চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সমন্বয় সভা : জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় বন্দরের কন্টেইনার জট কমাতে হবে — বিভাগীয় কমিশনার

চট্টগ্রাম অফিস :: চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ এনডিসি বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির হৃদপিন্ড। বন্দর সংশ্লিষ্ট সকল স্টেক হোল্ডারদের নিজস্ব ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। বন্দরের কন্টেইনার জট কমাতে হবে। করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের চলাচল সীমিত করা হলেও কাজে সমন্বয় করার জন্য বন্দর ব্যবহারকারী প্রতিষ্টানগুলোতে একজন করে ফোকাল পয়েন্ট রাখতে হবে। লেনদেনের সুবিধার্থে ব্যাংক খোলা রাখার সময়সীমা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাদি বিবেচনার বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। বন্দরের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদেরকে প্রতিষ্টান বা সংগঠনের আইডি কার্ড সাথে রাখতে হবে। রাষ্ট্র ও সরকারের স্বার্থে টিমওয়ার্কের মাধ্যমে বন্দরকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আজ ১৪ এপ্রিল ২০২০ ইং সোমবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরে সৃষ্ট কন্টেইনার জট নিরসনের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে আয়োজিত সমন্বয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, করোনা থেকে বাঁচার মহৌষধ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা ও ঘরে থাকা।।এটি মেনে বন্দরের কন্টেইনার জট কমাতে নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা না করে সমন্বিত প্রস্তাবনা পাঠাতে হবে। বন্দরের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে বন্দরের জট কমবে। এমনিতে আমদানি-রপ্তানী কম হচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিবেচনায় রেখে বন্দর সংশ্লিষ্ট সকলে আন্তরিকভাবে কাজ করলে বন্দও সচল থাকবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শেখ মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, মোংলা বন্দর বন্ধ হলে দেশের তেমন ক্ষতি হবেনা। দেশ-বিদেশে ৯৫ শতাংশ আমদানী-রপ্তানী চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়। এ বন্দর বন্ধ হলে দেশ ও সরকারের হার্ট বন্ধ হয়ে যাবে। কনটেইনার ডেলিভারি না হওয়ার কারণে জট লেগে আছে। আমরা সমস্যা চিহ্নিত করতে পেরেছি। সবার সহযোগিতা পেলে চার দিনের মধ্যে ম্যানেজ করতে পারবো। যে কোন পরিস্থিতি হোক না কেন, দেশের বৃহৎ স্বার্থে বন্দর চালু রাখার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করতে হবে। করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘ মেয়াদীও হতে পারে। আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে। বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বন্দর ব্যবহারকারী অন্যান্য প্রতিষ্টান ও সংগঠন এগিয়ে আসলে আমদানী-রপ্তানী স্বাভাবিক থাকবে।
ডিজিএফআই’র কমান্ডার বিগ্র্রেডিয়ার জেনারেল কবীর আহাম্মদ বলেন, ক্রান্তিলগ্নে দেশের অর্থনীতির প্রাণ চট্টগ্রাম বন্দর সচল রাখতে সংশ্লিষ্টদেরকে আরো আন্তরিক হতে হবে। বন্দর যাতে অচল না হয় সে ব্যাপারে সময়োপযোগী পদক্ষেপের বিকল্প নেই।
কাস্টম কমিশনার এম.ফখরুল আলম বলেন, রফতানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। বিলাসবহুল বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি ছাড়ে কিছুটা বিধি নিষেধ আছে। কিন্তু নিত্যপণ্য, ফল, শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি, কৃষি উপকরণ ছাড় হচ্ছে। এখন প্রতিদিন ১ হাজারের বেশি ডকুমেন্ট সাবমিট হচ্ছে। বন্ডের পণ্য খালাস করে সুবিধামতো জায়গায় বড় ঝুঁকি দেখি না। কাস্টম হাউস সার্বক্ষণিক খোলা। ব্যাংক বিকেল ৩-৪টা পর্যন্ত খোলা রাখলে আমদানিকারকদের সুবিধা হবে। বন্দরের জট কমাতে আমদানিকারককে এগিয়ে আসতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম বলেন, করোনা ভাইরাসের মতো বিশ্ব দুর্যোগের বিষয়ে আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলো না। ৯৮ শতাংশ কনটেইনার ট্রেড ও ৯২ শতাংশ কার্গো হ্যান্ডেল করে চট্টগ্রাম বন্দর। শিপিং এজেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, কাস্টম, রেলওয়ে, অফডকসহ ২০-২৫ ধরনের স্টেক হোল্ডার রয়েছে বন্দরের। বন্দরে দিনে ৪ হাজার কাভার্ড ডেলিভারির জন্য ঢুকে। এখন করোনা পরিস্থিতিতে ডেলিভারি কমে গেছে।
