শিরোনাম
প্রচ্ছদ / গণমাধ্যম / চিকিৎসা ব্যবস্থার কাছে কত অসহায় আমরা!

চিকিৎসা ব্যবস্থার কাছে কত অসহায় আমরা!

॥ আলহাজ্ব এ,কে,এম মকছুদ আহমেদ ॥ আমরা চিকিৎসা ব্যবস্থার কাছে কত অসহায়! তা ভূক্তভোগী ছাড়া অন্যেরা কম অনুধাবন করতে পারে। সম্প্রতি আমার জীবনে ঘটে যাওয়া দুঘর্টনার আলোকে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা উপস্থাপন না করলে নিজেকে অপরাধী মনে করবো। তাই লিখতে বাধ্য হলাম। কাউকে দুৎখ দিতে বা কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ নয়।
গত ২৯/০৮/২০১৮ তারিখ রাত৯ টার দিকে অফিসের সামনে পাইচারী করে বাসায় প্রবেশ করে বাসার বারিন্দায় হাটার সময় পায়ে লুঙ্গি বেধে মেঝেতে পড়ে গিয়ে মাথায় নাকে চোখে মারাত্মক আঘাত প্রাপ্ত হই। তাৎক্ষনিক ভাবে আমার স্ত্রী ও মেয়ে ঘরে যা আছে তা দিয়ে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে চেষ্টা চালায়। ইতিমধ্যে ফার্মেসী থেকে ফার্মাসিষ্ট উজ্জ্বল ও আমার শালা দীপক বাহাদুরের ছেলে ডাঃ জনি বাহাদুর এসে অনেক চেষ্টার পরও রক্ত ক্ষরণ বন্ধ না হওয়াতে নন্দন, বাবলা, শামসু, জনি সহ রাঙ্গামাটি সদর হাসপতালে গিয়ে ইর্মাজেন্সীতে ভর্তি হই।
হাসপাতালে ঔষধপত্র কিছুই নাই বাহির থেকে এনে দেয়ার পরও ডাক্তার নার্সরা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে ও কোন ফল হয় নাই। সিটে বর্তি করতে বলেছিল উপরে উঠা সম্ভব না হওয়াতে ইর্মাজেন্সী টেবিলে রাখতে হয়েছে। রাত ২ টার দিকে একটা মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত রোগী আসাতে পার্শ্বে একটি টেবিলে শুয়েছিলাম।
ঐ রোগিটা চলে যাওয়ার পর আবার মাঝখানের টেবিলে আসলাম। রাত ৩ টার দিকে টয়লেটে যেতে চাইলাম। ইমার্জেন্সীতে টয়লেট নেই। বাধ্য হয়ে রুমেই বাইরে গিয়ে ২ বার প্র¯্রাব করতে হয়েছে।
শেষ রাতের দিকে রক্ত বোমি হতে লাগলে ভোরের দিকে নন্দন দেবনাথ ও ডাক্তার জনিকে বললাম ডাক্তারের সাথে পরামর্শ ক্রমে চট্টগ্রামে রেফার করার জন্য। ডাক্তার সাহেব আরও পর্যবেক্ষণ করতে বেলেছিলেন। আমি বললাম চট্টগ্রাম চলে যাব। পরে রেফার করে দিলেন। এ্যাম্বুলেন্স জোগার করে ভোরেই বাসায় এসে টয়লে সেরে চট্টগ্রাম যেতে চাইলে অফিসেরসামনে লামতে দুই বার বোমি হওয়াতে আর বাসায় ঢুকা হলো না। চট্টগ্রাম রওনা।
ভোরে চট্টগ্রাম পৌছাতে এ্যাম্বুলেন্স চালক তপন চাকমার সহায়তায় ১৯ নং ওয়ার্ডে আইএনটিতে ভর্তি করানোর পর এক ঘন্টার মতো সিটে ফেলে রেখেছে। সেখানকার অবস্থা বর্ণনা থেকে বিরত থাকমলাম।
ব্যাথায় ছটফট করছি। রক্ত ঝরছে অনেক পর ব্যান্ডিস করে দিয়ে সিটে ভর্তি হওয়ার টিকেট কাটতে বললেন আই,এনটি বিভাগ থেকে সিট পাওয়া গেল ফ্লোরের এক জায়গায়। একজন আয়া ২০০ টাকা বকশিসের বিনিময়ে পুরানো একটি ফোম ও ছেড়া একটি রেকসিন এনে দিল। রাগে ক্ষোবে বাসায় এককার হয়ে গেলাম। অনেক চেষ্টা করেও সিট পাওয়া গেল না।
কিছুপর এক আয়া এসে পপুলারে সিটি স্কেন করার জন্য বলে গেলেন। ঐ সুযোগে ঐখান থেকে বের হয়ে পপুলার এ গিয়ে সিটিস্কেন করার পর আমি মেডিকেলে যেতে নিষেধ করলাম। নিকটস্থ একটি ক্লিনিকে বিনিময়ে ভর্তির পর সেখানে ইসিজি করার পর দেখা গেল মাইন্ড স্ট্রোক। তথন নিরাময় কর্তৃপক্ষ রাখতে অপরাগতা প্রকাশ করলেন। সেহেতু সামনে শুক্র শনি রবি (৩১/১/২) ছুটি ডাক্তার পাওয়া যাবে না। তাই রিক্স না নিয়ে অন্যত্র যেতে বললেন।
কোথায়া যাওয়া যায় ভর্তি হওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হতে বললাম। বললেইতো আর ভর্তি হওয়া যায় না। সেখানেও সিট পাওয়া সহজ না।
রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি বন্ধু রেহান উদ্দিন সাহেবের ছেলে ডাঃ রেদওয়ান রেহানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু পাওয়া গেল না। বাধ্য হয়েই অপেক্ষার পালা, কিক্ষু পর উনি ফোন করে জানতে চাইলে কি অবস্থা, তিনি চট্টগ্রামে ছিলেন না। ঢাকায় ছিলেন। ঢাকা থেকে বলে দিলেন ভর্তি করানোর জন্য। ইতিপূর্বেও আমি রেদওয়ান রেহানের রেফারেন্সে ম্যাক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করিয়েছিলাম।
