॥ বান্দরবান প্রতিনিধি ॥ বান্দরবান সদর উপজেলার জামছড়ি বাজারে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারী) সন্ধ্যায় সন্ত্রাসীদের ব্রাশ ফায়ারে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি বাচনু মারমা (৫৫) নিহত হয়েছেন। এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা আরো এক ব্যক্তি আতঙ্কে মারা যান। হামলায় আহত হয়েছেন আরো পাঁচজন।
আহতরা হলেন- সাবেক মেম্বার উচ থোয়াই (৬৫), যুবলীগ নেতা মংক্যা চিং মারমা (২৫), যুবলীগ নেতা হ্লামং চিং (৩০) ক্যাপোমং (৪৫) এবং প্রতিবন্ধী আধাসী (২৬)। ঘটনার পর পর আতঙ্কে পাহাড়ি গ্রামের মানুষ এদিক-সেদিকে ছুটাছুটি শুরু করে। আতঙ্ক নেমে আসে এলাকাজুড়ে।
তিন বছর আগে একই গ্রামে হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মংপু মারমাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এখনো তাঁর কোনো সন্ধান মেলেনি।
এদিকে পার্বত্য বান্দরবানের জামছড়ি মুখ পাড়ায় বর্বোরোচিত কায়দায় হামলা চালিয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি বাচনু মারমাকে হত্যা ও একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী হামলায় আরো অন্তত ৬ জনের হতাহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশেসিং এম,পি।
বান্দরবান সদর থানার ওসি সহিদুল ইসলাম জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর রাজবিলা ইউনিয়নের জামছড়ি বাজারে এ হামলার ঘটনা ঘটে। নিহত ও আহতদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এলাকায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ১৫ জনের একটি সশস্ত্র দল বাজারের পেছনের খাল থেকে উঠে আসে। তাদের ৯ জন দোকানের আশপাশে পজিশন নেয়। একজন অস্ত্র উঁচিয়ে ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি বাচনু মারমাকে লক্ষ্য করে ব্রাশ ফায়ার করলে তিনি ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন। এরপর ব্রাশ ফায়ার করতে করতে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় দোকানে থাকা আরো পাঁচজন আহত হয়েছে।
ওই সময় দোকানে বসে থাকা বা চ খয় (৬৩) নামের একজন ঘটনার আকস্মিকতায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. অং সুই প্রু মারমা জানান, হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগ বান্দরবান শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
পার্বত্য মন্ত্রী তার উদ্বেগে বলেন, পার্বত্য বান্দরবানের জামছড়ি মুখ পাড়ায় বর্বোরোচিত কায়দায় হামলা চালিয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি বাচনু মারমাকে হত্যা ও একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী হামলায় আরো অন্তত ৬ জনের হতাহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশেসিং এম,পি।
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারী) সকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং এর সহকারী একান্ত সচিব স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই ঘটনার উদ্বেগ প্রকাশ করেন ।
বীর বাহাদুর উশৈসিং এম,পি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও চলমান উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার জন্য শান্তি ও উন্নয়ন বিরোধী অপশক্তি এ ঘটনার পেছনে জড়িত থাকতে পারে।
কাদের দ্বারা এই হামলা ও হত্যাকান্ডের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তা তদন্ত সাপেক্ষ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, পার্বত্য এলাকায় শান্তি-শৃংখলা ও উন্নয়নের ধারা চলমান রাখার স্বার্থে অবিলম্বে এসব সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত ও আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, মুষ্টিমেয় কিছু সন্ত্রাসী ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙ্গালী তথা আপামর জনগোষ্ঠী শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও অগ্রগতির পক্ষে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তির পর পশ্চাৎপদ এই অঞ্চলে যেভাবে উন্নয়নের ধারা সূচিত হয়েছে তাকে নস্যাৎ করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্রকারী চক্র তৎপর।
তিনি আরো জানান, অস্ত্রবাজির মাধ্যমে শান্তি ও উন্নয়নের স্বপক্ষ শক্তি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দমন ও সাধারন জনগণকে আতংকিত করে উন্নয়নের ধারাকে ব্যাহত করতে পারলেই তাদের উদ্দেশ্য সফল। পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নকে পেছন থেকে, অন্ধকার থেকে টেনে রাখার এই অপকৌশল বন্ধ করতে হলে অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করা সাধারণ মানুষের প্রাণের দাবী।
পার্বত্য মন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে ঘটে আসা অপহরণ-হত্যা-গুমসহ সর্বশেষ জামছড়িতে বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে এ ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য দাবী জানিয়েছেন।