॥ খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা ॥ সন্ত্রাসী হামলায় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা আহত হয়েছেন। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে প্রেরণ করা হয়েছে।তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
শুক্রবার দুপুরে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ সন্দেহভাজন ৪ জনকে আটক করেছে। ঘটনার পর শহরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার নয়নময় ত্রিপুরা জানান, মাথায় আঘাত লাগায় চঞ্চুমনি চাকমাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। তবে তিনি আশংকামুক্ত।
খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম সালাহউদ্দিন জানান, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমার উপর হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন চার জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। এ ঘটনা পরপরই শহরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
¯’ানীয় সূত্রগুলো জানায়, রাঙামাটির নানিয়াচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা, ইউপিডিএফ ডেমোক্রাটিক সভাপতি তপন জ্যোতি বর্মা হত্যাসহ একের পর এক হত্যা, হামলা, চাঁদাবাজি ও বাড়ী-ঘর থেকে নিরীহ লোকজনকে উ”েছদের পরও উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যব¯’া না নেওয়ায় এবং প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোয় ক্ষুব্ধ লোকজন এ হামলা করতে পারে।
প্রত্যক্ষদর্শী চেয়ারম্যানের গাড়ি ড্রাইভার চিকু বড়ুয়া বলেন, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমাসহ আমরা দুইজন মোটরসাইকেল যোগে জেলা সদরের সাতভাইয়া পাড়া¯’ বীণা উপকেন্দ্র থেকে ফিরছিলাম। ফেরার পথে শহরের কবর¯’ান সংলগ্ন খাগড়াছড়ি ইসলামীয়া মাদ্রাসার সামনে ৩ জন পাহাড়ি যুবক মোটরসাইকেল যোগে এসে আমাদের গতিরোধ করে। প্রথমে তাকে লাথি মেরে ফেলে দেয়, আমি তখন মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পরে সড়কের পাসে ড্রেইনে পরে যায়।
এসময় ঐ তিন পাহাড়ি যুবক ইট দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত করে তাকে অন্য একটি মোটরসাইকেলে তোলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চামকা রক্তাক্ত অব¯’ায় তাদের সাথে ধস্তাধস্তি করে কোর্ট বিল্ডিং প্রেস ক্লাবের দিকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে।
সড়কের ওপর রক্তাক্ত ব্যক্তিটি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চিনতে পেরে ¯’ানীয় জনতা তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা তারা তাকে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ৪ জনকে ধরে পুলিশে হাতে তুলেদে জনতা জানান চেয়ারম্যানের গাড়ি ড্রাইভার চিকু বড়ুয়া।
পরিষদ চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমার ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে এমন খবর পেয়ে সাথে সাথে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ছুটে যান খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাহাদাত হোসেন টিটো বলেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা যেহেতু ইউপিডিএফ সমর্থিত। ধারণা করা হ”েছ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজন তার ওপর হামলা করতে পারে। ঘটনা¯’ল থেকে আটক করা ৪ যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হ”েছ।আগার্মীকাল কোর্টে তোলা হবে।
এদিকে, ইউপিডিএফ’র মুখপাত্র নিরন চাকমা’র স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তার ওপর সংস্কারবাদী জেএসএস এর সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালিয়েছে অভিযোগ করে, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমার ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা ও দোষীদের শাস্তির দাবি করা হয়। তবে, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ইউপিডিএফ জেএসএস’র বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালা”েছ। সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা নিয়ে ব্যক্তিগতকারণে,(ইউপিডিএফ’র) দলীয় কোন্দল ও জনবিরোধী কার্যকলাপের জন্য অত্যন্ত বিতর্কিত। তাই তার ওপর জনগণের যেকোন জনক্ষোভের সঞ্চার হতে পারে। এই ধরণের ঘটনায় জেএসএস আগেও জড়িত ছিল, না এখনও জড়িত নয় বলে দাবি করেন।
উল্লেখ্য, গত ৩ মে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা নিহতের পর থেকে নিরাপত্তা জনিত কারণে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা।
নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেএসএস সংস্কারের সহসভাপতি শক্তিমান চাকমাকে তার কার্যালয়ের সামনে হত্যা করে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা। এরপর দিন ৪ মে শক্তিমানের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পথে সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে ইউপিডিএফ ডেমোক্রাটিক গ্রুপের সভাপতি তপন জ্যোতি চাকমাসহ ৫ জনকে হত্যা করে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা। এ দুই হত্যাকান্ডের জেএসএস সংস্কার ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের পক্ষ থেকে ইউপিডিএফ প্রসীত প্রুপকে দায়ী করা হয়েছিল। ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপ সমর্থিত খগড়াছড়ি সদর খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমণি চাকমা উল্লিখিত দুই হত্যাকান্ডেরই এজহারভূক্ত আসামী।