॥ আলহাজ্ব এ,কে,এম মকছুদ আহমেদ ॥ তিন পার্বত্য জেলা (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দবরান) দিন দিন করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাঙ্গামাটি জেলাবাসীর মাঝে আতংক বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধিও সাথে সাথে রাঙ্গামাটি জেলায় কার কার শরীওে এই ঘাতক রোগ বাসা বেধেছে তা কেউ বলতে পারছে না। তাই জনগনের পক্ষ থেকে রাঙ্গামাটিতে আরো বেশী করোনা পরীক্ষার মাধ্যমে রাঙ্গামাটি জেলার করোনার চেইন ভেঙ্গে দেয়ার দাবী উঠেছে। এই চেইন ভাঙ্গতে রাঙ্গামাটি সহ তিন পার্বত্য জেলার বেশী বেশী মানুষের নমুনা পরীক্ষা করার জন্য পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবী জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। প্লেকার্ড হাতে নিয়ে সাধারণ মানুষ নিজ নিজ বাড়ী থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট করছে। সরকারের কাছে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য জোর দাবী জানাচ্ছিন। পুরো চট্টগ্রাম বিভাগের নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়ে চট্টগ্রাম জেলার তিনটি পিসিআর ল্যাবে হিমসিম খাচ্ছে। তাই নমুনা পাঠানোর ৭ থেকে ৯ দিন পর নমুনার ফলাফল পাওয়া যাওয়ায় যাদের পজেটিভ আসছে তারা আরো কতোজনকে আক্রান্ত করেছে তাই কেউ বলতে পারছে না। এই অবস্থায় তিন পার্বত্য জেলার একমাত্র মেডিকেল কলেজ রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করার দাবী উঠেছে। এছাড়াও রাঙ্গামাটি সদও হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনের জন্য জোর দাবী জানিয়েছেন তারা।
রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাব স্থাপন করে তিন পার্বত্য জেলার নমুনা গুলো পরীক্ষার মাধ্যমে রোগী সনাক্ত করে করোনার যে লুকিয়ে থাকা করোনা রোগীদের সনাক্ত করার দাবী জানান। চিকিৎসা সহায়তায় এখনো পর্যন্ত যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের কোন লক্ষণ নেই। লক্ষণ ছাড়াই করোনা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। কার শরীরে এই ঘাতক ব্যাধিক আক্রমন করেছে কেউ তা বলতে পারছে না। তাই বেশী বেশী করে নমুনা পরীক্ষা করো লুকিয়ে থাকা রোগীদের সনাক্ত করে চিকিৎসা সেবার আওতায় নিয়ে আসার দাবী জানান। গত ৮ মে দৈনিক গিরিদর্পণ পত্রিকায় রাঙ্গামাটি জেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপনের সংবাদ প্রকাশের পর রাঙ্গামাটি জেলা সহ তিন পার্বত্য জেলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবী উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই দাবী আরো জোরালো করতে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন সহ তিন পার্বত্য জেলায় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের কাছে রাঙ্গামাটি জেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপন ও রাঙ্গামাটি হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপন করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে দাবী জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালের আর এমও ডাঃ শওকত আকবর জানান, রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে প্রথম নার্স আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে আরো বেশ কয়েকজন সনাক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, কোন একজন রোগী তার পরিচয় গোপন করে রাঙ্গামাটি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়ে গিয়েছে বলে তিনি ধারণা কওে বলেন, ঐ রোগীই আমাদের ডাক্তার ও নার্সদের আক্রান্ত করেছে। আমরা জোর করে জোর করে নার্স ও ডাক্তারদের নমুনা পরীক্ষার করানোর জন্য চাপ দিয়েই নমুনা পরীক্ষা করিয়ে অনেক সনাক্ত হয়েছে। এই অবস্থায় রাঙ্গামাটি জেলা আরো কতোজন রোগী আছে তা আমরা বলতে পারছি না। তিনি বলেন, আরো বেশী বেশী করে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করোনা দরকার বলে তিনি মনে করেন।
দেশের করোনা সনাক্ত ও নমুনা পরীক্ষার ধীর গতির কারণে দেশের করোনা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোন রোগীর নমুনা নেয়ার হওয়ার ৭ থেকে ৮ দিন পর রিপোর্ট পজেটিভ আসার পর স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন নড়ে চড়ে বসে। রোগী সনাক্ত হওযার পর ঘটা করে এলাকা লক ডাউন ও রোগীদের আবারো নমুনা পরীক্ষা করানোর চেষ্টা চলে। এই অবস্থায় পজেটিভ এই রোগী দীর্ঘ এই ৭ থেকে ৮ দিন কোথায় কোথায় গেছে কোথায় চিকিৎসা সেবা নিয়েছে, কার কার সাথে কথা বলেছে তার কোন সদ উত্তর কেউ দিতে পারছে না। এই অবস্থায় পুরো রাঙ্গামাটিবাসীর মাঝে আতংক বিরাজ করছে। রাঙ্গামাটি সহ তিন পার্বত্য জেলায় করোনা রোগী সনাক্ত করতে পিসিআর মেশিন ও উন্নত মানের কিট আনার দাবী উঠেছে।
রাঙ্গামাটি সচেতন মহল মনে করেন দেশের অর্থনীতিতে স্বাস্থ্য বিভাগ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা ব্যায় করলেও সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষায় প্রতিটি জেলায় জেলায় পিসিআর মেশিন স্থাপনের মাধ্যমে জনগনের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত ও দ্রুত করোনা রোগীদের সনাক্ত করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জানানো হয়েছে।
রাঙ্গামাটির কয়েকজন সচেতন মহল তাদের বক্তব্যে বলেন, একটি করোনা সনাক্ত করতে যদি ৭ দিন লাগে তাহলে তাদের এই ৭ দিন কোথায় রাখা হবে সেই বিষয় নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগকে ভাবতে হবে। যাদের নমুনা পরীক্ষা করা হবে তাদেরকে ৭ দিন পর্যন্ত আইসোলেশন অথবা প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টইন এবং হোম কোয়ারেন্টইনে রেখে তাদের নজরদারীতে রাখতে হবে। তারা যাতে কোথাও বের হতে না পারো যাতে অ কোন নতুন রোগী আক্রান্তের কারণ না হয় সেই দিকে ভাবতে হবে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগকে।
রাঙ্গামাটি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের হাতে হস্তান্তরিত বিভাগ। তাই রাঙ্গামাটির সর্বস্তরের জনগন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে তিন পার্বত্য জেলা হাসপাতাল গুলোতে পিসিআর মেশিন স্থাপনের জন্য দাবী জানান। পার্বত্য অঞ্চলের জন্য বরাদ্ধ কৃত অর্থ থেকে তিন পার্বত্য জেলায় পিসিআর মেশিন ও উন্নত মানের কীট সংগ্রহ সহ অভিজ্ঞ স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগ দেয়ার আহবান জানান।
রাঙ্গামাটি জেলার বেশ কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের মন্তব্যে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ পুরোপুরি চেষ্টা করলেও দীর্ঘসুত্রিতার কারণে মানুুষের মাঝে আতংক ছড়াচ্ছে। রাঙ্গামাটি হাসপাতালে পিসিআর মেশিন না থাকায় সনাক্ত করা যাচ্ছে করোনা রোগী। রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে পিসিআর মেশিন স্থাপনের ও দাবী জানান।