॥ ডেস্ক রিপোর্ট ॥ বিদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে অভিবাসনের সঙ্গে জড়িতদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (৬ জানুয়ারী) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০২০ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “আমি অনুরোধ করব, শ্রমিক অভিবাসনের সঙ্গে যারা জড়িত, বিশেষ করে রিক্রুটিং এজেন্ট থেকে শুরু করে আমাদের মন্ত্রণালয়, এদেশের মানুষ কিন্তু মানুষ। সেইভাবে তাদের মর্যাদা দিতে হবে। তাদের যেন কোনো রকম সমস্যা না হয়।
“যারা বিদেশে যেতে চায় তাদের কর্মসংস্থান ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, তাদের নিরাপত্তা ঠিকমতো আছে কিনা, বিশেষ করে আমাদের মেয়েরা যারা যায়, তাদের নিরাপত্তার বিষয়টা সকলকেই লক্ষ্য রাখতে হবে। সেজন্য এক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যারা কর্মরত বা বিদেশে কর্মী প্রেরণে যে সমস্ত সংগঠনগুলো আছে, তাদেরকে আমি অনুরোধ করব আপনাদেরকে দায়িত্বশীলতার ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ দায়িত্বটা আপনাদের উপরে বর্তায়।”
বিদেশে গেলে অনেক অর্থ উপার্জন করা যাবে, কিছু মানুষের এমন প্রবণতার কথা উল্লেখ করে বিদেশ যাওয়ার সময় অনেকে দালালদের খপ্পরে পড়ে অন্ধকার পথে পা বাড়ায় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “সেখানে আমি তাদেরকে বলব, আপনারা এই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হবেন না। দালালদের খপ্পরে পড়বেন না। আমরা সমগ্র বাংলাদেশে যে ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি তারই মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধন করার সুযোগ আছে। আর এই নিবন্ধিত যারা যেখানেই কাজের সুযোগ হবে তাদেরকে সেখানে প্রেরণ করা হয়। কাজেই সেজন্য ধৈর্য ধরতে হবে।
“কিন্তু যদি আপনারা কারো প্ররোচনায় বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়েন সেটা নিজেদের জন্য, পরিবারের জন্য খুবই কষ্টকর, খুবই ক্ষতিকর। কিছুদিন আগে আপনারা জানেন যে, লিবিয়ায় কতজনকে জীবন দিতে হল। এই পরিস্থিতির শিকার যেন আমার দেশের মানুষকে হতে না হয়।”
তিনি বলেন, “এখন আমাদের দেশে কাজেরও যেমন অভাব নেই, খাবারেরও অভাব নেই আল্লাহর রহমতে। কাজেই এখন আর সোনার হরিণের পেছনে কেউ দয়া করে অন্ধের মতো ছুটবেন না। আপনারা নিবন্ধন করে তার মাধ্যমে যান, সেটাই আমরা চাই।”
প্রবাসী কর্মীদের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন সরকার প্রধান।
করোনা ভাইরাস মহামারীর মধ্যে দেশে ফিরে আসা প্রবাসীদের কল্যাণে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তাদের হতাশ না হয়ে নিজের দেশে কাজ করতে এবং প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগেরও আহ্বান জানান তিনি।
প্রবাসীদের সবরকম সুযোগ-সুবিধা দিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখা ও রিজার্ভ বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রবাসীদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “যারা অভিবাসী রয়েছেন, দীর্ঘদিন বিদেশে আছেন, তারা দেশে বিনিয়োগ করতে পারেন। বিনিয়োগের ব্যাপক সুযোগৃডিজিটাল ডিভাইস তৈরি করা বা ডিজিটাল যেকোনো ইকুইপমেন্টস তৈরি করা বা বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদেশিরা যেমন আসছেন, আমাদের প্রবাসীরাও কিন্তু আজকে দেশে এসে বিনিয়োগ করতে পারেন।”
প্রবাসীদের জন্য তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিভিন্নভাবে আমরা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি।”
রেমিটেন্স পাঠানোর খরচ কমিয়ে দুই শতাংশ করে সেখানে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার কথা জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, “ফলে বৈধ পথে পাঠালে টাকাটা সরাসরি আসবে।”
দেশে অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা পাঠানো সহজ করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
“বিনিয়োগ যারা করবেন তাদেরও অর্থ আনা-নেওয়া এটাও সহজ করে দেওয়া হয়েছে,” বলেন শেখ হাসিনা।
সরকারের পক্ষ থেকে ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যারা বিদেশে যাবেন, প্রবাসে যাবেন আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, সমগ্র বাংলাদেশে ডিজিটাল সেন্টার। সেখানে তারা নিবন্ধন করতে পারেন।
“আর এই ব্যাংকের থেকে তাদের যখন একটা চাকরি হবে, তারা যাবেন। কোথায় চাকরি হচ্ছে, সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা, সঠিক বেতন পাবেন কিনা তাদের সেই নিরাপত্তার বিষয়টা দেখা। পাশপাশি তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে। খুব স্বল্প সুদে তাদের ঋণ দেওয়া হয়। জমিজমা বিক্রি বা বন্ধক রাখা লাগবে না।”
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকার প্রণোদনা দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই বিশেষ ব্যাংকের জন্যও আলাদা ৫০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে, ২০০ কোটি টাকা ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ৫০০ কোটি টাকাসহ প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি, যাতে করে প্রবাসীরা কোনো রকম সমস্যায় না পড়ে।”
প্রবাসে যারা কাজ হারিয়েছেন তাদের আর্থিক সাহয্য দেওয়া হয়েছে আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের ফেরত আনতেও সরকার বিশেষ বিমান পাঠিয়েছে বলেও জানান তিনি।
যারা বিদেশে যাবেন তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে সরকার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সবাই যদি একটু ট্রেনিং নিয়ে দক্ষতা অর্জন করে বিদেশে যান, তাহলে অর্থ বেশি উপার্জন করতে পারবেন আবার নিজেদের চাকরির নিরাপত্তাটাও থাকবে। সেই দিকটায় আপেনাদের বিশেষ করে দৃষ্টি দিতে হবে।”
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে এই সময় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।