ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) প্রত্যাহারের দাবিতে এবার রাজপথে নেমেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কলকাতায় সোমবার তিনি সিএএ এবং এনআরসিবিরোধী বিশাল মিছিলের নেতৃত্ব দেন। যতক্ষণ না এগুলো বাতিল হচ্ছে, ততক্ষণ রাস্তায় আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও ঘোষণা দেন মমতা। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এ সময় বলেন, এ আন্দোলনে আপনাদের পাশে কেউ না থাকলেও মনে রাখবেন আমি থাকব, আমরা থাকব।
এদিন দুপুরে রেড রোডে বিআর অম্বেডকরের মূর্তি থেকে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত বিশাল মিছিল করেন মমতা।
তার পরে সেখানে বিশাল এক জনসভায় তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘কী করবে, আমার সরকার ফেলে দেবে? আমাকেও ফেলে দাও।
এখানে এনআরসি বা সিএবি চালু করতে হলে আমার মৃতদেহের ওপর দিয়ে করতে হবে। আস্তে আস্তে অন্য মুখ্যমন্ত্রীরাও তার মতো এ আইনের বিরুদ্ধে সরব হবে বলে দাবি করেন তিনি।
মিছিলের সামনে মমতা ছিলেন, তার চারপাশে ছিল কঠোর নিরাপত্তাবলয়। সেখানে দেখা যায়নি কোনো নেতামন্ত্রীকে।
তার পাশে ছিলেন বাংলার কয়েকজন ক্রীড়াবিদ। মিছিলে জনসমাগম সম্পর্কে মমতা বলেন, লাখ লাখ মানুষের মিছিল হয়েছে। শেষ মাথা এখনও দেখা যাচ্ছে না।
সিএএ-বিরোধিতায় গত কয়েক দিন ধরে রাজ্যজুড়ে যে অগ্নিগর্ভ অবস্থা বিরাজ করছে, তার নেপথ্যে বিজেপি রয়েছে বলে এদিন সরাসরি অভিযোগ করেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্টই বলেন, কেউ কেউ নিজের আখের গোছাতে টাকার বিনিময়ে বিজেপির কাছে মাথা নত করে আগুন জ্বালাচ্ছে। কারা করছে তার প্রমাণ আমার কাছে আছে।
মমতা বলেন, বিজেপি এবং তার দালালরা হিন্দু-মুসলিমের গোলমাল বাধাতেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ বিশৃঙ্খলা করছে।
বিজেপি যত না খারাপ, বিজেপির দালালরা তার থেকেও খারাপ। এই দালালদের আমি ক্ষমা করবো না।
নিজে পথে নেমে কেন্দ্রবিরোধী আন্দোলন করলেও কোনোভাবে হিংসাত্মক ঘটনা তিনি বরদাশত করবেন না বলে জানিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, আপনারা কেউ উগ্র আন্দোলনে যাবেন না।
কেউ ট্রেনে আগুন জ্বালাবেন না। পোস্ট অফিসে আগুন দেবেন না। এতে মানুষের অসুবিধা হয়।
শীতের মধ্যে একের পর এক ট্রেন বন্ধ থাকায় মানুষের যে ভোগান্তি হচ্ছে, তারও সমালোচনা করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, দুটো ট্রেনে আগুন লেগেছে বলে সব ট্রেন বন্ধ করে দেবে?
তিনি বলেন, কেন্দ্র আমার কাছে জানতে চাইছে- সিআইএসএফ, সিআরপিএফ ও বিএসএফ চাই কিনা?
আমি বলেছি, আমার পুলিশই যথেষ্ট। কাউকে চাই না। মানুষই পুলিশের সঙ্গে সামলাতে পারবে। গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন হবে।
মোদিকে উদ্দেশ্য করে মমতা বলেন, দিল্লি আগে সামলান, পরে দেখেন বাংলা। বাংলা আমরা সামলে নেব।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা সবাই এ দেশের নাগরিক। কারও দয়ায় এখানে আমরা থাকি না। স্বাধীন দেশের নাগরিক আমরা। না খেয়ে থাকব, কিন্তু কোনোভাবেই আত্মসমর্পণ করব না।