রাঙ্গামাটি ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ প্রকাশ্য কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগ। মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে, পরস্পর বিরোধী দুই গ্রুপ। বিরোধ রুপ নিয়েছে তীব্র আকারে। মূলত: অবৈধ দখল ও টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজী, অর্থ লেনদেন, সংগঠন পরিপস্থি অনিয়মকে ঘিরে দুই সংগঠনটির জেলা নেতাকর্মীরা গ্রুপে বিভক্ত রূপ নিয়েছে।
ছাত্রলীগের একটি পক্ষ বর্তমান সভাপতি সম্পাদককে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে গতকাল রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে। অপরদিকে বর্তমান কমিটি সভাপতি সম্পাদক আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা নেতাকর্মীদেও কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারী) দুপুরে আহূত এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল জব্বার সুজন এবং সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে, রাশেদ-শাকিল গ্রুপ। পাশাপাশি সাইফুল আলম রাশেদকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং মঈন উদ্দিন শাকিলকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আহূত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল জব্বার সুজন এবং সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা বিভিন্ন সময়ে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জায়গা দখল, মাদক ব্যবসাসহ সংগঠন পরিপন্থী ও অপরাধমূলক কাজে জড়িত থেকে দলের চরম ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করে চলেছে। এসবের দায়ে বিতর্কিত দুই জনকে অবাঞ্চিত করা হয়েছে। ২৭ জানুয়ারি জেলা ছাত্রলীগ এবং তার আওতাধীন জেলার আট ইউনিটের সভাপতি ও সম্পাদকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তারা বলেন, এর আগে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুজন চট্টগ্রাম জেলার রাণীরহাট এলাকা থেকে দুইটি ড্রামভর্তি ট্রাক ছিনতাই, পুলিশের গাড়িতে হামলা করে মাদক ও চোরা গাড়ির ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করেন এবং সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ অবৈধ গুলি রাখার দায়ে তার সহযোগীসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন। প্রকাশ রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের রেস্ট হাউস ভাংচুরের মামলায় অভিযুক্ত। তিনি বিভিন্ন সময়ে মদ্যপ হয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর চালান। তারা অবাধ চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিতে জড়িত। সোমবার রাতে শিবিরের স্টাইলে ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা নাসিরের রগ কটেছেন তারা। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ সময় জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইফুল আলম রাশেদ ছাড়াও, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মঈন উদ্দিন শাকিল, যুগ্ম সম্পাদক সুলতান মাহমুদ বাপ্পা, কলেজ ছাত্রলীগের সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ রিয়াজ, বাঘাইছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইমরান, রাঙ্গামাটি পৌর ছাত্রলীগের সম্পাদক আপ্রুচিং লেপচা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এদিকে যোগাযোগ করা হলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল জব্বার সুজন বলেন, যারা আমাাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের কাজ করছে- তারা সম্পূর্ণ সগঠন পরিপন্থীমূলক অপরাধ করছে। আমাদেরকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করার তারা কেউ নয়। যা করার তার সব ক্ষমতা কেন্দ্রের। তারা (রাশেদ-শাকিল গ্রুপ) জামায়াত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। রাশেদ ছাত্রদলে ছিল। আর সুলতান মাহমুদ বাপ্পার বাবা ছিলেন, সাম্প্রদায়িক সংগঠন পার্বত্য বাঙালি গণপরিষদের নেতা। তারা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার দায়ে সাংগঠনিকভাবে মারাত্মক অপরাধ করছে। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রে জানানো হবে। আমরা যা করছি, সবই সংগঠনের গঠনতন্ত্র মোতাবেক করছি। আমরা কোনো ধরনের অন্যায় কাজ করছি না। আমরা যে কোনো মূল্যে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং জননেতা দীপংকর তালুকদারের নির্দেশনায় দলের ভাবমূর্তি অক্ষুণœ রাখবই।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা বলেন, তাদের (রাশেদ-শাকিল গ্রুপ) গ্রুপিংয়ের কারণে এসব কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। যা করছে সবই ভিত্তিহীন। তাদের সাংগঠনিক কোনো বৈধতা নেই।
এর কিছুদিন আগে পৌর শাখার অধীন ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিনকে স্থায়ী বহিস্কার করেন, যুবলীগের রাঙ্গামাটি পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওহাব খাঁন শিবলু। এর প্রতিবাদে ২২ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন, নাসির উদ্দিন। এর পাঁচ দিনের মাথায় সোমবার রাতে নাসিরের পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়েছে। গুরুতর নাসির বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনা শিবিরের স্টাইলে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুল জব্বার সুজন, আরিফ, মিজান ও দীপংকরের ঘটানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন, ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম রাশেদ ও সুলতান মাহমুদ বাপ্পা।
জানা যায়, জেলা ছাত্রলীগের বিবাদমান একটি গ্রুপে নেতৃত্বে রয়েছেন, সংগঠনটির জেলা সভাপতি আবদুল জব্বার সুজন ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা। অপরটির নেতৃত্বে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাইফুল আলম রাশেদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন শাকিল। উভয় গ্রুপে জড়িত জেলা যুবলীগের অনেকে। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে রাঙ্গামাটি পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাসির উদ্দিনকে কুপিয়ে তার রগ কেটে দিয়েছে প্রতিপক্ষীয়রা। সোমবার রাতে শহরের হ্যাপির মোড়ে এই ঘটনা ঘটে।
এদিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা শাখার এক জরুরী সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, সাইফুল আলম রাশেদ (সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা শাখা) রুপম দাশ (সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা শাখা) সুলতান মাহমুদ চৌধুরী (যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা শাখা) মঈন উদ্দিন শাকিল (যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা শাখা)-কে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ১৭(খ) ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা শাখায় তাদের দায়িত্বরত উপরোক্ত পদসমূহ স্থগিত করা হলো।
উল্লেখ্য যে, ভবিষ্যতে তাদের যেকোন অসামাজিক, অনৈতিক এবং সংগঠন পরিপন্থী কর্মকান্ডের দায়ভার বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা শাখা বহন করবে না।

মুক্ত গণমাধ্যম চাই : সকল গণমাধ্যমে এক নীতিমালা, তথাকথিত ওয়েজ বোর্ড বাতিল, নিজস্ব বেতন বোর্ড, বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্র নীতিমালা নিয়ন্ত্রণ মুক্ত, প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মূল্য কমানো ও মফস্বলের পত্রিকাগুলো সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে টিকিয়ে রাখতে হবে

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031