ভারী বৃষ্টিতে ডুবে গেছে চট্টগ্রাম

কয়েক দিনের টানা ভারি বৃষ্টিতে ডুবে গেছে চট্টগ্রাম নগরীর বেশ কিছু এলাক। হাজার হাজার বাসা-বাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্টানে পানি ডুকে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝ্উাতলায় বিদ্যুতের তার ছিড়ে পড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে এক ব্যক্তি। প্রবল বৃষ্টিতে ধসের আশঙ্কায় নগরীর পাহাড়গুলোতে ঝুঁকিতে থাকা মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ে। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো থেকে ইতিমধ্যে সাড়ে ৩’শ পরিবার আটটি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এসব পাহাড়ে থাকা অবশিষ্ট লোকজনকে যেতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে বড় জাহাজ থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য তোলা বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রামে শনিবার গভীর রাতে শুরু হয়েছে টানা বৃষ্টি। গত তিন দিনে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস মোট ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। এর মধ্যে শুধু গতকাল সোমবার বেলা ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টাতেই রেকর্ড করা হয়েছে ১৩৬ দশমিক দুই মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। অধিকাংশ এলাকা এখন পানির নিচে। কোথাও হাঁটু পানি, আবার কোথাও কোমর পানি। বুক সমান পানিও আছে কোন কোন এলাকায়। সড়কে পানি জমে থাকায় যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। টানা বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নগরবাসী সার্বিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করেছে। পানি বন্দী হওয়ায় অনেকে ঘর থেকেই বের হতে পারছেন না। নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড পৃথক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখনও প্রকল্পের কাজে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা প্রদীপ কান্তি রায় বলেন, পুরো দেশের ওপর মৌসুমি বায়ু প্রবলভাবে সক্রিয়। একারণে ভারি বর্ষণ ।ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের কোনো কোনো পাহাড়ি এলাকায় ভূমি ধ্বসের আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে গত রোববার রাত থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি উঠতে শুরু করে। সোমবার দুপুরের মধ্যে আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, ছোটপুল, বড়পোল, হালিশহর, বাদুরতলা, প্রবর্তক মোড়, দুই নম্বর গেট, ওয়াসা, মেহেদীবাগ, জিইসি মোড়, অলংকার, পাহাড়তলি রোড, বাকলিয়া, চকবাজার, বগার বিল ,বাকলিয়া, ডিসি রোড,এম.এম আলী রোড, শুলকবহর, বহদ্দার হাট, মেহেদীবাগ, অক্সিজেন, চাক্তাই- খাতুনগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। নগরীর বিভিন্ন অলি গলিতে পানি ঢুকে পড়েছে। অধিকাংশ এলাকা এখন পানির নিচে। কোথাও হাঁটু পানি, আবার কোথাও কোমর পানি। বুক সমান পানিও আছে কোন কোন এলাকায়। তিন পোলের মাথা, হেমসেন লেন, জামালখান বাই লেনসহ বিভিন্ন এলাকায় কোমর সমান পানি দেখা গেছে। এনায়েত বাজার ও রাইফেল ক্লাব সংলগ্ন এলাকা ও অপর্ণাচরণ স্কুল সংলগ্ন এলাকায় নালার পানি উপচে মূল সড়কে বইছে। ভারি বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে বন্দরনগরী। সকাল থেকে জলমগ্ন রাস্তায় যানবাহন কম থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী মানুষ, শিক্ষার্থী ও সাধারণ পথচারী।
নগরীর লালখান বাজার মোড় এলাকায় গাড়ির অপেক্ষায় থাকা শাহাদাত হোসেন বলেন, আগ্রাবাদ যেতে হবে। কিন্তু গাড়ি নেই বললেই চলে। এই বৃষ্টিতে হেঁটে যাওয়া সম্ভব না। আধাঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে ভিজছি। নগরীর মেহেদীবাগের এক বাসিন্দা বলেন, নিচতলার বাসায় পানি ঢুকে গেছে। এই এলাকায় গত কয়েক বছরে এমন হয়নি। চট্টগ্রাম ওয়াসার একটি ভবনের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়ায় সেখানকার দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়ায় রোগী ও স্বজনরা পড়েছেন ভোগান্তিতে । প্রবর্তক ও দুই নম্বর গেট এলাকায় প্রায় বুক সমান পানি জমার কারনে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। নগরীর অন্য অংশে পাহাড়তলি বাজার সড়ক, ঈদগাঁও সড়ক ও ডিটি রোডের কিছু এলাকা পানি জমে যাওয়ায় বেলা দেড়টা পর্যন্ত যানজটে পুরো সড়ক অচল হয়ে যায়।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মঈনুদ্দিন জানিয়েছেন, জলবাবদ্ধতা কমাতে সেনাবাহিনীর পাঁচটি রেসপন্স টিম মাঠে কাজ করছে। প্রবর্তক মোড়, দুই নম্বর গেটসহ বিভিন্ন এলাকায় যেখানে বেশি পানি সেখানে এর কারণ বের করে তা সমাধানে তারা কাজ করছেন। একটি কনসালটেন্ট টিম আজ সন্ধ্যার মধ্যে প্রতিবেদন দেবে বেশি জলাবদ্ধ এলাকাগুলোর পানি জমার কারণ চিহ্নিত করে। এদিকে ভারি বর্ষণ ও জলাবদ্ধতার কারণে নোয়া খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সিডিএর অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছে।
নগরীর পাহাড়ি এলাকায় ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে সরিয়ে নিতে গত শনিবার আটটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। রোববার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত এসব আশ্রয় কেন্দ্রে সাড়ে তিনশ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন।
তিনি বলেন, প্রশাসন সজাগ আছে। আমাদের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকায় মাইকিং এবং উচ্ছেদ কার্যক্রম চলছে। নগরীর আটটি আশ্রয় কেন্দ্রে পরিবার নিয়ে পাহাড় থেকে অনেকে আসছেন। তাদের জন্য শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা হচ্ছে। টানা বৃষ্টি শুরুর পর চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়গুলোতে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের সরাতে রোববার পূর্ব পাহাড়তলীর জালালাবাদ এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি-কাট্টলী) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, কৈবল্যধাম বিশ্ব কলোনি, চন্দ্রনগর, চৌধুরী নগর এবং ১,২ ও ৩ নম্বর ঝিল পাড় এলাকায় পাহাড়ে বসতি স্থাপনকারীদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে । ভারি বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) থেকে লাইটার জাহাজে (ছোট আকারের জাহাজ) পণ্য খালাস বন্ধ আছে বলে জানান বন্দরের পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ মমিনুর রশিদ । বৃষ্টি বেশি হলে বর্হিনোঙরে পণ্য খালাস সম্ভব হয় না। তাই কাজ বন্ধ রয়েছে বলে জানান তিনি।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031