তিনি বলেন, কমলাপুর, পানগাঁও থেকে ডেলিভারি বাড়লে সেখানে বন্দর থেকে কনটেইনার পাঠানো যাবে। এসএপিএলের কনটেইনার ফাঁকা আছে, কাস্টম অ্যালাউ করলে সেখানে কনটেইনার পাঠানো যাবে। বন্দর সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের ২৪ ঘণ্টা বা পূর্ণ দিবস খোলা রাখতে হবে।
সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) এসএম মোস্তাক আহমদ খান বলেন, বন্দরের কাজে নিয়োজিতদের চলাচলে সহযোগিতা করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যেকোনো সমস্যায় পড়লে আমাদের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করতে পারেন।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, আমদানি রফতানির জন্য ব্যাংক ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখতে হবে। আমাদের পে অর্ডার নিতে হয়। আমদানি ডেলিভারি বাড়াতে হবে। রেফার কনটেইনার দ্রুত ডেলিভারি নিতে হবে। বন্দরকে গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া যায় না।
বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে ইকরাম চৌধুরী বলেন, শ্রমিকদের মজুরিসহ স্থির খরচ ঠিক থাকলেও কনটেইনার ডেলিভারি কমে যাওয়ায় জাহাজ থেকে পর্যাপ্ত কনটেইনার তুলতে বা নামাতে পারছি না। যেকোনো মূল্যে বন্দরের ডেলিভারি স্বাভাবিক করতে হবে।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বন্দর সম্পাদক লিয়াকত আলী হাওলাদার বলেন, সরকারি কর্মকর্তা যদি বন্দরে যাওয়া রিস্কি মনে করেন তাহলে ডেলিভারি কীভাবে হবে? ব্যাংক, শিপিং এজেন্ট বেশি সময় খোলা রাখতে হবে।
বন্দরের স্টোর রেন্টের মতো শিপিং এজেন্টের ডেমারেজ চার্জ মওকুফ, বেসরকারি আইসিডি ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার দাবি জানান বিজিএমইএর পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ।
বিকডার সচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ১৯টি অফডকে ৩৭ ধরনের পণ্য হ্যান্ডেল হয়। রফতানি ২০ শতাংশে নেমেছে। সরকারের অনুমোদন পেলে আইসিডিতে নতুন পণ্যের ১৫ হাজার কন্টেইনার রাখা যাবে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আ্জাদের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সমন্বয় সভায় সভায় বক্তব্য রাখেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শেখ মোঃ আবুল কালাম আজাদ, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা, ডিজিএফআই’র কমান্ডার বিগ্র্রেডিয়ার জেনারেল কবীর আহাম্মদ, কাস্টম কমিশনার এম.ফখরুল আলম, বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন, সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) এসএম মোস্তাক আহমদ খান, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর, পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ ইকবাল হোসেন, বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে ইকরাম চৌধুরী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বন্দর সম্পাদক লিয়াকত আলী হাওলাদার, বিকডার সচিব রুহুল আমিন সিকদার, বন্দরের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) কমডোর শফিউল বারী, বিকেএমইএর আঞ্চলিক প্রধান শওকত ওসমান, বিজিএমই’র পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ, চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন আজাদ, সোনালী ব্যাংকের জিএম মোঃ সাইফুর রহমান, বাফার পরিচালক খায়রুল আলম সুজন, পরমাণু শক্তি কমিশনের পরিচালক ড. শাহাদাত হোসেন, সমুদ্রবন্দর প্ল্যান্ট কোয়ারেন্টাইন স্টেশনের উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান বুলবুল, বিএসটিআই পরিচালক মো. সেলিম রেজা, কোস্ট গার্ডের প্রতিনিধি লে.কমান্ডার সাইফুল ইসলাম, বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার উর্থি, প্রাইমমুভার টেইলর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ জামাল রশীদ, সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক প্রমূখ।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসককে বদলিজনিত ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাব কর্মময় জীবনে জেলাবাসীর পাশাপাশি সাংবাদিকরাও অনেক সাহায্য করেছেন —–মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান জেলা প্রশাসক হিসেবে তিনি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা শক্তহাতে সমাধান করেছেন —-এ কে এম মকছুদ আহমেদ

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930