ভোটের লড়াই ২০১৮ : চট্টগ্রামে দুই জোটের দুই পেশাজীবী মাঠে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জাতীয় সংসদে ক্রমশঃ পেশাজীবীদের প্রতিনিধিত্ব কমছে। এমন অবস্থায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে মাঠপর্যায়ে পেশাজীবীদের জোরদার ভুমিকার আশায় শেষমুহূর্তে চট্টগ্রামের দুই পেশাজীবী নেতাকে ঘিরে মনোনয়নের হিসেব নিকেশ চলছে । দুই বড়জোটের সমর্থক এই দুই পেশাজীবী নেতা এখন জোট আর যুক্তফ্রন্টের নানা সমীকরণে আলোচিত। এঁদের দু’জনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ঘরানার পেশাজীবী মোর্চার আন্দোলন-সংগ্রামে দীর্ঘদিন বিশেষ ভুমিকা রাখায় তাদের মূল্যায়নের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে দুই পক্ষেরই নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে।
এই আলোচিত দুই পেশাজীবী নেতা হলেন যথাক্রমে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর পেশাজীবী মোর্চা ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদে’র চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ খুরশিদ জামিল চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলোর সমর্থক পেশাজীবী মোর্চা ‘পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ’ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি আসন থেকে ধানের শীষের মনোনয়ন চান ডাঃ খুরশিদ জামিল চৌধুরী ও চট্টগ্রাম-৯(কোতোয়ালি-বাকলিয়া)য় নৌকার বৈঠা পেতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন সাংবাদিক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী।
এক নজরে দুই পেশাজীবী নেতা :
রিয়াজ হায়দার চৌধুরী :
আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলোর সমর্থক পেশাজীবী মোর্চা পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ’ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী রাসেল সারাদেশের সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে বর্তমানে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে থাকা একমাত্র নেতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তরুণ নেতৃত্ব সৃষ্টির যে অব্যাহত প্রচেষ্টা, তাতেও পেশাজীবি নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে তরুণ নেতা রিয়াজের ভোটের মাঠে মনোনয়ন সম্ভাব্যতা রয়েছে। মহাজোটের সমীকরণ আর ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের অনৈক্য কাটিয়ে বিএনপির বিভক্তির সুফল ঘরে তুলতে এমন সর্বজন গ্রহনযোগ্য প্রার্থীর ব্যাপারেই ব্যাপক আশাবাদী অনেকেই।- এমন বহুমাত্রিক বিবেচনায় ব্যাপক আলোচনায় থাকা রিয়াজের মনোনয়ন ভাগ্য সুপ্রসন্ন হতে পারে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক তথ্যাভিজ্ঞরা ।
সনাতনী সম্প্রদায়, তরুণ,শ্রমিক ও পেশাজীবী ভোটারই ডিসাইডিং ফ্যাক্টর এই আসনে ।এখানে সনাতনী সম্প্রদায়ের সাথে দীর্ঘকালিন সম্পর্কের প্রীতিময়তা, তারুণ্য ও শ্রমিক পেশাজীবী সংগঠন সম্পৃক্ততা এবং ওয়ান ইলেভেনের দুর্মরকাল ও যুদ্ধাপরাধের বিচার আন্দোলন, পেট্রল বোমা-সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনসহ চট্টগ্রামের অধিকার ও উন্নয়নে, পেশাজীবী- নাগরিক আন্দোলন গঠনে টানা সম্পৃক্ততা আছে রিয়াজের। এসবই শেষমুহুর্তে চট্টগ্রাম বিভাগ হতে পেশাজীবী কোটায় তাঁর মনোনয়ন প্রাপ্তির নিয়ামক হতে পারে বলে আশা করছেন পেশাজীবীরা । চট্টগ্রামের মাঠের রাজনীতির পরিচিত মুখের কর্মপরিধি আওয়ামী ঘরানায় দেশের অন্যসব পেশাজীবি সংগঠকদের মধ্যেও বহুমাত্রিক । সাংবাদিকদের জাতীয় সংগঠন ‘বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নে’র সহসভাপতি ও চট্টগ্রামে নাগরিক উদ্যেগের আহবায়ক তিনি । ছিলেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও দুইবার করে সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক ।সিইউজে নির্বাচনে ৫৭বছরের রেকর্ড ভোট পেয়ে সভাপতি নির্বাচিত হন। প্রতিটি নির্বাচনে সর্বোচ্চ রেকর্ড সংখ্যক ভোটেই বিজয়ী হন।চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিশিষ্ট সিভিল সোসাইটি কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্য তিনি ।
চট্টগ্রামের সদর আসন কোতোয়ালি-বাকলিয়ায় ১৪দল ও জাতীয় পার্টি(এরশাদ) নেতৃত্বাধীন জোটের মাঠের কর্মীদের চাপা স্নায়ুবিক দূরত্বের সংকট কাটাতে পেশাজীবী- নাগরিক সংগঠক এই মুক্তিযোদ্ধার
সন্তানের প্রার্থীতাকে বিশেষ বিবেচনায় দেখছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারকরা।
