নির্মল বড়ুয়া মিলন ::
————————
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমূন্নত এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া তরান্বিত করা এবং বাংলাদেশের সকল নাগরিকের স্ব-স্ব অধিকার সংরক্ষন এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তরফ হইতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অধিবাসীদের পক্ষ হইতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি চারি খন্ড (ক,খ,গ,ঘ) সম্মিলিত ভাবে চুক্তি করা হয়। ১৯৯৭ সালে ২রা ডিসেম্বর সরকারের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির আহবায়ক আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ্ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মুল) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা সম্পাদিত এই চুক্তিতে সই করেন। ২রা ডিসেম্বর ২০২৩ সালে পার্বত্য চুক্তির ২৬ বছর পূর্ণ হয়েছে, যাকে বলা যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৬তম বর্ষপূর্তি । এই ২৬ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ কি-কি বৈষম্যের স্বীকার তা নিয়ে একটি পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। তাছাড়া পার্বত্য চুক্তি বা শান্তি চুক্তির ফলে ২৬ বছরে পাহাড়ের পাহাড়ি-বাঙ্গালীরা কি পেলেন আর কি হারালেন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা। পার্বত্য চুক্তির আলোকে গঠন করা হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি কমিশন, পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯ (রাঙামাটি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯, বান্দরবান পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯) এবং এর বিভিন্ন ধারা সমূহের পরিবর্তন, সংশোধন, সংযোজন ও অবলোপন করার মাধ্যমে গঠন করা হয় রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ।
এর আগে থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা প্রশাসন, তিন জেলার গুইমারাসহ ২৬ উপজেলার উপজেলা প্রশাসন, তিন পার্বত্য জেলার পৌরসভা ও তিন পার্বত্য জেলার ইউনিয়ন পরিষদ বিদ্যমান। পার্বত্য চুক্তির মধ্য দিয়ে শক্তিশালী করা হয় চাকমা সার্কেল, বোমাং সার্কেল ও মং সার্কেল চীফদের কার্যক্ষমতা। এর বাইরে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় এর অধিদপ্তর/পরিদপ্তর আওতাধীন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কার্যালয় রয়েছে। এছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে রয়েছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক এডিবির পার্বত্য চট্টগ্রাম পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প ও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সংস্থা। এর বাইরে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মূল্যায়ন কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তাকারী উপদেষ্টা কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটি ইত্যাদি। পার্বত্য চুক্তির প্রারম্ভে বেশ কিছু বিষয় গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, তন্মধ্যে সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমূন্নত এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে। চুক্তিতে পার্বত্য
চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমূন্নত এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া তরান্বিত করা এবং বাংলাদেশের সকল নাগরিকের স্ব-স্ব অধিকার সংরক্ষন এবং উন্নয়নের কথা থাকলেও কিন্তু কৌশলগত ভাবে পার্বত্য চুক্তির আগে এবং শতবছর ধরে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী বড়ুয়া, সাঁওতাল, অহমিয়া ও গুর্খা জনগোষ্ঠীর কথাও চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পার্বত্য চুক্তির পর থেকে প্রতিটি স্থরে এবং রাজনৈতিক ভাবে পার্বত্য অঞ্চল বসবাসরত এ সকল জনগোষ্ঠীর মানুষ প্রতি পদে পদে বৈষম্যের শিকার এবং বাঙ্গালী (মুসলামান), বড়ুয়া, তনচঙ্গা, সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, পাংখোয়া, লুসাই (মিজু), চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীকে পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎখাত করার সুদুর প্রসারী ষড়যন্ত্র চলছে। এ দিকে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনী ব্যবহার করে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত সংখ্যালঘুদের ভূমি কৌশলে কেড়ে নিয়ে এ অঞ্চল থেকে বিতারিত করার অঘোষিত নিয়ম চালু রয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং রাঙামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী বাঙ্গালী (মুসলমান), বড়ুয়া, তনচঙ্গা, সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, পাংখোয়া, লুসাই (মিজু), চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা সংরক্ষণ হাতে গোনা, পার্বত্য চুক্তির ২৬ বছরেও চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠির তুলনায় ইসলাম ধর্মের বাঙ্গালী, বড়ুয়া, তনচঙ্গা,সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, পাংখোয়া, লুসাই (মিজু), চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীর লোকজন ২৬ বছরে অনেক বেশী পিছিয়ে পড়েছে। কেউ মানুক বা না মানুক এটাই সত্য। পার্বত্য অঞ্চলের বসবাসরত অধিবাসীদের যে রাজনৈতিক অধিকার ছিল চুক্তির পর ২৬ বছরেও আদৌ তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছতে পারেনি তার মুল কারণ হচ্ছে : উগ্র সম্প্রদায়িকতা, বৈষম্য ও ক্ষমতার লোভ।
