॥ আলহাজ্ব এ,কে,এম মকছুদ আহমেদ ॥ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২০ বছর পূর্তি হলেও পাহাড়ে প্রকৃত শান্তি ফিরে আসেনি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সাংগ্রাই, বৈসুক, বিজু, সাংক্রাইন এর জীবন নিরাপদ নয় বলে বিষোধগার করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। দেশের শাসক গোষ্ঠী জুম্মদের সংস্কৃতি, বিজু সংগ্রাই বৈসুকের আনন্দ ধ্বংস করতে চাচ্ছে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সাংগ্রাই, বৈসুক, বিজু, সাংগ্রাই এর জীবন নিরাপদ নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে উপ-নিবেশিক শাসন শোষন বজায় রয়েছে। তাই আজকে বিঝুর জীবন কেন নিরাপদ নয় সেটা গভীর ভাবে বুঝতে হবে, ভাবতে হবে। বিঝুর জীবন নিরাপদ কারলে আমার করনীয় কি বা কি ভ’মিক পালন করতে হবে তা সকলকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে।
তিনি গত শনিবার ৭ ই এপ্রিল ২০১৮ রাঙ্গামাটির কল্যাণপুরে রানী বিনীতা রায় পাঠাগার ও ক্লাব কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা সভাও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ বক্তব্য দেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার এবং জনসংহতি সমিতির মধ্যে ১৯৯৭ সনের ২রা ডিসেম্বর এক চুক্তি ও স্বাক্ষরের মধ্যে দিয়ে প্রায় দেড় যুগের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের সমাপ্তি ঘটে এবং অস্ত্র সমর্পণ করে জেএসএস এর গেরিলারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।
সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি শ্রী জোতিরিন্দ্রি বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা চুক্তি স্বাক্ষর করে ছিলেন।
উক্ত চুক্তির পর আশা প্রকাশ করা হয়েছিল যে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে এবং জনগনের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস বইছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য শান্তির ২০ বছর পরও পাহাড়ে স্থায়ী শান্তিতো দুরের কথা আরও জটিল থেকে জটিলতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে সন্তু লারমার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে।
পুনরায় অস্ত্র হাতে নেয়ার ঘোষণাও অনেকবার দিয়েছিলেন। অনেক দরকষাকষির মাধ্যমে বর্তমান অবস্থানে রয়েছে।
জনসংহতি সমিতির সভাপতি চুক্তি অনুযায়ী সকল সরকারী সুবিধা ভোগ করছেন। গাড়ীতে সরকারী পতাকা ও ব্যবহার করছেন। প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা ভোগ করছেন, হাউজ গার্ড থেকে শুরু করে সকল প্রকার প্রটেশন দেয়া হচ্ছে তাকে। সরকারী ভাবে বলা হচ্ছে পার্বত্য চুক্তির ৭২ টি ধারার মধ্যে ৪৮ টি বাস্তবায়ন শেষ হয়েছে, ১৫ টি চলমান রয়েছে, ৯ টি বাস্তবায়ন হয়নি। এতে বুঝা যাচ্ছে তিন ভাগের বেশী বাস্তবায়িত হয়েছে। তার পরেও জনসংহতি সমিতির দাবী ধোপে টিকে না।
অন্যদিকে এ কালোচুক্তি বাতিলের দাবীতে বাঙ্গালী সংগঠন গুলো আন্দোলনে নেমেছে। উচ্চ আদালতে মামলা মোকদ্দমা ও করা হয়েছে।
১৯৯৭ সালে এ চুক্তি স্বাক্ষরের পর বিএনপি প্রবল বিরোধী করে ক্ষান্ত হয়নি। বিএনপি চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঢাকা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম পর্যন্ত লংমার্চ কর্মসূচী পালন করে যারা বিশ্বকে দেখিয়েছিলেন যে এ চুক্তি জনগন চায় না। এ চুক্তি ধারা জনগনের কল্যাণ হতে পারে না। কাজেই চুক্তি বাতিল করতে হবে।
কিন্তু পরবর্তীতে বিএনপি যখন ক্ষমতায় গিয়েছিলেন তখন তাদের হাতেই ক্ষমতা ছিলো এই চুক্তি বাতিল করার। কিন্তু তা না করেই চুক্তি শর্তানুযায়ী বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে চুক্তিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এ নিয়ে জনগনের মধ্যে ভীষণ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
পার্বত্য এলাকার মানুষকে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি বসবাস করতে হচ্ছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন কিছুটা ধীরগতি হলেও আওয়ামীলীগ সরকারের চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় পাহাড়ীদের মাঝে যেমন হতাশা রয়েছে তেমনি পাহাড়ে বসবাসকারী বাঙ্গালীদের মাঝে চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে প্রবল বিরোধীতা। এর মধ্যে নতুন করে যোগ ভ’মি কমিশন নিয়ে জটিলতা।
পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাতিল ওচুক্তি সংশোধনের দাবীতে বাঙ্গালী সংগঠন গুলো ইউপিডিএফ এবং চুক্তি বাস্তবায়নের দাবীতে জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) পাল্টা পাল্টি আন্দোলনরত।
অন্য দিকে পার্বত্য চুক্তিতে আদিবাসী শব্দ না থাকাতে আদিবাসী বিতর্ক নিয়ে দেশে বিদেশে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। চুক্তির কোথাও আদিবাসী শব্দ নেই। উপজাতি ব্যবহার করা হয়েছে। যেখানে আদিবাসী বিতর্ক নিয়ে অহেতুক সময় নষ্ট করার কোন কারণ থাকতে পারে না চুক্তির সময় উপজাতি লেখে এখন আদিবাসী তির্কের জন্য সার্কেল চীফ এবং নেতৃবৃন্দের দাবী। এ বিতর্ক থেকে সরে দাঁড়ানো দরকার।
অনেকবার জাতীয় রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগাম চুক্তি অথবা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিরাজমান সমসা সমাধানে কোন ভ’মিকাই নেই বললে ভুল হবে না। বরংচ কিছু কিছু বাম নেতৃবৃন্দ এবং লেখক যারা সুশীল সমাজ দাবী করে থাকেন তারা উস্কানী দিয় যাচ্ছে। তাদের অনেকেই বিবাদ সৃষ্টিতে তৎপর রয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনের নাম উল্লেখ না করলেই নয়। তারাহচ্ছেন পংকজ ভট্টাচার্য্য, সৈয়দ আবুল মকসুদ, সুলতানা কামাল, ব্যারিষ্টার সারা হোসেন, মেসবাহ কামাল প্রমুখ।
সরকার পক্ষকে অবশ্যই জাতীয় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। তারপরেও সরকার চুক্তির সম্পূর্ণ বাস্তবায়নে বন্ধ পরিকর।
এত কিছুর পরেও পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসেনি। সাধারণ মানুষে নিরাপদে ঘুমাতে পারে না। জেএস,এস, ইউপিডিএফ ও সংস্কার পন্থি বর্তমানে ইউপিডিএফ এর নতুন গ্রুপের জ্বালায় জনগন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
অন্য দিকে চুক্তির বাহিরে অলিখিত কিছু দফা নাকি রয়েছে বিভিন্ন সময়ে দাবী করা হচ্ছে। এ অলিখিত চুক্তির বিষয়ে প্রকাশ করা দরকার। এ ধরনের অবিশ্বাস নিয়ে চলে না। এতে অনিশ্চয়তার মাধ্যমে জনগন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে যে পরিস্থিতি এবং অনিশ্চিয়তার সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনে সরকার এবং সকল পক্ষকে সম্মিলিত ভাবে উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে সমাধান দিতে হবে।
জনগন আর অনিশ্চয়তার মাধ্যমে থাকতে চায় না। সরকার এবং সংগঠন গুলোকে সকল সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নতুবা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাহিরে চলে যাবে।
