিদে। এছাড়া অন্যান্য এলাকায় ঈদ জামাত অনুষ্টিত এলাকার বিভিন্ন মসজিদে।
প্রত্যেকটি ঈদ জামাত শেষে বিশ্ব মুসলিম উম্মার শান্তি কামনা ও রাঙ্গামাটিতে সম্প্রতি পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। শোকস্তব্ধ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ এক কাতারে বশে ঈদের নামাজ আদায় করে।
ঈদ মাজাত শেষে মুসল্লিরা রাঙ্গামাটি কেন্দ্রীয় কবরস্থানসহ অন্যান্য কবর স্থানে তাদের প্রয়াত আত্মীয় স্বজনের আত্মার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং কবর জিয়ারত করেন।
উল্লেখ্য, মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার শেষে শাওয়ালের নতুন চাঁদ নিয়ে আসে পরম আনন্দ ও খুশির ঈদ। রোজাদার যে পরিচ্ছন্নতার ও পবিত্রতার সৌকর্য দ্বারা অভিষিক্ত হন, যে আত্মশুদ্ধি, সংযম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, উদারতা, বদান্যতা, মহানুভবতা ও মানবতার গুণাবলি দ্বারা উদ্ভাসিত হন, এর গতিধারার প্রবাহ অক্ষুন্ন রাখার শপথ গ্রহণের দিন হিসেবে ঈদুল ফিতর আসে। ধনী-গরীব সবাই মিলে এক কাতারে শামিল হয়ে ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। ঈদগাহে কোলাকুলি সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধনে সবাইকে নতুন করে আবদ্ধ করে। ঈদ এমন এক নির্মল আনন্দের আয়োজন, যেখানে মানুষ আত্মশুদ্ধির আনন্দে পরস্পরের মেলবন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হন এবং আনন্দ সমভাগাভাগি করেন।
প্রকৃতপক্ষে ঈদ ধনী-দরিদ্র, সুখী-অসুখী, আবালবৃদ্ধবনিতা সব মানুষের জন্য নিয়ে আসে নির্মল আনন্দের আয়োজন। ঈদ ধর্মীয় বিধিবিধানের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস নেয় এবং পরস্পরের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের শিক্ষা দেয়। পৃথিবী সর্বপ্রকার হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানিমুক্ত হোক! ধর্মীয় চরমপন্থা ও সন্ত্রাসের বিভীষিকা দূর হোক। আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বন্ধন দৃঢ়তর হোক! আগামী দিনগুলো সুন্দর ও সৌন্দর্যমন্ডিত হোক। হাসি-খুশি ও ঈদের আনন্দে ভরে উঠুক প্রতিটি প্রাণ। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ পরিব্যাপ্তি লাভ করুক- এটাই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা।
এদিকে, আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধি রাহুল বড়–য়া জানান, যথাযোগ্য মর্যাদাও বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বান্দরবানে পবিত্র ঈদুল ফিতরের ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার সকাল ৮টায় ঈদের প্রথম ও প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় বান্দরবান কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে। এসময় শহরের হাজার হাজার মুসল্লি একইসাথে মিলিত হয়ে ঈদের জামাতে নামাজ আদায় করেন। এসময় জামাত পরিচালনা করেন বান্দরবান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আলহাজ্ব আলাউদ্দিন ইমামী।
ঈদের দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় বান্দরবান কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে সকাল ৯ টায়, এছাড়া ও বিভিন্ন সময়ে বান্দরবানের বিভিন্ন মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্টিত হয়।
নামাজ শেষে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনাও আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের আশায় মোনাজাতে অংশ নেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। ঈদের নামাজ ও মোনাজাতে অংশ নেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আসলাম হোসেন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকির হোসেন মজুমদার, আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য মোঃ শফিকুর রহমান, পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম বেবী, পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নুরুল আবছার, পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য মোজাম্মেল হক বাহাদুর, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল কুদ্দুছসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তা এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের জনসাধারণ।
এদিকে জেলায় কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও বর্ষন শেষে পবিত্র রমজান মাস শেষে ঈদের আনন্দে মিলিত হতে পেরে খুশি ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা।