॥ ঝুলন দত্ত কাপ্তাই ॥ পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ দিনের রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষ বন্ধে জনমত গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন পাহাড়ের চারন সাংবাদিক দৈনিক গিরিদর্পণ সম্পাদক একেএম মকছুদ আহমেদ। আর তার লিখনির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্বত্র শান্তি আনয়নে বিশাল জনমত গঠন হয়েছিল। আর সে সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পাদন করে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাই পাহাড়ে সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য একেএম মকছুদ আহম্মেদকে একুশে পদক দেওয়ার দাবি জানান।
মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারী) সকালে রাজস্থলী উপজেলা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত দৈনিক গিরিদর্পনের সম্পাদক চারণ সাংবাদিক একেএম মকছুদ আহম্মেদ এর সাংবাদিকতায় ৫০ বছর পূর্তিতে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
রাজস্থলী উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে রাজস্থলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শেখ ছাদেক সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাজস্থলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উবাচ মারমা। গেষ্ট অব অনার রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সদস্য নিউচিং মারমা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আল হক, রাজস্থলী উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান অংনুচিং মারমা, উচসিন মারমা, রাজস্থলী থানার ভাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মফজল আহাম্মদ খান, রাজস্হলী তাইতং পাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ। অনুষ্টান সঞ্চালনায় ছিলেন, রাজস্থলী প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোঃ আজগর আলী খান এবং কাপ্তাই প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক ঝুলন দত্ত ।
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে রাজস্থলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ ছাদেক বলেন, বর্তমান প্রজন্মে যারা সাংবাদিকতা করছেন তারা একেএম মকছুদ আহম্মেদের আদর্শকে অনুসরণ করলে উন্নতির চরম শিকড়ে পৌঁছতে পারবে। তিনি রাজস্থলী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে সাংবাদিকতায় ৫০ বছর পূর্তি হওয়ায় একেএম মকছুদ আহম্মেদকে অভিনন্দন জানান।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজস্থলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উবাচ মারমা বলেন, যে আদর্শ এবং নীতি নিয়ে একেএম মকছুদ আহম্মেদ সাংবাদিকতা করে আসছেন তা অনুসরণ করলে এ প্রজন্মের সংবাদকর্মীরা লাভবান হবেন, কারন তিনি কখনও ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দেইনি।
সংবর্ধিত গুণীজন এ কে এম মকছুদ আহমেদ বলেন, এমন কোন সংবাদ পরিবেশন করবেন না, যাতে করে পাঠক আহত না হয়। প্রকৃত একজন সংবাদকর্মী তিনি যিনি সৎ, নীতিবান এবং আর্দশবান হয়ে মানুষের সেবায় নিয়োজিত হয়ে মানুষের হাসি, কান্না, এলাকার সমস্যা ও সমাধানের পথ দেখিয়ে দেন। তিনি এলাকার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সত্যের পথে এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানের গেস্ট অপ অনার জেলা পরিষদ সদস্য নিউচিং মারমা বলেন, আমরা যখন সেই ছোটবেলা হতে রাজনীতির সাথে জড়িত হয়েছি, তখন হতে মকছুদ ভাইকে চিনি। তাঁর লেখনিতে এই অঞ্চলের সমস্যা, সম্ভাবনা উঠে এসেছে বহুবার। আর তার এই লেখনির কারণে পাহাড়ে অনেক উন্নয়ন তরান্বিত হয়েছে। তাই রাজস্থলী প্রেস ক্লাব এই গুণি ব্যক্তিকে সংবর্ধনা দেয়ায় তাদের সাধু বাদ জানাই।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাঙ্গামাটি প্রেসক্লাব সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন, রাস্তাঘাট উন্নয়ন এবং এই এলাকার পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে একেএম মকছুদ আহম্মেদের লেখনী সরকারের দৃষ্টিগোচর হয়েছে বলে আজ শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নসহ পাহাড়ের উন্নয়নের ধারা একখনো চলমান রয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আল হক বলেন, নানিয়াচর উপজেলার চেঙ্গী নদীর উপরে যে ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে সেটার স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন এ কে এম মকছুদ আহমেদ। তিনি জাতীয় এবং স্থানীয় পত্রিকার মাধ্যমে অনেকবার এই বিষয়ে লেখা লেখি করে গেছেন। এখনো তিনি এলাকার বিভিন্ন সমস্যা, মানুষের সুখ দুঃখের কথা লিখে যাচ্ছেন।
রাজস্থলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মফজল আহমদ খান বলেন, সাংবাদিকতা জগতে এ কে এম মকছুদ আহমেদ এর মতো ব্যক্তিত্ব খুব কম জন্মায়, যিনি তাঁর আদর্শ, সততা এবং সত্য প্রকাশের মাধ্যমে এই জগতটা পবিত্র করে রেখেছে। তাই এই গুণি ব্যক্তিকে সবাই মনে রাখবে চিরদিন ধরে।
রাজস্থলী তাইতং পাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, দৈনিক গিরিদর্পন এবং এ কে এম মকছুদ আহমেদ একই সুত্রে গাঁথা। এই অঞ্চলের সু –প্রাচীন এই দৈনিক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি এই অঞ্চলের সংবাদপত্র জগতকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তার হাত ধরে এই অঞ্চলের অনেক সংবাদকর্মী সৃষ্টি হয়েছে।
পরে রাজস্থলী প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে দৈনিক গিরিদর্পনের সম্পাদক চারণ সাংবাদিক একেএম মকছুদ আহম্মেদ এর সাংবাদিকতায় ৫০ বছর পূর্তিতে সম্মাননা প্রদানসহ প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিদেরও সম্মাননা তুলে দেন রাজস্থলী প্রেস ক্লাবের সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্যরা।