॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পাহাড়ে ৪০০০তম পাড়াকেন্দ্র আজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই উপলক্ষে রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ের মিতিঙ্গাছড়ি ও ঢাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং ইউনিসেফ এর যৌথ উদ্যোগে কাল সকাল ১০ টায় ঢাকার প্যান ফ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের গ্রান্ড বলরুম হতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার মিতিঙ্গ্যাছড়ি নবনির্মিত পাড়াকেন্দ্রটি উদ্বোধন করবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পের ৪০০০তম পাড়াকেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রীর আর্ন্তজাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গওহর রিজভী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, ইউনিসেফ বাংলাদেশ এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ এডওয়ার্ড বেগবেডার, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর ঊশৈশিং, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরাসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পের মাঠপর্যায়ের কর্মী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। অন্যদিকে রাঙ্গামাটি জেলার মিতিঙ্গাছড়ি পাড়াকেন্দ্রে উপস্থিত থাকবেন মহিলা সাংসদ জে এফ আনোয়ার চিনু, সাংসদ উষাতন তালুকদার, সাবেক সাংসদ দীপংকর তালুকদার।
পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকায় সার্ভিস সেন্টার হিসেবে বহুল পরিচিত এই পাড়াকেন্দ্র। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া এই পাড়াকেন্দ্রর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের শিশু, কিশোরী ও নারীদের সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- সাধারণত একই ধর্ম ও সম্প্রদায়ের এবং একই ভাষাভাষী ৪০-৫০ টি পরিবারকে সেবা দেয়ার জন্য পরিচালিত একটি কেন্দ্র বা স্থান। তবে ক্ষেত্রবিশেষে একাধিক সম্প্রদায় বা কম সংখ্যক পরিবারের জন্যও একটি পাড়াকেন্দ্র থাকতে পারে। পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমে ৩-৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য প্রাক-শৈশব যতœ ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দান, গর্ভবতী, প্রসুতি ও নবজাতকের স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া, প্রত্যক্ষ পুষ্টি কার্যক্রম পরিচালনা, স্বল্পব্যয়ী ও যথোপযুক্ত জীবন নির্বাহী কৌশল ও পদ্ধতির প্রদর্শন ও প্রশিক্ষণ দেয়া, শিশু সুরক্ষা, শিশু অধিকার ও নারীর অধিকার বিষয়ক ধারনা প্রদান ও কম্যুনিটি সদস্যদের এসব বিষয়ে আচরণগত পরিবর্তন সাধন করা,কম্যুনিটির হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষন করা, কম্যুনিটি সভা করা, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সামাজিক কাজে ব্যবহার করা হয় এই পাড়াকেন্দ্র। স্থানীয় একজন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নারীকর্মী কেন্দ্রটি পরিচালনা করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অধিকাংশ মানুষ দুর্গম এলাকায় বসবাস করে যেখানে মৌলিক সেবাসমূহ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো দুরূহ ও কষ্টসাধ্য এবং এ এলাকার অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। সঙ্গত কারণেই এখানে মাথাপিছু আয় এবং ক্যালরী গ্রহণের হার জাতীয় হারের চেয়ে নিম্নে। স্বাস্থ্য সেবার প্রাপ্যতা, বিদ্যালয়ে ভর্তির হার, নারী শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়:সুবিধা বিবেচনায় তিন পার্বত্য জেলা নিচের সারিতে অবস্থান করছে। এর প্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার আর্থ-সামাজিক সূচকসমূহের উন্নয়ন; বিশেষ করে মা ও শিশুর সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ ধরনের এ প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকার এবং ইউনিসেফ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ৪৭৩৪ টি পাড়ার মধ্যে ৩৫১৯টি পাড়ায় ১৬৫৩৪৩ পরিবারের ৮৫৯৭৮৪জনকে প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের কার্যক্রমের ফলে পার্বত্যবাসীর জীবনমানের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধিত হয়েছে; এ অঞ্চলে প্রাক-প্রাথমিকে ভর্তি হার জাতীয় হারের তুলনায় ১৩.৩৩ শতাংশ অধিক, পার্বত্যাঞ্চলে ১৪০টি কম্যুনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামীন জনগোষ্ঠীর এক তৃতীয়াংশের আয়রন সাপ্লিমেন্টেশান করা হচ্ছে। বাকী দুই তৃতীয়াংশ পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, ৪৪০০ জনের একটি প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী তৈরী করা হয়েছে যারা সামাজিক পরিবর্তনের ভূমিকা পালনে সক্ষম। এদের ৯৫% মহিলা। সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্প পার্বত্যবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে মূল্যবান অবদান রেখেছে। জন্ম নিবন্ধন, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতি উন্নয়ন, পানি ও পয়: ব্যবস্থার উন্নয়ন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে পার্বত্যাঞ্চলে দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। পাড়াকর্মীর জ্ঞান ও দক্ষতা, প্রকল্প বাস্তবায়নে কমিউনিটির অংশগ্রহণ এবং সেবা বিতরণে বিভিন্ন সংস্থার সম্পৃক্ততা পাড়াকেন্দ্রকে তৃণমূল পর্যায়ে সত্যিকার অর্থে সেবা বিতরণের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত করেছে। সহযোগী সংস্থাসমূহের অংশগ্রহণের মাধ্যমে পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমে স্বাস্থ্য, শিশু শিক্ষা, পুষ্টি, পানি ও পয়ঃব্যবস্থা ও হাইজিন অভ্যাস গড়ে উঠার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
বর্তমানে ৩ পার্বত্য জেলার ২৬টি উপজেলায় ৪০০০টি পাড়াকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যার সর্বশেষ ৪০০০তম পাড়াকেন্দ্রটি কাল রোববার প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। ৪০০০তম পাড়াকেন্দ্র উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে তিন পার্বত্য জেলায় উৎসবের আমেজ দেখা দিয়েছে। পার্বত্যবাসী প্রত্যাশা করছেন প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মাধ্যমে এ এলাকার মানুষের সেবাপ্রাপ্তি স্থায়িত্ব লাভ করবে।