পার্বত্য অঞ্চলে ৯০% রাষ্ট্রিয় সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন তিনটি জনগোষ্ঠীর লোকজন বাকি ১০% বাঙ্গালী, বড়ুয়া, তনচঙ্গা, সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, পাংখোয়া, লুসাই (মিজু), চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীর লোকজন, বিশাল ধরনের বৈষম্যে এ অঞ্চলে চলমান। যার কারণে সহজ-সরল জনগোষ্ঠীর লোকজন ছোট-ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে। আগামীতে আরো কয়েকটি জনগোষ্ঠীর লোকজন অস্ত্র হাতে তুলে নিবেনা তার কোন নিশ্চয়তা নাই।
১৯৯৭ সালে ২রা ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির আহবায়ক আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ্ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মুল) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা সম্পাদিত এই চুক্তিতে সই করেন। তখন পাহাড়ে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ছিলো মাত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মুল)। অর্থাৎ মাত্র একটি আঞ্চলিক দল।
১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতি গত ২৬ বছরে অনেকটাই বদলে গেছে।
পার্বত্য চুক্তির এক বছরের মধ্যেই চুক্তির পক্ষের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস-মুল) সঙ্গে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মুল), রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হয়। ২০০৭ সালে পিসিজেএসএস-মুল ভেঙে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-সংস্কারপন্থি বা এমএন লারমা), নামের নতুন দল। ২০১৭ সালে খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি হয়। ওই বছরের ১৫ নভেম্বর তপন জ্যোতি চাকমার নেতৃত্বে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক নামের নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে এই চারটি উপ দল বা গ্রুপের বাইরেও আরও কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি)। এই দলের সদস্যদের অবস্থান বান্দরবানের গহিনে। ২০১৮ সালে এএলপি ভেঙে গঠিত হয় মগ পার্টি ও কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট ইত্যাদি। তাদের অবস্থানও বান্দরবানে। তবে এই তিন দলের অবস্থান শুধু বান্দরবানে, রাঙামাটি কিংবা খাগড়াছড়িতে এদের কোনো তৎপরতা নেই।
বাংলাদেশ সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হিসেবে বর্ণনা করলেও সংগঠনটির দাবি তারা বাংলাদেশের কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন নয়। একইসঙ্গে তারা জানিয়েছেন, তাদের ভাষায়, “সুবিধা বঞ্চিত কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর জন্যে স্বশাসিত বা পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ক্ষমতাসহ একটি ছোট রাজ্য” চাইলেও তারা কোন স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়নি।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানা গেছে, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট এর অস্ত্রধারী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির ভারতের মিজুরাম প্রদেশে ৩ হাজার অস্ত্রদারী সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির সদস্যদের র্যাব বাহিনী গ্রেফতার করে রাঙামাটি কারাগারে আটক করে রাখছেন। কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির সদস্যরা জামিনে ছাড়া পাওয়ার তথ্য নাই। এদের নিয়ে একটি মহলের ষড়যন্ত্র চলছে বলে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ধারনা।
এদিকে চলমান সংলাপ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইউপিডিএফ মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে সরকারের নিকট দলের ৮৭টি দাবিনামা পেশ করেছে।
গত ৯ জুন ২০২২ খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলাধীন ২ নং চেঙ্গী ইউনিয়নের বড়কলক এলাকায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান শান্তি জীবন চাকমাসহ স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিগণের উপস্থিতিতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল) এর পক্ষে দলের কেন্দ্রীয় সদস্য উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা মেজর (অবঃ) এমদাদুল ইসলামের কাছে এ দাবিনামা হস্তান্তর করেন।
উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা বলেছেন, গত শতকের ‘৭০, ৮০ দশকের পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে আজকের পার্বত্য চট্টগ্রামের বিস্তর ফারাক। কিন্তু তারপরও যেন কোন কোন মহলের দৃষ্টিভঙ্গি সেই আগের মতোই রয়ে গেছে। তারা ৭০, ৮০ দশকের চোখ দিয়ে বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেখতে চাইছেন এবং সেইভাবে মূল্যায়ন করছেন। কিন্তু এটা স্পষ্টতই ভুল। আমাদেরকে অবশ্যই এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। কারণ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এটা বলা যায় প্রথম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।’
মধ্যস্থতাকারীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর এমদাদুল ইসলাম তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন, তিনি ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিকট চুক্তি আকারে পেশকৃত ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল) এর দাবিনামা এবং তার যৌক্তিকতা’ সরকারের কাছে পৌঁছে দেবেন বলে জানান।২৭ আগষ্ট- ২০২৪ তারিখে পার্বত্য চুক্তি সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ।
পার্বত্য চুক্তির পর পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত স্ব-স্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক উন্নয়ন বৃদ্ধি পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু ২৬ বছর পর সামাজিক অধিকারের বিষয়ে বলতে গেলে বরঞ্চ সংঘাত, গুম, খুন হানাহানি আশংকাজনকভাবে বেড়েছে।
সরকার পার্বত্য অঞ্চলের পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে একজন নাগরিকের জন্মগত মৌলিক অধিকার ৫টির মধ্যে অন্যতম শিক্ষার অধিকার স্থানীয়দের হাতে ন্যস্ত করে পার্বত্যঞ্চলের বসবাসরত অধিবাসীদের শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার যে সুযোগ তৈরী করে দিয়েছে ২৬ বছর পর শিক্ষার মেরুদন্ডই ভেঙ্গে পড়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকায় গিয়ে দেখা যায় প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলিতে শিক্ষকদের উপস্থিতি নেই। একটি বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষক মিলে একজন বর্গা শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন, আর জেলা পরিষদ সমূহ ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে যাদের শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়ে থাকে তারা কখনো নিজেদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন না। তা ছাড়া বেশী ভাগ শিক্ষক ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ছেলে,মেয়ে,আত্ময়ী-স্বজন। পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষা খাতে যে বরাদ্ধ রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে ব্যয় করা হয় তা কেবল অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা সামগ্রী ক্রয়, শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ইত্যাদি বিষয়ে সীমাবদ্ধ।
॥কিন্তু এসবের সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীরা কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা পায়না।
একটি তথ্য দিলে বুঝতে আরো সহজ হবে পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষা বিভাগের দুরবস্থার বিষয়টি;
রাঙামাটির বরকল উপজেলার ৭নং শুকনাছড?ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয?ের প্রধান শিক্ষক মোসা: নাসরিন আক্তার দীর্ঘ ১২ (বার) মাস যাবৎ বিদ্যালয?ে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ স্থানীয় শুকনাছড?ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয?ের অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যদের প্রশ্ন প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তারের খুটির জোর কোথায়? এবিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, দুনীতি দমন কমিশন রাঙামাটি, রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও বরকল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় শিক্ষানুরাগিরা।
শুকনাছড?ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয?ের অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে বরকল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বরাবর লিখিতভাবে গত ০৩ সেপ্টেম্বর-২০২৩ তারিখ শুকনাছড?ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয?ের প্রধান শিক্ষক দীর্ঘ (১২) বার মাস যাবৎ বিদ্যালয?ে অনুপস্থিত ও আর্থিক হিসাব না দেয?ার অভিযোগ করেন।
প্রতিমাসে বিদ্যালয? পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে এম.আর-এ অনুপস্থিত দেয?া হলেও তিনি জালিয?াতি করে অফিসে এম.আর. জমা দেন। যা প্রমাণস্বরূপ শিক্ষক হাজিরার ফটোকপি সংযুক্তি দেয?া হয়। তাছাড?া, বিদ্যালয?ের এসএলআইপি, ক্ষুদ্রমেরামত ও বিভিন্ন জাতীয? উৎসবের আর্থিক হিসাব-নিকাশ না দিয?ে এসব অর্থ একাই আত্মসাৎ করে নিজ ব্যক্তিগত স্বার্থে ভোগ করার অভিযোগ রয়েছে। উল্লেখিত আর্থিক কার্যক্রমে আজও এলাকায? অনেক লোক দীর্ঘদিন পাওনাদার রয?েছেন। এধরনের পরিস্থিতিতে মোসা: নাসরিন আক্তার প্রধান শিক্ষক নিজে সুবিধা ভোগ করার লক্ষে শুকনাছড?ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয?ের অন্তর্ভূক্ত সকল সহকর্মী ও এলাকার সকলের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে বানোয?াট দোষারোপ করে যাচ্ছেন।
শুকনাছড?ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয?ের অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির অভিযোগ ৪জন শিক্ষক এর মধ্যে ৩জন নিয়মিত বিদ্যালয?ে উপস্থিত থাকলেও প্রধান শিক্ষক মোসা: নাসরিন আক্তার দীর্ঘদিন বিদ্যালয?ে অনুপস্থিত ও আর্থিক হিসাব না দেয?ার পরিপ্রেক্ষিতে একাডেমিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি যথাযথ যাচাই পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেন। শুকনাছড?ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয?ের অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির পক্ষে আবেদনকারীরা হলেন :
শুকনাছড?ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয?ের অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি কল্লোল চাকমা, সহসভাপতি জ্যোতির্ময? চাকমা, সদস্য মনিষা চাকমা, সুকেশ চাকমা, করুন কান্তি চাকমা, প্রণয? চাকমা, ঘোষিতা চাকমা, রূপাধন চাকমা ও অভিভাবক তন্ট চাকমা প্রমূখ।
শুকনাছড?ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয?ে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাশ না করিয়ে এবং মাসের পর মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার পরও প্রতিমাসে ৩৪ হাজার (চৌত্রিশ হাজার) টাকা প্রতিমাসে বেতন-ভাতা উত্তোলন করার কথা এবং বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতের বিষয়ে ০৫ সেপ্টেম্বর-২০২৩ খ্রি. তারিখ মঙ্গলবার বরকল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসাররে কার্যলয় থেকে ৩ কার্যদিবসে মধ্যে কারণ দর্শানোর নোর্টিশ পাওয়ার কথা স্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তার। কিন্তু ক্ষমতাসিন রাজনৈতিক নেতাদের কারণে প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তারের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
এছাড়া রাঙামাটি পার্বত্য জেলার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজক চাকমার মত দলকানা আওয়ামীলীগের চিহ্নিত দোসর প্রকৌশলীর কারণে রাঙামাটি জেলায় সরকারী প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয?ে স্থাপনা সংস্কার এবং নির্মাণে যে পরিমান দুর্নীতি আর লুট-পাট হয়েছে তা তদারকির কেউ নাই।
পার্বত্য চুক্তির মারপ্যাচে স্থানীয় জনসাধারন অসহায়। শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবিক অবস্থানে ফিরে না গেলে শিক্ষা ক্ষেত্রে পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসীরা গভীর সংকটে নিমজ্জিত হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষাখাত চলে যাবে বহিরাগত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে।
পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারীদের অর্থনৈতিক অধিকার একটি গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি হয়ে আছে। পার্বত্য অঞ্চলে গড়ে উঠেনি কোন মিল, কারখান ও পর্যটন শিল্পের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। চাঁদাবাজদের হাতে শতভাগ জিম্মি তার পরও কেবলমাত্র কাঠ,বাঁশ, মাছ, পাথর ও মৌসুমৗ ফল ক্রয় বিক্রয় ছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামীলীগ-পিসিজেএসএস-মুল উভয়ে উদাসীন, একে অপরের ওপর দায় চাপাতে ব্যস্ত ছিলেন। বৈষম্যমূলক পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ের বসবাসরত জনেগণের নাগরিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এজন্য পিসিজেএসএস-মুল এবং স্বৈচারী শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ বেশী দায়ী।
পার্বত্য চুক্তির পর পাহাড়ে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙ্গালী সকলেই আশায় বুক বেঁধেছিলো কিন্তু তাদের সেই আশায় গুড়েবালি।
পার্বত্য চুক্তির পর পাহাড়ে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর লোকদের নিয়ে রাঙামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে সরকার বা পিসিজেএসএস চুক্তির বিষয়ে আস্তা অর্জন অথবা চুক্তির মৌলিক অবাস্তবায়ীত দিকগুলো সভা,সমাবেশ,সেমিনার ও আলোচনা সভা পর্যন্ত করেনি।
