॥ খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ॥ খাগড়াছড়িতে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনা ও আনন্দ উৎসব মুখর পরিবেশে নানা কর্মসূচী মধ্য দিয়ে পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২২ তম বর্ষপূর্তি পালিত হয়েছে । ১৯৯৭ ইং সনের ২ ডিসেম্বর বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতির সমিতির সাথে ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষকের মাধ্যমে দীর্ঘ দু’দশকেরও বেশী সময় ধরে বিরাজমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে সক্ষম হয়।
পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র ২২ তম বর্ষপূর্তি দিবসটিকে ঘিরে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়ন সদর দপ্তর সোমবার সকাল ৯ টায় শহবে বের করে বর্নাঢ্য এক আনন্দ র্যালী ।পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রাংগনে শান্তিরর কপোত সাদা পায়রা উড়িয়ে বনার্ঢ্য এ র্যালীর উদ্ধোধন করেন প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা উপজাতীয় শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিন পার্বত্য জেলার সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা,খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: ফয়জুর রহমান,খাগড়াছড়ি ডিজিএফআই ডেট কমান্ডার কর্ণেল মো: নাজিম উদ্দিন,খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ^াস, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার এমএম সালাহ উদ্দিন,পৌর মেয়র রফিকুল আলম, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ শানে আলম সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। র্যালীতে হাজার হাজার পাহাড়ী বাঙ্গালী নারী পুরুষ অংশ গ্রহন করে । বনার্ঢ্য এ র্যালীটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে খাগড়াছড়ি টাউন হল প্রাংগনে এসে শেষ হয় । পরে জেলা পরিষদ সদস্য খগেশ^র ত্রিপুরার সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় । আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিটন খীসা।এ উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচী পালন করে। পার্বত্য জেলা পরিষদ চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি পূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার অঙ্গিকার করেছে।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা উপজাতীয় শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেন জননেত্রী প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার কারনেই আজ পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তির সুবাতাশ বইছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে পাহাড়ী-বাঙ্গালী সকলকে সহাবস্থান বজায় রাখার আহবান জানানো হয়। তিনি বলেন বর্তমান সরকার চুক্তির বেশির ভাগ শর্তই বাস্তবায়ন করেছে এবং বাকি গুলো ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হবে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ভাতৃঘাতি সংঘাত পরিহার করার জন্য পাহাড়ী জনগণের প্রতি আহবান জানান।
অপরদিকে পাহাড়ে সংঘাত বন্ধ, আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছে সংস্কার পন্থি পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতির (এমএন লারমা) নেতৃবৃন্দরা।তারা খাগড়াছড়িতে বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২২ বর্ষপূর্তি উদযাপন করেছে ।সোমবার সকালে খাগড়াছড়ি জেলা শহরের লারমা স্কয়ার থেকে বিশাল একটি র্যালী শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মারমা উন্নয়ন সংসদ হল রুমে এসে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
আলোচনা সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি বিমল কান্তি চাকমা।
এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক বিভু রঞ্জন চাকমা,সহ-সাধারণ সম্পাদক সুভাষ কান্তি চাকমা,যুব বিষয়ক সম্পাদক প্রণব চাকমা, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক উজ্জ্বল কিরণ ত্রিপুরা,কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সুদর্শন চাকমা,মহিলা সমিতির সভানেত্রী কাকলী খীসা,ঢাকা বিশ^ বিদ্যালয়ের ছাত্র ফেডারেশনের নেত্রী পদ্মা রানী বারী প্রমূখ। এতে সাধারণ পাহাড়ি জনগোষ্ঠির পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন অংশ নেয়।
এতে বক্তরা, পাহাড়ের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় মৌলিক বিষয়সহ পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবী জানিয়ে বলেন পাহাড়ে চুক্তি বাস্তবায়নের ধীর গতির কারনে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছে পাহাড়ের মানুষ। তাই কাল ক্ষেপন না করে পার্বত্য চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়নের দাবী জানান বক্তরা।
এবার খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ( সন্তু লারমা),চুক্তির বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই বিরোধিতাকারী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রর্ন্ট(ইউপিডিএফ), সমঅধিকার আন্দোলন,বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ,গন পরিষদ ও বিএনপি সহ চার দলীয জোট এবার পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তির ২২ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কোন কর্মসূচী পালন করেনি।
এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা) ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কমিটির অন্যতম সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি জানান, চুক্তির বেশিরভাগ ধারাই বাস্তবায়িত হয়েছে। চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিক। তিনি আরো বলেন, আমরা পার্বত্য চুক্তির অনেকগুলো ধারা বাস্তবায়ন করেছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয় গঠন, পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ গঠন, উপজাতীয় শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স গঠন, ভূমি কমিশন গঠন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পরীক্ষা করার লক্ষে চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন, ভূমি কমিশন আইনের ধারাগুলো সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহন, পার্বত্য জেলার স্থানীয় সরকার পরিষদের পরিবর্তণ করে পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন সহ পার্বত্য চুক্তির বেশির ভাগ ধারা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এছাড়া ভারত প্রত্যাগত ১২ হাজার ১৭০ পরিবারকে ২০ দফা প্যাকেজ সুযোগ-সুবিধাসহ পূণর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিক নয়- জন সংহতি সমিতির এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন এ কথা সঠিক নয়।
ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২২ বছর পূত্তির্ উপলক্ষ্যে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও খাগড়াছড়ি রিজিয়ন সদর দপ্তরের ,আতশবাজি প্রর্দশন ও বনার্ঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ।