॥ বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বান্দরবান পার্বত্য জেলার বাসিন্দাদের জমি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত দলিল নিবন্ধন ও নামজারী কার্যক্রমে সার্কেল চিফ কর্তৃক ইস্যুকৃত স্থায়ী বাসিন্দা সনদ এবং হেডম্যান প্রতিবেদন দাখিলের আইন বহিভুর্ত নিয়ম বাতিলের দাবী জানিয়ে ডেপুটি কমিশনার বান্দরবান বরাবর আবেদন করেছেন দুই আইনজীবী। গত বৃহস্পতিবার (১৫ আগষ্ট) আবেদনটি দাখিল করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষে বান্দরবান জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এডভোকেট আবু জাফর ও এডভোকেট মো. শাহজাহান। লিখিত আবেদনে আইনজীবীদ্ধয় জানান, তারা পার্বত্য জেলায় স্থায়ী বাসিন্দা ও বাংলাদেশের নাগরিক। পেশায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা দায়রা জজ আদালতে কর্মরত রয়েছেন।
‘দ্যা চিটাগাং হিলট্রেক্টস রেজিষ্ট্রেশন ১৯০০ এর ১৮(২) (সি)’নং বিধি অনুসারে সরকারের রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্তে বিধি প্রনয়ন করার অধিকারী এবং উক্ত বিধি অনুসারে প্রণিত রুলস ফর এডমিনিস্ট্রেশন অব দ্যা সিএইচটি এর ১২নং বিধি অনুসারে অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়, দান, বন্টন, বন্ধকী দলিল, অবস্থাবর সম্পত্তির লীজ দলিল, অবমুক্তির সার্টিফিকেট, স্টেট ও সম্পত্তির তত্বাবধায়ক নিয়োগ সংক্রান্ত দলিল সমুহের নিবন্ধন বাধ্যতামুলক। একই বিধিমালায় ১৭ বিধি অনুসারে কোন দলিলে অস্থাবর সম্পত্তির সুনির্দিষ্ট বিবরণ না থাকলে, উক্ত দলিল নিবন্ধন যোগ্য হয় না।
বর্ণিত বিধিমালায় সার্কেল চিফ এর সনদ কিংবা হেডম্যান প্রতিবেদন সংযুক্তির বিধান না থাকা স্বত্বেও বে-আইনী ভাবে ও অবৈধ ভাবে দলিল নিবন্ধন কার্যক্রমে ও নামজারী কার্যক্রমে সার্কেল চিফ কর্তৃক ইস্যুকৃত স্থায়ী বাসিন্দা সনদ ও হেডম্যান প্রতিবেদন সংযুক্ত করে জমা দিতে বলা হয়।
‘দ্যা চিটাগাং হিলট্রেক্টস রেজুলেশন ১৯০০ এর রুলস ফর দ্যা এডমিনিস্ট্রেশন অব দ্যা সিএইচটি এর ২৫নং বিধিতে দলিল নিবন্ধনের পুর্বে দলিল সম্পাদনকারীগণ’কে সনাক্ত করার বিধান রয়েছে। যা উক্ত বিধি প্রনয়নের সময় অর্থাথ ১৯০০ সালে কঠিন দুঃসাধ্য থাকলেও জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন ২০২৩ অনুয়ায়ী শতভাগ নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির পর উক্ত পরিচয়পত্রের মাধ্যমে সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া সহজতর হয়েছে।’
‘দ্যা চিটাগাং হিলট্রেক্টস রেজুলেশন ১৯০০ এর বিধান অনুযায়ী ১৯০০ সালে রুলস ফর দ্যা এডমিনিস্ট্রেশন অব দ্যা সিএইচটি প্রনয়নের সময় হইতে ২০০৮ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অধ্যাদেশ প্রনয়নের পুর্ববতী সময় পর্যন্ত বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাগরিকদের উক্ত জেলার বাসিন্দাদের সমর্থনে কোন দলিলপত্র ছিল না বিধায়, কাজের সুবিধার্থে বোমাং সার্কেল চিফের কাছ থেকে সনদপত্র ইস্যু করা হলেও ২০০৮ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অধ্যাদেশ মুলে নাগরিকদের আনুকুলে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ পুর্বক ছবিসহ জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করার উক্ত সনদপত্র আইনগত ভাবে অকার্যকর এবং অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। উক্ত বোমাং সার্কেল চিফের স্থায়ী বাসিন্দা সনদপত্র ইস্যু সংক্রান্ত একাধিক জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। উক্ত সনদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বান্দরবান জেলার নাগরিকদের আর্থিক এবং মানসিক হয়রানীর মুখোমুখি হতে হয়। এ রুপ পরিস্থিতিতে বোমাং সার্কেল চিফ সংক্রান্তে স্থানীয় জনগণের মধ্যে নেতিবাচক ধারনার সৃষ্টি হচ্ছে। যা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
‘বান্দরবান পার্বত্য জেলার প্রচলিত আইন ও বিধিতে সরাসরি সাফ কবলা দলিল সম্পাদনের ক্ষেত্রে কোন বাধা-নিষেধ না থাকলেও অজ্ঞাত কারণে সাফ দলিল নিবন্ধন করা হচ্ছেনা এবং বে-আইনী ভাবে ক্রেতা-বিক্রেতাগণকে বায়নানামা দলিল সম্পাদনে বাধ্য করা হচ্ছে। এর ফলে চিকিৎসার খরচসহ বা অন্যান্য ব্যক্তিগত প্রয়োজনে জমি বিক্রি করতে ইচ্ছুক জমি বিক্রেতাগণ অপুরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। কিছু ক্ষেত্রে অসাধু জমি বিক্রেতাগণ একাধিক ব্যক্তিকে বায়নানামা দলিল সম্পাদন করে দেওয়ায় ক্রেতাগণের মধ্যে দেওয়ানী ও ফৌজদারী বিরোধের সৃষ্টি হচ্ছে।’
‘১৯০০ সালে দ্যা চিটাগাং হিলট্রেক্টস রেজুলেশন ১৯০০ এর অধীনে রুলস ফর দ্যা এডমিনিস্ট্রেশন অব দ্যা সিএইচটি-এ জমির নামজারী সুনির্দিষ্ট বিধান নেই। ১৯৫০ সালের জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাতন্ত্র আইনের ১৪৩ ধারা অনুসারে বাংলাদেশে (তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তানে) নামজারীর কার্যক্রম শুরু হয়। উক্ত বিধান অনুসরণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা বান্দরবান পার্বত্য জেলায় নামজারীর কার্যক্রম চালু করা হলেও ক্রেতার স্থলে বিক্রেতাকে নামজারী কার্যক্রমে দরখাস্তকারী হিসাবে সম্পুর্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়, যা আইনসঙ্গত নয় এবং কষ্ট সাধ্যও বটে। জমি বিক্রয়ের পর বিক্রেতার স্বার্থ নি:শেষ হওয়ায় নামজারী কার্যক্রমে বিক্রেতার আগ্রহ কম থাকায় নামজারী কার্যক্রম দীর্ঘসুত্রিতায় পর্যবসিত হয়। উপরন্ত নামজারী কার্যক্রমে হেডম্যান প্রতিবেদন দাখিলের বিধান চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ নয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির কোন বিধান দ্বারা সমর্থিত নয়। এ রুপ অবস্থায় হেডম্যান প্রতিবেদনের অজুহাতে দরিদ্র ক্রেতা-বিক্রেতাগণ থেকে হেডম্যান কার্যালয়ের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ রশিদবিহীন অবৈধ অর্থ আদায় করছেন, যা চাঁদাবাজির শামিল।’
‘আবেদনে উপস্থাপিত তথ্যমতে নাগরিকদের জমি ক্রয়-বিক্রয় দলিল নিবন্ধন ও নামজারী কার্যক্রমে সার্কেল চিফ কর্তৃক ইস্যুকৃত স্থায়ী বাসিন্দা সনদ ও হেডম্যান প্রতিবেদন দাখিলের নিয়ম বাতিল পুর্বক আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট রেজিষ্ট্রেশন কর্মকর্তাগণ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তাদের প্রতি স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান পুর্বক আদেশ জারী করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।’
আবেদনকারী এডভোকেট মো. শাহজাহান বলেন, ডেপুটি কমিশনার বরাবর দাখিলকৃত আবেদনের কোন প্রতিকার না পেলে মহামান্য হাইকোর্টে রীট আবেদন দাখিল করবেন বলে জানান।