নিজেদের অধিকারের জন্য নেংটি,ছেড়া লুঙ্গি আর গামছা পরে যাঁরা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন, বছরের পর বছর চোখ বাঁধা অবস্থায় মাটির গর্তে মৃত্যুর প্রহর গুনেছে, স্ত্রী,পুত্র, মা,বাবাকে রেখে জীবন,যৌবন কারাগারে কাটিয়েছেন পাহাড়ি-বাঙ্গালীরা অশিক্ষিত মূর্খ কামলারা কিন্তু পার্বত্য চুক্তির সুফল ২৬ বছরেও পায়নি। এর জন্য দায়ী কে ? বা কোন পক্ষ সরকার না-কি পিসিজেএসএস ? প্রশ্ন থেকে যায়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ সভাপতি ঊষাতন তালুকদার ও বাংলাদেশ অধিবাসী ফোরাম এর সাধারন সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং কর্তৃক গণমাধ্যমে প্রেরিত আমন্ত্রণপত্রে জানাযায়, ২ ডিসেম্বর ২০২৩ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৬তম বর্ষপূর্তি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৬তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের উদ্যোগে ২ ডিসেম্বর ২০২৩, শনিবার সকাল ১০:১৫ টায? ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায?তনে এক আলোচনা সভার আয?োজন করা হয?।
আলোচনা সভায? পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এবং পাহাড?ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয?ে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয? লারমা।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয?ক আন্তর্জাতিক কমিশনের কো-চেয?ারপার্সন এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয?ক সংসদীয? ককাসের সমন্বয?কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয?ের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সহ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের নির্বাহী সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয?ের অধ্যাপক রোবায?েত ফেরদৌস, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায?ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয?কারী জাকির হোসেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয?ের শিক্ষক ড. সিন্ধা রেজওয?ানা প্রমূখ। এছাড?াও আলোচনা সভায? রাজনীতিক, বিশ্ববিদ্যালয?ের শিক্ষক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, ছাত্র ও যুব সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ ও আদিবাসী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এ থেকে একটি বিষয় পরিস্কার পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙ্গালীদের চুক্তি বাস্তবানের সাথে যুক্ত করতে স্বয়ং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-পিসিজেএসএস আন্তরিক নয়। পিসিজেএসএস-মূল যে আঞ্চলিক দল পরিচালনা করেন তাতে বৈষম্যে এ ভরা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয?ক আন্তর্জাতিক কমিশনের কো-চেয?ারপার্সন এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয?ক সংসদীয? ককাসের সমন্বয?কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয?ের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সহ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের নির্বাহী সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয?ের অধ্যাপক রোবায?েত ফেরদৌস, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায?ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয?কারী জাকির হোসেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয?ের শিক্ষক ড. সিন্ধা রেজওয?ানা প্রমূখ তাঁরা বিশিষ্ট্যজন কিন্তু তাঁরা কেউ পার্বত্য চট্টগ্রামের নাগরিক নয়। এসকল বিশিষ্ট্যজনরা হয়তো পিসিজেএসএস এর বন্ধু কিন্তু তাঁরা আদৌ পার্বত্যবাসীর বন্ধু নয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয?ক রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষত্রে গত ৫৩ বছরে স্থানীয় বাঙ্গালী, বড়ুয়া, তনচঙ্গা,সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, পাংখোয়া, লুসাই (মিজু), চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা প্রধান্য পায়নি। দেশ স্বাধীনের পর থেকে তারা বৈষম্যের শিকার।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এবং পাহাড?ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয?ে সবার আগে পাহাড়ে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙ্গালী সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, সকল জাতীয় ও আঞ্চলিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করা প্রয়োজন। এতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এবং পাহাড?ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয?ে জলঘোলা করা প্রতিক্রিয?াশীল চক্রটি এক সময়ে হারিয়ে যাবে।
পাহাড়ের রাজনৈতিক স্থায়ী সমস্যা সমাধান করতে হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সাথে যুক্ত করিতে হবে পাহাড়ে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী পাহাড়ি-বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীকে। পাহাড়ের বাইরে যাঁরা বাস করেন তাঁরা কি করে বুঝবেন পাহাড়ে মূল সমস্যা কি ?
রাজধানীতে কিংবা ভারতের দিল্লী-কলকাতায় সভা-সেমিনার করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবানের কোন যুক্তি নাই। এসব করায় কেউ কেউ বলে বেড়ান পাহাড়ের কতিপয় নেতা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী ইত্যাদি।
২০২৪ সালে এসে পাহাড়ের মূল সমস্যা সমুহ কি-কি ?
