রাঙ্গামাটিতে সাফজয়ী ঋতুপর্ণা-মণিকা ও রুপনা চাকমাকে জাঁকজমকপূর্ণ গণ সংবর্ধনা

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়ন বিজয়ী পাহাড়ের তিন ফুটবল কন্যা রূপনা চাকমা, ঋতুপর্ণা চাকমা ও মনিকা চাকমাকে রাঙ্গামাটিতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ রাজকীয় গণ সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় রাঙ্গামাটি চিং হ্লা মং মারি স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী রিজিয়ন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে যৌথভাবে এই উষ্ণ গণ সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন, রাঙ্গামাটি সেনা রিজিয়ন, পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৩জন খেলোয়ারকে ৩ লক্ষ করে মোট ৯ লক্ষ টাকা ও স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, রাঙ্গামাটি সেনাবাহিনীর রিজিয়ন কমান্ডার ব্রি: জেনারেল শওকত ওসমান, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার, জেলা পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন।
এছাড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রত্যেক খেলোয়ারকে ৫০ হাজার টাকাসহ সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন রাঙ্গামাটি পৌরসভা প্রশাসক নাসরিন সুলতানা। এছাড়া জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন, জেলা বিএনপি সভাপতি দীপন তালুকদার, সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো: মামুনুর রশিদসহ বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ। এছাড়া জেলা জামায়াতের পক্ষ থেকে জামায়াত আমির আব্দুল আলিম, সাধারন সম্পাদক মনসুরুল হক ও স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠনের পক্ষ থেকেও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
গণ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আগে সকাল ১০টায় রাঙ্গামাটির ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে সুসজ্জিত তিনটি ট্রাকে করে সাফজয়ী ঋতুপর্ণা, মনিকা ও রূপনাসহ তাদের সাবেক ফুটবল, প্রাথমিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ফিফার রেফারি ও রাঙ্গামাটির কৃতী সন্তান জয়া চাকমাসহ পুলিশের ব্যান্ড পার্টি নিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। গাড়ির বহরে সঙ্গে শতাধিক মোটরসাইকেল বাংলাদেশ পতাকা নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহন করে। গাড়ি বহরটি ঘাগড়া থেকে শহরে প্রবেশ করে রাঙ্গামাটির পুরো শহর প্রদক্ষিণ করে বনরূপা হয়ে রাঙ্গামাটি চিং হ্লা মং চৌধুরী মারী স্টেডিয়ামে গিয়ে শেষ হয়। পরে স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।
এ সংবর্ধনা সভায় রাঙ্গামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শওকত ওসমান বলেন, এই সংবর্ধনার মধ্যদিয়ে অনুপ্রেরণা তৈরি হবে পাহাড়ের নতুন খেলোয়াড়দের। আর পাহাড়ের এই কন্যাদের জয় একটা সম্প্রীতির মেলবন্ধন তৈরি করেছে। নতুন খেলোয়াড় উঠে আসার জন্য আজকের এই সংবর্ধনা একটি বড় প্লাটফর্ম। এই সংবর্ধনা থেকে আমরা যেমন তাদের অভিনন্দ জানাচ্ছি, তেমনি শিক্ষার্থীরা অনুপ্রেরণা পাবে খেলার প্রতি।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি জয়ীদের যথাযত সম্মাননা দিতে। সংবর্ধনাটি উচ্ছ্বাসে পরিণত হয়েছে মানুষের মধ্যে। রাঙ্গামাটিবাসী তাদের সংবর্ধনা দেখে আনন্দিত। আনন্দিত সাফ জয়ীরা। আমরা চেষ্টা করছি রাঙ্গামাটিতে বিকেএসপি প্রতিষ্ঠা করতে। বিকেএসপি প্রতিষ্ঠা হলে পাহাড়ে হাজারো রুপনা, ঋতুপর্ণা ও মনিকা চাকমা তৈরি হবে। খেলার প্রতি আগ্রহ বাড়বে এ অঞ্চলের সন্তানদের।
বক্তারা বলেন, রূপনা চাকমা, ঋতুপর্ণা চাকমা ও মনিকা চাকমা আমাদের গর্ব। তারা জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক ক্রীড়াঙ্গনে দেশ ও রাঙ্গামাটিকে চিনিয়ে দিয়েছে। পর পর দু’বার সাফ জয়ে তারা গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করেছে।
বক্তারা আরো বলেন, মেয়েদের ফুটবল খেলাকে অনেকে বাঁকা চোখে দেখত। কিন্ত এরা সবাইকে বোঝাতে পেরেছে, মেয়েরা বোঝা নয়। বরং ঠিকঠাক পরিচর্যা করতে পারলে ওরা ফুল হয়ে ফুটবে। এ রকম আলোকিত মানুষ যেদিকে যাবে আশপাশ আলোকিত হবে। তাই তাদের জন্য এমন উদ্যোগ।
সাফজয়ী তিন বীর কন্যা তাদের অনুভুতি ব্যক্ত করে বলেন, এই ধরনের সংবর্ধনা সামনের দিকে তাদের আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। তারা আগামীতে যেন দেশের জন্য আরো শুনাম বয়ে আনতে পারেন এজন্য সকলের নিকট দোয়া চেয়েছেন।
উল্লেখ্য, নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট ধরে রাখে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলও। ফাইনাল ম্যাচে দেশের হয়ে আলো ছড়ান পাহাড়ের বীর কন্যারা। নেপালের গোলবারে যে দুইটি বল গিয়েছে; তার দুটোই দিয়েছেন পাহাড়ের বীর কন্যা কনিকা চাকমা ও ঋতুপর্ণা চাকমা। খেলায় সেরা খেলোয়াড় হয়েছে রাঙ্গামাটির কন্যা ঋতুপর্ণা চাকমা এবং টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষক হয়েছে রূপনা চাকমা। এর আগেও, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ বিজয়ী হওয়ায় ২৯ সেপ্টেম্বর সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। এবারও একই ধরণের কর্মসূচি নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
পাহাড়ের মেয়ে ঋতুপর্ণা চাকমার গ্রামের বাড়ি রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের দুর্গম মগাছড়ি গ্রামে। রূপনা চাকমার বাড়ি রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ভূঁইয়াদাম গ্রামে। আর মনিকা চাকমার বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার লক্ষ্মীছড়ি ইউনিয়নের সুমান্ত পাড়ায়।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসককে বদলিজনিত ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাব কর্মময় জীবনে জেলাবাসীর পাশাপাশি সাংবাদিকরাও অনেক সাহায্য করেছেন —–মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান জেলা প্রশাসক হিসেবে তিনি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা শক্তহাতে সমাধান করেছেন —-এ কে এম মকছুদ আহমেদ

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30