॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ খাদ্য মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এমপি বলেছেন, একেএম মকছুদ আহমেদ ৫০ বছর ধরে সাংবাদিকতা ও ৩৮বছর ধরে পত্রিকা প্রকাশ করছে এটি একটি বিরল ব্যাপার। তিনি বলেন, এ ৩৮বছরে একটি দিনের জন্য তিনি পত্রিকা বন্ধ করে নাই। যা চারটি খানি কথা নয়। তাকে আরও বড় সম্মানে ভুষিত করা উচিত। তাই আগামীতে তাকে একুশে পদক দেওয়ার বিষয়ে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে চারণ সাংবাদিক দৈনিক গিরিদর্পণ পত্রিকার সম্পাদক আলহাজ্ব এ কে এম মকছুদ আহমেদ এর সাংবাদিকতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৫ গুণীজন সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দীপংকর তালুকদার এমপি, এসব কথা বলেন।
শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারী) বিকালে রাঙ্গামাটি চেম্বার অব কমার্স এর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আলম নিজামী, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ, পুলিশ সুপার মীর মোদ্্দাছ্ছের হোসেন, সাবেক মহিলা এমপি ফিরোজা বেগম চিনু, রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামলীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়াম্যান শহীদুজ্জামান মহসিন রোমান, খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সভাপতি জিতেন বড়ুয়া, বিটিভি লোক লোকালয় অনুষ্ঠানের সংগঠক-গবেষক ও অরণ্য বার্তা পত্রিকার সম্পাদক চৌধুরী আতাউর রহমান রানা, রাঙ্গামাটি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ, সদও উপজেলা পরিষদ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন ইসলাম, খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ আবু তাহের মোহাম্মদ’সহ গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গরা।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আল হক।
অনুষ্ঠানে দীপংকর তালুকদার এমপি আরো বলেন, আমারও এক সময় ইচ্ছে ছিলো পার্বত্য সংবাদ নামে একটি পত্রিকা বের করবো। পত্রিকার অফিস হলো ডিকলারেশন হলো। পত্রিকার সব ধরনের ফরমালিটি হলো। কিন্তু পত্রিকা ছাপানোর সাহস আমার কুলালোনা। যার কারনে পার্বত্য সংবাদ আর দিনের আলোর মুখ দেখেনি। যেখানে একটি পত্রিকা বের করার মতো সাহস আমার ছিলোনা সেখানে মকছুদ ভাই ৩৮বছর ধরে পত্রিকা বের করছে এবং একটি দিনের জন্য পত্রিকা বন্ধ করে নাই। যা চারটি খানি কথা নয় একটি বিরল ব্যাপার। আর এ ধরনের সম্মাননা অনুষ্ঠানে থাকতে পারাটা সৌভাগ্যের বিষয়। তিনি বলেন, আমাদের দেশে রাজনীতির সংস্কৃতি বা অপসংস্কৃতি বলি বিভিন্ন দলের রাজনীতি নেতাদের প্রায়শই দেখা যায় তারা সাংবাদিকদের বিভিন্ন ভাবে নানা ধরনের নাজেহাল ও শারীরিক নির্যাতন করার খবরও আমরা পত্র পত্রিকায় দেখতে পাই। সেক্ষেত্রে মকছুদ ভাই ৩৮ বছর ধরে পত্রিকা বের করছেন ৫০বছর ধরে সাংবাদিকতা করছেন কিন্তু এখনো একটা দিনের জন্য কোন রাজনীতি নেতা বলতে পারে নাই মকছুদ ভাই এটা লিখছেন কেন। আমরা কখন এটা করছি । এই ধরনের কথা বলার সুযোগও এখনো আমার হয়নি। এখনো পর্যন্ত তার সাথে আমাদের মধুর সম্পর্ক রয়েছে এবং থাকবে। তিনি আরো বলেন, রাজনীতি নেতাদের সাথে সংবাদপত্রের সাংবাদিকদের একটা টানাপোড়ন বা মধুর সম্পর্ক থাকে। বলা হয় নির্ভিক সাংবাদিকদের কোন বন্ধু থাকেনা। আমার পক্ষে লিখলে বন্ধু আমার বিপক্ষে লিখলে শত্রু। কিন্তু মকছুদ ভাই নির্ভিক সাংবাদিকতা করে চলেছে।