তারপরেও ম্যাক্স হাসপাতালে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। ডাঃ সুপ্রন বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা হয়। ৩০ তারিখ থেকে ৩১ তারিখ বিকাল ৫ টা নাগাদ ব্যান্ডেজ খুলে দেওয়ার পর অনেকটা স্বস্থি পেলাম। তারপর কেবিন পাওয়া চেষ্টা তাই কেবিনের সংকট খালি নেই। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মোশারফ সাহেবের প্রচেস্টায় ১০ তলায় একটি রুম পাওয়া গেল।
রোগীদের সাথে দেখা কার সময় বিকাল ৫টা হওয়াতে অনেকে রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম থেকে দেখা করতে অপেক্ষা করতে লাগলো। ৫ টার পরে অনেকই আত্মীয় স্বজন বন্ধু সাংবাদিক দেখা করেছেন।
৭ টার দিকে আইসিউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর হওয়ার পর অনেকটা ভালৈা বোধ করছিলাম। রাতেই চট্টগ্রামস্থ জালালবাদ চক্ষু হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডাঃ নুরুল ইসলাম ভূইয় এবং তার স্ত্রী অধ্যাপক শায়লা জাহান দেখতে যান।
আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুারো এম. কে মোমিন, পুতারা বাদশা আলম, মেয়ের জামাতা জাহাঙ্গীর আলম সার্বক্ষনিক দেখা শুনা করেছেন।
হঠাৎ ডাঃ নুরুল ভূইয়া দেখলেন আঘাতে চক্ষু রক্ত এসেছে। উতি তাড়াতাড়ি একট ঔষধের নাম লিখে দিলেন সাথে সাথে এনে উনি চোখে দিয়ে চোখ রক্ষা পেল। কিন্তু ম্যাক্স এর ডাক্তাদের সেটা চোখে পড়েনি।
১ লা সেপ্টেম্বর শনিবার ছিল, ভাই বোন আত্মীয় স্বজন অনেক বন্ধু, বান্ধব, সাংবদিক দুরদুরান্ত থেকে সেখানে দেখতে এসেছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটু ভড়কে গিয়েছিল।
হাসপাতালের প্রশাসনিক ডাক্তার নার্স বা সকলে অত্যন্ত সেবা যতœ অনেকটা বেশী ছিল।
শনিবার দুপুরের পরে ডাঃ রেদওয়ান রেহান ঢাকা থেকে এসে আমাকে দেখলেন এবং পরে ডাঃ সুপ্রন বিশ্বাসের সাথে আলোচনা করে থেকে যেতে বললেন এবং নতুন করে ঔষধপত্র লিখে দিলেন। সেভাবে চিকিৎসা চালানো। রাত পর্যন্ত অনেকেই দেখতে এসেছেন অবশ্য ডাঃ রেহান বলেছেন যদি রক্তক্ষরন না থাকে তাহলে ২ তারিখ বাড়ী লে যেতে পারবেন। ২ রা অক্টোবর সকাল থেকে অনেকেই দেখতে আসলেন আবার অনেকেই ফোন করে খবর নিচ্ছেন কখন যাবো ইত্যাদি ইত্যাদি।
১ টার দিকে কর্তব্যরত কর্মকর্তা এসে জানালেন আমি রিলিজ হয়ে যেতে পারবো। বিল রেডী হচ্ছে। ২ টার মধ্যে সব ঠিক ঠাকা করে বের হবার সময় চট্টগ্রাম অনলাইন বার্তার পক্ষ থেকে একদল সাংবাদকর্মী এসে ভিড় করলেন। অথচা তারা নিচে পর্যন্ত এসে বিদায় দিয়েছেন।
সকলের থেকে বিদায় নিয়ে রাঙ্গামাটি রওনা হয়ে সন্ধ্যা নাগাদ রাঙ্গামাটি এসে পৌছে নিজ বাসায় অবস্থা করছি।
এই কয় দিনের বিষয়ে লিখে ঝামেলা করছি না। আমার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড় এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু লিখলাম।
অনেক বছরের অথ্যাৎ ৪৯ বছরের মধ্যে লেখালেখির ফলে রাঙ্গামাটিতে স্থাপিত হয়েছে রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ হাপসাতাল। আগামীতে ১০ তলা ভবন হবে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের।
কিন্তু ভবন আর ডাক্তার যাই হউক জনগন যদি রাঙ্গামাটিতে চিকিৎসা নিতে না পারে হালে এ গুলো করার কোন যৌক্তিকতা নেই। রাঙ্গামাটির মানুষ কোথায় না গিয়ে সুন্দর ভাবে, সুষ্ঠ পরিবিশে রাঙ্গামাটিতে চিকিৎসা সেবা নিতে পারে। সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। সেটাই হবে চাওয়া।
সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দেয়ার জন্য অনুরোধ রাখছি।

পড়ে দেখুন

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

॥ ডেস্ক রিপোর্ট ॥ অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের শহীদদের …