নির্বাচনকেন্দ্রীক নানামাত্রিক অভিজ্ঞতা আছে পেশাজীবী-নাগরিক সংগঠক রিয়াজ হায়দার চৌধুরীর । আছে আন্দোলন সংগ্রামেরও অভিজ্ঞতা । ২০১৪-এর জাতীয় নির্বাচনে ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় নাগরিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক। ২০১৫সালের চসিক নির্বাচনে নাগরিক কমিটির পক্ষে ঘোষিত ইশতেহারটির প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। ‘গণজাগরণে’রও প্রধানতম এই সংগঠক সর্বশেষ বিএনপি-জামায়াতের পেট্রল বোমা-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। প্রাক্তন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর একাধিকবারের নির্বাচনেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে নাগরিক কমিটি, স্বাধীনতার বইমেলা, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা এবং চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রীক আন্দোলনেও সক্রীয় ছিলেন । ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের উপর পুলিশের আক্রমনের প্রতিবাদে সফল আন্দোলনের নেতৃত্বও দেন রিয়াজ ।পরবর্তীতে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনেরও ঘনিষ্ঠ শুভার্থী এই পেশাজীবী- নাগরিক সংগঠক আঞ্চলিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রায় সব ইস্যুতেই সক্রীয় চট্টগ্রামের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয় মুখ রিয়াজ । মৃত্যু হুমকিতে থাকা এই পেশাজীবী নেতা বারে বারে আক্রান্তও হয়েছেন। বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ডঃ অনুপম সেন ও সাংবাদিক সংগঠক রিয়াজ হায়দারসহ পাঁচ বরেণ্যজনকে হত্যার উড়ো চিঠি দেয়ায় থানায় জিডিও করেন ড. সেন ।
ওয়ান ইলেভেনে’র দুঃসময়ে, চসিক নির্বাচনসহ কয়েকটি জাতীয় ও আঞ্চলিক নির্বাচনে পেশাজীবী নাগরিক সংগঠক রিয়াজ ছিলেন মাঠে সক্রীয় । জননেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রায় দুই যুগ আগে থেকেই মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় সম্পৃক্ততা ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ অভিযান ও আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রকাশিত “অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা : নৌকা পারে, নৌকা-ই পারবে” শীর্ষক প্রচার পত্রটির রচনা করেন তিনি।

ডাঃ খুরশিদ জামিল চৌধুরী:
ডাঃ খুরশিদ জামিল চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন । তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে মাঠপর্যায়ে সক্রিয়। ড্যাব চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শাখার এই সভাপতি তিনি। ড্যাব-এর কেন্দ্রীয় সহসভাপতিও।
চার দফায় বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দু দফায় কেন্দ্রীয় বিএমএ’র সহসভাপতি ও সদস্য ছিলেন। ‘৯৩সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ক্যাফেটরিয়ায় ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হন । ২০০৯সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকালে নিবর্তনমুলক আচরণের প্রতিবাদে স্বেচ্ছায় সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন ।
সাবেক এই ছাত্রনেতা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ণ ডক্টরস এসোসিয়েশনের সভাপতিও ছিলেন । সাগর-রুনী হত্যার বিচার, সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি, দেশমাতা বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলন ও তারেক রহমানে গ্রেফতার করে নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং পেশাজীবী আন্দোলনে দীর্ঘদিন বিশেষ ভুমিকা রাখেন এই পেশাজীবী নেতা।
গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন, বিগত চসিক নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলিতে বিএনপি পন্থী এই পেশাজীবী নেতা ব্যাপক ভুমিকা রাখেন । চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে ধানের শীর্ষের মনোনয়ন প্রার্থী ডা. খুরশিদকে ঘিরে আসনটির বিএনপি’র নেতা কর্মীরা নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন। বিশেষ করে রাউজান বা রাঙ্গুনীয়া থেকে নয়, ফটিকছড়ির স্থানীয় বাসিন্দা প্রার্থী হিসেবে তার মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন এলাকাবাসী। যুদ্ধাপরাধ অভিযোগে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য রাউজানের সন্তান সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ২০০৮ সালে নির্বাচনে ফটিকছড়ি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি’র পরিচ্ছন্ন ইমেজের নেতা ডা. খুরশিদ জামিলকেই চাইছেন স্থানীয়রা।
এদিকে এই দুই পেশাজীবী নেতার মূল্যায়ন- অবমূল্যায়নের উপর আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিংবা পরবর্তী রাজনৈতিক গতিপ্রবাহে পেশাজীবীদের অবস্থান নির্ভর করবে এবং এমন ভাবনা থেকে পেশাজীবী সমাজ তাদের অংশীদারিত্বের বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বলেও রাজনৈতিক তথ্যাভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930