ভূমি, আইন শৃঙ্খলা, স্থানীয় ভোটার তালিকা ইত্যাদি।
ভূমি সমস্যা প্রধান। এর সমধান;ভূমি জরিপ অধিদপ্তরের অধিনে দিয়ারা সেটেলমেন্ট এর মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের ৩ জেলায় ভূমি জরিপ দ্রুত শুরু করা । এর জন্য আলাদা কোন আইন প্রনয়ন করিতে হবেনা।
পাহাড়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পর চাঁদাবাজদের উপদ্রব কয়েকগুন বেড়েছে। সেই সাথে পাহাড়ে অবৈধ আধুনিক অস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। পার্বত্য চুক্তিকালিন পাহাড়ে ছিলো ১টি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল। চুক্তির পর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আরো ৬টি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল। পাহাড়ে এখন ৭টি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল। কোন সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন কাজ করলে ঐ কাজের ঠিকাদারকে দিতে হয় ৬% করে চাঁদা, অফিস খরচ ৩৭%। ৬% করে ৪টি আঞ্চলিক দলকে = ২৪%+ ৩৭% = ৬১%। ১শত টাকার মধ্যে ৪ আঞ্চলিক দলকে ২৪ টাকা আর অফিসকে ৩৭ টাকা মোট ৬১ টাকা। বাকি ৩৯ টাকায় কোটেশন প্রাপ্ত ঠিকাদারগণ কোন ধরনের গুণগত মানের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করে থাকেন আশা করি বুঝতে কারো অসুবিধা হবে না। কাপ্তাই হৃদে মৎস্য শিকারী, মৎস্য ব্যবসায়ী, বাঁশ ব্যবসায়ী, কাঠ ব্যবসায়ী, মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী, নির্মান সামগ্রী ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, সাধারন ব্যবসায়ী, লঞ্চ, স্পিড বোট, কাঠ, হলুদ, আদা, মৌসুমী ফল, নির্মান সামগ্রী, আন্তঃ জেলা পশু ব্যবসায়ী, মৎস্য পরিবহনকারি ইঞ্জিন বোট, বাস, ট্রাক, সিএনজি অটো রিক্সা, মাইক্রো, চাঁদের গাড়ি (জিপ), মোটরসাইকেলসহ প্রতিটি যানবাহন, গবাদি পশু, শুকর,হাঁস, মুরগী, কৃষিপণ্য, জেলা শহর ব্যতিত প্রতিটি বাজারের দোকানদার, ব্যাংক, বিমা, সুদের কারবারি এনজিও, হোটেল-মোটেল এবং প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষকে সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য চাঁদা দিয়ে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। বিগত ২০২১ সালের নভেম্বরে ১১ তারিখ ২য় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৫ নং বড় হরিণা ইউপিতে ভোটারগণ তাদের পছন্দের চেয়ারম্যান-মেম্বার প্রার্থী ভোট দিতে পারেনি। আঞ্চলিক দলের পছন্দের প্রার্থীর জিতিয়ে নিতে প্রতিটি কেন্দ্রের বুথে অস্ত্রধারীদের উপস্থিতি ছিল শতভাগ। ১টি স্বাধীন দেশে এঘটনায় ভোক্তভোগীরা স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকারের প্রতি ক্ষুব্দ। যদিও তাদের প্রানের ভয়ে কোন অভিযোগ প্রকাশ করতে অপারগ। আঞ্চলিক দল সমুহের যে কোন অনুষ্ঠানে পাহাড়ে বসবাসকারিদের গুনতে হয় বাড়তি চাঁদা। এসব আঞ্চলিক দল গুলো হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মুল),পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সংস্কারপন্থী (পিসিজেএসএস-এমএন লারমা), ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মুল), ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট গণতান্ত্রিক (ইউপিডিএফ-সংস্কাপন্থী) আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি) মগ পার্টি ও কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট ইত্যাদি। এছাড়া সরকারি বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের হুমকিতে তাদের নির্দিষ্ট দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বসে সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন না। এলজিইডি, পিডিবি, গণপুর্ত, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ বিভাগ চাঁদাবাজদের কারণে ঠিক সময়ে উন্নয়ন কাজ শুরু এবং শেষ করতে পারছেন না। খোদ সরকার দলীয় সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালেয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি উভয়ের দাবি বিগত বছরের তুলনায় পাহাড়ে অবৈধ আধুনিক অস্ত্রের ব্যবহার বেড়ে গেছে। এর জন্য কেউ কেউ রাষ্ট্রীয় একটি এজেন্সীকে দায় করে থাকেন। একজন সাংবাদিক সব সময় সব সত্য কথা প্রকাশ করতে পারেনা। আমি তার বাইরে নয়।
এর সহজ সমধান; পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর প্রধান পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) সভাপতি শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয? লারমা প্রকাশ সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এর চেয়ারম্যান হিসাবে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় এবং পিসিজেএসএস এর দলীয় সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এর সদস্য হিসাবে রাষ্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। তাদের রাষ্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা বাতিলসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণঃমূল্যায়ন করা। একটি স্বাধীন দেশে আপনারা রাষ্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন আর দায়িত্ব পালন করবেন না এটা তো হতে দেয়া যায় না। মেনে নেয়া যায় না।
স্থানীয় ভোটার তালিকা প্রনয়ন। ১৯৯৭ সালে ২রা ডিসেম্বর সরকারের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির আহবায়ক আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ্ সম্পাদিত চুক্তিতে সই করেন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও তাদের দলীয় সরকার একনাগারে ১৫ বছর ক্ষমতাসীন থাকার পরও যখন সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক পাহাড়ে স্থানীয় ভোটার তালিকা প্রনয়নের কাজ শুরু করেন নাই তাহলে আগামী ২শত বছরেও স্থানীয় ভোটার তালিকা প্রনয়নের শুরু করার সম্ভবনা নাই। সম্পাদিত চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী বলে স্থানীয় ভোটার তালিকা প্রনয়নের দাবিতে অনড় ছিলেন পিসিজেএসএস-মুল সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা।
রাষ্ট্রীয় আইনে এবং করোনা মহামারীর সনদপত্র ব্যতিত চিকিৎসার জন্য ভারত গমনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের পক্ষে সম্পাদিত চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মুল) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা প্রকাশ সন্তু লারমাকেও বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে প্রচলিত নিয়ম মেনে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করে জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহন করতে হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর অর্থ লোভ ও ক্ষমতা লোভের কারণে পিসিজেএসএস যেমন তাদের জনগোষ্ঠীর লোকজনের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়েছেন তেমনি পিসিজেএসএস এর প্রতি পাহাড়ের মানুষ বিশ্বাস ও আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।
পাহাড়ের সাধারন জনগণ ক্রমেই জিম্মি হয়ে পড়েছে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা, দল ও উপদল সমুহের কাছে। গণমাধ্যমে পার্বত্য চুক্তির পক্ষে যাতে জনমত গড়ে না উঠে, পার্বত্য অঞ্চলের সাংবাদিকদের সমিতি, কমিটি, প্রেসক্লাব ও সংগঠন সমুহে বহিরাগত উগ্রসম্প্রদায় ব্যতিত স্থানীয় প্রগতিশীল কোন সাংবাদিক যেন সদস্য হতে না পারে তা ঠিক করে দেয় সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। গোয়েন্দা সংস্থা তাদের ইচ্ছা মতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এবং পার্বত্য অঞ্চলের বাইরে রাজধানীসহ বিভিন্ন নামে অনলাইন নিউজ পোর্টাল চালু করে স্বাধীনতা বিরোধী নেতা-কর্মীদের দিয়ে রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় করে পাহাড়ে বসবাসরত জনগণের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ বা টকশোর নামে অপপ্রচার অব্যাহত রেখেছে।
কেউকেউ গণতন্ত্রের লেবাসধারী আপাদমস্তক সুবিধাবাদী, নীতিভ্রষ্ট, বহুরূপী ডিগবাজিতে পারদর্শী ও জনগণের শত্রু। আওয়ামীলীগের দোসররা ‘মুক্তিযোদ্ধার’ নাম ভাঙিয?ে বিভিন্ন টকশো, মিডিয?ায? ‘নিরাপত্তা বিশ্লেষক’ ‘গবেষক’–ইত্যাদি নানা তকমা লাগিয?ে লোকজনকে বিভ্রান্ত করেন। আত্মকাহিনীর ফিরিস্তি দিয?ে পার্বত্য চট্টগ্রামের আন্দোলন সংগ্রাম সম্পর্কে নিম্নমানের ও বিতর্কিত পুস্তিকাও রচনা করেছেন।
এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা উচিৎ কারণ তারা সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী। গোয়েন্দা সংস্থার ইচ্ছা বা মতের বাইরে পার্বত্য অঞ্চলের জনস্বার্থে কোন সংবাদ পরিবেশন বা প্রকাশ করলে সেই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তাদের চক্রের লোক দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বানোয়াট হয়রানি মুলক মামলা দায়ের, পুলিশ এবং আওয়ামীলীগের ক্ষমতাসীদের গুন্ডা-মাস্তান বাহিনী দিয়ে ঐ সাংবাদিকের বাড়ি-ঘরে গভীর রাতে হামলা-ভাংচুড় করে। পার্বত্য চুক্তি সমর্থনকারি পাহাড়ের গণমানুষের পক্ষে কথা বলায় এবং পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংসকারী সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় সেই সাংবাদিককে ২৪ মাসের দুধের শিশু-স্ত্রীসহ মিথ্যা মামলায় জেলখাটানো তার পর র্যাব-৭ এর মেজর ফাহিমকে দিয়ে সেই সাংবাদিক-কে অপহরণ করে সিলেট হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে চোখ বাঁধাবস্থায় ফেলে দিয়ে আসার নজির দেশের মানবিধাকারের জন্য মোটেও শুভ লক্ষণ নয়। পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষারকালিন যারা পাহাড়ে কালো পতাকা উড়িয়ে পার্বত্য চুক্তির বিরোধীতা করেছিল সেই সব উগ্রবাদি ইসলামপন্থিদের নিয়ে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার দহরম মহরম কি প্রমান করে ? সেই সকল উগ্রমৌলবাদিদের দিয়ে পাহাড়ে সুবিধা বঞ্চিতদের অধিকার আদায়ের কথা বলে নিত্য-নতুন সংগঠনের জন্ম দেয়া হচ্ছে তাদের কাজ, যাতে পাহাড়ে বাঙ্গালীসহ বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের কোন সংগঠন প্রতিষ্ঠা লাভ করতে না পারে। পার্বত্য অঞ্চলে কর্মরত গোয়েন্দা সংস্থা সমুহের ভুমিকা অত্যন্ত রহস্যজনক! এক সময় পার্বত্য অঞ্চলে কর্মরত সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআই এর কর্মকর্তারা বলতেন, সরকার প্রয়োজন মনে করে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন, তার ভাল-মন্দ এবং বাস্তবায়ন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা আর জনগণের করার ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন হলে অবশ্যই তাঁরা চুক্তির পক্ষ হয়ে সহায়তা করবেন। ২০০৭ সালের পর পাহাড়ে বসবাসরত স্থানীয়দের সাথে সেনাবাহিনীর সেই সম্পর্ক এখন আর নেই। পার্বত্য চুক্তির পর পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠীর নাগরিকরা আশায় বুক বেধেঁছিলো যে, পার্বত্য চুক্তি পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত মানুষদের মুক্তির সনদ হিসেবে কাজ করবে কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। ২৬ বছরে পার্বত্য অঞ্চলে সংবাদমাধ্যমের সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু সংবাদিকতার মূল কাজ যে পিসিজেএসএস-মূল, সেনাবাহিনী, বেসামরিক প্রশাসন ও ক্ষমতাবানদের কাছে প্রশ্ন করার সেই ক্ষমতা মোটেই বাড়েনি।
পাহাড়ে আর্মি সিকিউরিটি ইউনিট (এসইউ) নামে গোয়েন্দা সংস্থার জনবল বাড়িয়ে দিয়ে আরো সক্রিয় করা যেতে পারে। কারণ আয়নাঘর এর কারণে ডিজিএফআই নিয়ে জনমনে বিরুপ ধারন জন্ম নিয়েছে।
তার প্রমাণ : গত ২৭ আগস্ট-২০২৪ ইংরেজি তারিখ জোন কমান্ডার লে. কর্ণেল জুলকিফলী আরমান তার দুই জওয?ানসহ সাদা পোষাকে উপজেলা সদরে সান্ধ্য ভ্রমণে বের হন। এ সময? রাস্তার পাশের একটি দোকানে থাকা তিন পুলিশ সদস্য দয?াল চাকমা, তুহিন চাকমা ও নিরধ কুমার চাকম তাকে সালাম না দেয?ায? সেনা সদস্যরা তাদেরকে মারধর শুরু করে। এতে পুলিশ সদস্যরা আত্মরক্ষার চেষ্টা চালালে হামলা হাতাহাতির রূপ নেয?।
এরপর জোন কমান্ডার ক্যাম্পে ফিরে যান, তবে কিছুক্ষণ পর তিনি তার দলবল নিয?ে জুরাছড?ি থানায? হাজির হন এবং কয?েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড?ে থানা আক্রমণ করেন।
এ সময? সেনাবাহিনীর সদস্যরা উক্ত তিন পুলিশ সদস্যকে প্রচ- মারধর করেন এবং আটক করে জোনে নিয?ে যান। সেনারা থানায? ব্যাপক ভাঙচুরও চালায?।
থানার ওসি ও কতিপয? পুলিশ সদস্য তাদের উচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জোনে তাদের সহকর্মীদের খবর নিতে গেলে সেনা সদস্যরা তাদেরকে ক্যাম্পের সামনে আটকায? এবং ওসিসহ সবাইকে মারধর করে। সব মিলিয?ে সেনাদের হামলায? ১১ জন পুলিশ আহত হয?। অনেক পুলিশ থানা থেকে পালিয?ে নিরাপদ জায?গায? আশ্রয? নেয?।
বুধবার ২৮ আগষ্ট পুলিশের পাহারায় জুরাছড়ি থানার আহত পুলিশ সদস্য রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনলে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক তাদের ভর্তি করেন।
এসময় রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার আবু তৌহিদ বিপিএম রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন।
জুরাছড়ি থানার আহত পুলিশ সদস্যরা হচ্ছে :
এসআই মোস্তাক আহম্মদ (৩৭), পিতা মৃত আব্দুল গফুর, মাতা আছিয়া খাতুন।
এএসআই মিজানুর রহমন (৩৭), পিতা হুমায়ন কবির, মাতা পারভিন আক্তার।
কনেষ্টবল আব্দুস সালাম (৪৭), পিতা মৃত আব্দুল জলিল, মাতা ফিরোজা বেগম।
কনেষ্টবল মোরশেদ আলম (৩৭), পিতা জাকির হোসেন, মাতা হোসনে আরা।