তিনি একুশে পদকের বিষয়ে বলেন, অনেকেই মকছুদ ভাইকে একুশে পদক দেওয়ার দাবী করেছেন এবং তাদের দাবীটি যৌত্তিক ও মকছুদ ভাই পাওয়ার যোগ্য বলে আমি মনে করি। কিন্তু যেহেতু এ বছর একুশে পদক দেয়া হয়ে গেছে এবং দেশের শত শত সাংবাদিকদের মধ্যে শুধু একজনকেই দেয়া হয় তাই আগামী বছর মকছুদ ভাইকে দেওয়ার জন্য বিষয়ে আমরা চেষ্টা করবো। তিনি বলেন, একুশে পদকের সাংবাদিকদের জন্য ২টি বাক থাকা উচিত একটি হলো সাংবাদিক আরেকটি হলো মফস্বলের সাংবাদিক। তাই আমি মনে করি মফস্বলের সাংবাদিকদর যদি দেওয়া হয় মকছুদ ভাই নিশ্চিত ভাবে পাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, মানুষের তিপ্তি এক এক রকম কেউ খেয়ে আনন্দ পান কেউ খাওয়ানের আনন্দ পান। তিন পার্বত্য জেলার অনেক পথিতযশা সাংবাদিক এখন জাতীয় পত্রিকা ও চ্যানেলে কাজ করছে এবং তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাংবাদিকরাই হচ্ছে এই গিরিদর্পন ও বনভুমি পত্রিকার।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আলম নিজামী বলেন, গুনীজনদের সম্মান না করলে গুনী লোক জন্মায় না। তাই প্রেস ক্লাবের এ ধরনের উদ্দ্যেগ সত্যিই প্রসংসনীয়। তিনি বলেন, মানুষ সম্মান পাই তার মেধা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে যখন ভালো কাজ করে। এই গুনী লোকগুলোও ভালো করেছে যার কারনে আজ তারা সম্মানে ভুষিত হয়েছে।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ বলেন, মফস্বলে সাংবাদিকতা করাটা কষ্টের হলেও মকছুদ ভাই শত কষ্ট ও বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে ৫০ বছর ধরে সাংবাদিকতা করার পাশাপাশি ৩৮বছর ধরে পত্রিকা প্রকাশ করে যাচ্ছে এটি সত্যিই বিরল। আর এই গুনীজনদের সম্মাননা দিয়ে প্রেসক্লাব যথার্থই করেছে। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সাথে আমার একটা নীবিড় সম্পর্ক রয়েছে। যার ফলে দ্রুত এ জেলার উন্নয়ন, সম্ভবনা, দুর্ঘটনা’সহ বিভিন্ন সংবাদগুলো আমি সহজেই জানতে পারি। তাদের সহযোগীতা আমি সবসময় মনে রাখবো।
সম্মাননাপ্রাপ্ত আলহাজ¦ একেএম মকছুদ আহমেদ বলেন, আমার পত্রিকায় লেখালেখি করে মংছেইন রাখাইন একুশে পদক পেয়েছে শোভা ত্রিপুরা বেগম রোকেয়া পদক পেয়েছে এটাই আমার বড় জন্য তিপ্তি। তিনি বলেন, আমার লেখনীর মাধ্যমে আমি সবসময় চেষ্টা করেছি পার্বত্য জেলায় শান্তি বিরাজ করুক। কোন ঘটনাকে কারো পক্ষ হয়ে লেখার চেষ্টা আমি করেনি। এখানকার সম্ভবনাগুলোকে তুলে ধরার কারণে আজ পার্বত্য জেলায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তিনি গুনীজনদের সম্মাননা প্রদান করায় প্রেস ক্লাবকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এর আগে সুর নিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মনোজ বাহাদুর গুর্খা তার শিল্পীদের নিয়ে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভরাম্ভ করে পরে প্রেস ক্লাবের সদস্যরা আগত অতিথি ও সম্মাননাপ্রাপ্তদের মাঝে ফুল ও উত্তরী দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করে শেষে সম্মাননাপ্রাপ্তদের হাতে সম্মাননা ক্রেষ্ট তুলে দেন অতিথিরা।
অন্য গুনীজনরা হলেন, প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য ও কেডিএস গার্মেন্টস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খলিলুর রহমান, প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য ও সাবেক রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রয়াত পারিজাত কুসুম চাকমা (মরণোত্তর), প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য ও দৈনিক আজাদীর সাবেক চীফ রিপোর্টার মরহুম সাংবাদিক ওবায়দুল হক (মরেণোত্তর) ও প্রেস ক্লাবের শুভাকাঙ্খী ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চিংকিউ রোয়াজা।