সরকারের সমাজকল্যান মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব খাদিজা নাজনীন বলেছেন, বর্তমান সমাজে প্রকৃত অপরাধীদের পাশাপাশি শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী অনেকে অপরাধ না করেও অপরাধী হয়ে কারাগারে যায়। অনেক ছোট-খাটো অপরাধ আছে যেগুলো তাদের অজ্ঞাতে ও না জানার কারণে হয়। শহরে পাড়া-মহল্লায় ও বস্তিতে থাকা পিতা-মাতাহীন পরিত্যক্ত শিশুদের মধ্যে সকলে সৎপথে চলবে, শিখবে এটাতো আশা করা যায়না। তাদেরকে বুঝিয়ে শুদ্ধ বা সংশোধন করে সমাজের মানুষের সাথে সম্পৃক্ত করা সকলের নৈতিক দায়িত্ব। জেলখানার সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সেখানে ধারণ ক্ষমতার তিন/চারগুন আসামী-বন্দী রয়েছে। সেখানে কিছু কিছু নিরপরাধ শিশু আসামীকে দাগী আসামীদের সাথে সেলে রাখার কারণে তারাও অনেক সময় অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে। সংশোধনের লক্ষ্যে জেলখানায় তাদের জন্যকোরআন শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন কুটির শিল্প কাজের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। যাতে করে জেল থেকে বের হয়ে পূনরায় অপরাধে না জড়িয়ে এরা নিজেরা কাজ-কর্ম করে স্বাবলম্বী হতে পারে। অপরাধীদের সংশোধনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করা সমাজকল্যান মন্ত্রনালয়ের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য। অপরাধীরা সংশোধন হয়ে গেলে সুন্দর ও আলোকিত সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মাণ হবে। মানুষের মত মানুষ হয়ে তারা একদিন উন্নত দেশ গড়ার কাজে এগিয়ে আসবে। আমরা কেউ অপরাধী হতে চাইনা। আজ ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ইং রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্টিত “প্রবেশন আইন ও প্রবেশন ব্যবস্থা” শীর্ষক বিভাগীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ইউএনডিপি’র সহযোগিতায় সমাজসেবা অধিদফতর কর্মশালার আয়োজন করেন।
তিনি বলেন, প্রবেশন আইন সম্পর্কে সর্বত্র প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখতে হবে। এ বিষষে আরো বেশি অবগত হয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হলে প্রবেশন অফিসারদেরকে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক, আইনজীবি ও সংশ্লিষ্টদের কাছে যেতে হবে। প্রবেশন আইন ও প্রবেশন ব্যবস্থা বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন উপ-সচিব নাজনীন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) এ.জেড এম শরীফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও চমেক হাসপাতাল সমাজসেবা অফিসার অভিজিৎ সাহার সঞ্চালনায় অনুষ্টিত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের পরিচালক নুসরাত সুলতানা, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শহীদুল ইসলাম, সিনিয়র জেল সুপার মোঃ কামাল হোসেন, ঢাকাস্থ সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রবেশন ও চিকিৎসা) লামিয়া ইয়াছমিন ও চট্টগ্রামস্থ ইউএনডিপি বাংলাদেশ’র ডস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর উজ্জ্বল কুমার দাস চৌধুরী। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে “প্রবেশন আইন ও প্রবেশন ব্যবস্থা ” বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ইউএনডিপি বাংলাদেশ’র প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেশনঅফিসার মেবেল সিলভীয়া রড্রিকস। কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিএমপি’র এসি (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাবুদ্দিন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, নির্বাহী সদস্য ম.শামসুল ইসলাম, বাসাস’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদস্য সচিব রনজিত কুমার শীল, মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতিষ্টানের অধ্যক্ষ আবুল কাশেম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হাসান মাসুদ, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আইয়ুব খান (নোয়াখালী), মোস্তাকুর রহিম খান ফেনী), মোাম্মদ ওমর ফারুক (রাঙ্গোমাটি), মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম (খাগড়াছড়ি), সফিকুল ইসলাম (বান্দরবান), রজত শুভ্র সরকার (চাঁদপুর), মাসুদুল হাসান তাপস (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), জেড.এম. মিজানুর রহমান খান (কুমিল্লা), নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী (লক্ষীপুর), কোডেক’র নির্বাহী অলকা চৌধুরী, অপরাজেয় বাংলাদেশ’র ম্যানেজার ঝুমরী বড়–য়া, এডিশনাল পিপি এডভোকেট স্বরূপ পাল, জেলা প্রবেশন অফিসার পারুমা বেগম (চট্টগ্রাম), কৃত্তি বিজয় চাকমা (খাগড়াছড়ি), মুহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান (লক্ষীপুর), আবু মোঃ তালেব (কক্সবাজার), মোঃ ফেরদাউস আলম সরকার (নোয়াখালী),মোঃ মনিরুল ইসলাম (চাঁদপুর),আলপনা চাকমা (রাঙ্গামাটি) প্রমুখ।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মশালায় ১১টি ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সকল উপপরিচালকগণ, প্রবেশন অফিসারগণ, এবং এনজিও কোডেক ও অপারজেয় বাংলাদেশ এর প্রতিনিধিবৃন্দ ৃঅংশগ্রহনকরে অপরাধী সংশোধন, বাংলাদেশে বিদ্যমান প্রবেশন ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধতাসমূহ চিহ্নিত করে বর্তমান অবস্থা উন্নয়নে করণীয় বিষয়ে বিভিন্ন মতামত দেন।
সভায় জানানো হয়, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট মনে করে, বর্তমানে দেশেরে ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় প্রায় সর্বক্ষেত্রেই দন্ডিত অপরাধীদের সাজা ভোগের জন্য কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এতে দেশের কারাগারসমূহে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য দ্য প্রবেশন অফ অফেন্ডার্স অর্ডিনেন্স ১৯৬০ এর বিধানাবলী যথাযথ প্রয়োজ অপরিহার্য হয়ে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট মনে করে, সাজা আরোপ করা সর্বক্ষেত্রেই আইন সমর্থন করে না কারণ সাজা প্রদানের অন্যতম উদ্দেশ্য সংশোধন, প্রতিহিংসামূলক নয়। উক্ত আর্দশিক বিষয় বিবেচনায় রেখে অপরাধীর বয়স, পূর্বাপর আচার-আচরণ, দৈহিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে উপযুক্ত আইনের বিধানাবলী যথাযথ প্রয়োগ পরিস্থিতি উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। দ্য প্রবেশন অফ অফেন্ডার্স অর্ডিনেন্স ১৯৬০ এর ৪ ধারার বিধান অনুযায়ী পূর্বে দন্ডিত হয়নি এমন কোন অপরাধী অনধিক দুই বছরেরর কারাদন্ডে দন্ডনীয় কোন অপরাধের জন্য দন্ডিত হলে আদালত অপরাধীর বয়স, স্বভাব-চরিত্র, প্রাক-পিরচয় অথবা শারীরিক বা মানসিক অবস্থা এবং অপরাধের ধরন অথবা অপরাধ সংঘটনের শাস্তি লাঘবকারী পরিস্থিতি বিবেচনাপূর্বক যদি মনে হয় যে, দন্ডপ্রদান অসমীচীন এবং প্রবেশনের আদেশ প্রদান করা যথাযথ নয়, তাহলে আদালত কারণ লিপিবদ্ধ করে সতর্ক করতঃ অপরাধীকে অব্যাহতি দিতে পারেন অথবা উপযুক্ত মনে করলে আদেশে বিবৃত সময় হতে অনধিক একবছর সময়ের জন্য কোন অপরাধ না করার এবং সদাচরণে থাকার শর্তে জামিনদারসহ বা জামিনদার ছাড়া মুচলেকা প্রদানে বিমুক্ত হওয়ার আদেশ দিতে পারেন। শর্তসাপেক্ষে অব্যাহতির এরূপ আদেশ প্রদানের পূর্বে আদালত অপরাধীকে সহজবোধ্য ভাষায় ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিবেন যে ঐ সময়কালে কোনো অপরাধ সংঘটন করলে বা সদাচরণের মধ্যে না থাকলে সে মূল অপরাধের জন্য প্রদত্ত সাজা ভোগ করবেন। দ্য প্রবেশন অফ অফেন্ডার্স অর্ডিনেন্স ১৯৬০ এর ৬ ধারার বিধান অনুযায়ী আদালত যক্তিযুক্ত মনে করলে অপরাধী কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের এবং মামলার খরচ পরিশোধের আদেশ দিতে পারেন।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এর রেজিস্টার জেনারেল কর্তৃক স্বাক্ষরিত সার্কুলারে দন্ডিত অপরাধীদের সমাজের মূলস্রোতে পুনর্বাসনের এবং সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে অধস্তন ফৌজদারী আদালত সমূহকে উপযুক্ত ক্ষেত্রে দ্য প্রবেশন অফ অফেন্ডার্স অর্ডিনেন্স ১৯৬০ এর বিধানাবলী যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপশি উক্ত আইন প্রতিপালনে কোন সমস্যা/অসুবিধা, অনীহা বা গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে বিষয়টি সুপ্রীম কোর্টের নজরে আনার জন্য স্থানীয় নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন।