॥ ডেস্ক রিপোট ॥ নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় আরো একজন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ জন।
শনিবার থেকে রবিবারের মধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার তল্লা এলাকায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে মারা যাওয়াদের মধ্যে মসজিদের মুয়াজ্জিন, ইমাম ও দুই শিশু রয়েছে।
মৃতরা হলেন- ইমাম আবদুল মালেক (৫৫), মো. মিজান ওরফে নিজাম (৪০) ও নাদিম (৪৫), রিফাত (১৮), মোস্তফা কামাল (৩৪), জুবায়ের (১৮), সাব্বির (২১), কুদ্দুস ব্যাপারী (৭২), হুমায়ুন কবির (৭০), ইব্রাহিম (৪৩), মোয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৮), জুনায়েদ (১৭), জামাল (৪০), জুবায়ের (৭), জুয়েল, রাসেল (৩৪), নয়ন (২৭), রাশেদ (৩০), কাঞ্চন হাওলাদার (৫০), মাইনউদ্দিন (১২) ও বাহারউদ্দিন (৫০), মো. বাহাউদ্দীন (৫৫), জুলহাস উদ্দিন (৩০), শামীম হোসেন (৪৮) ও মোহাম্মদ আলী মাস্টার।
এদিকে এ ঘটনায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। ফতুল্লা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে মামলাটি করেন। দগ্ধদের মধ্যে বর্তমানে আরো যারা ভর্তি আছেন, তাদের অবস্থাও সঙ্কটাপন্ন বলে ইন্সটিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শংকর পাল জানিয়েছেন।
তিনি জানান, দগ্ধ অবস্থায় যে ৩৭ জনকে বার্ন ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়েছিলো, তাদের মধ্যে শনিবার রাত ১১টার মধ্যে মারা যান ২১ জন।
ওসি আসলাম হোসেন জানান, যে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ২০ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাদের দাফনও করা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে এশার জামাত শেষে বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে অর্ধশতাধিক মুসল্লি দগ্ধ হন। বিস্ফোরণে মসজিদের ছয়টি এসি পুড়ে যায়। জানালার কাচ উড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আধা ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বলা হচ্ছে, এসি বিস্ফোরণে এই ঘটনা ঘটে।
বিস্ফোরণে ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হওয়া বায়তুস সালাত জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল গফুর মিয়া বলেন, ‘সাত দিন আগে মসজিদের প্রবেশ কক্ষের মেঝে দিয়ে বুদ্বুদ করে গ্যাস বের হচ্ছিল। ধারণা করছিলাম যে, এই গ্যাস পাশের গ্যাস লাইন লিকেজ হয়ে বের হচ্ছে। তাই নারায়ণগঞ্জে তিতাসের আঞ্চলিক অফিসে গিয়ে গ্যাস লাইন সরিয়ে ফেলার মৌখিক আবেদন করি। অফিসের এক কর্মকর্তা গ্যাস লাইন সরানোর জন্য ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চান।
নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণ কী ঘটেছিল ওই মসজিদে
নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজের সময় ছয়টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে একসঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
সে সময় মসজিদে থাকা অর্ধশতাধিক মানুষের সবাই কমবেশি দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে ৩৭ জনকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, “যারা ভর্তি আছেন, তারা কেউ শঙ্কামুক্ত নন। তাদের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ বলা যায়।”
নারায়ণগঞ্জের ডিসি জসিম উদ্দিন শনিবার সকালে বার্ন ইনস্টিটিউটে যান। তিনি মৃতদের পরিবারকে ২০ হাজার এবং আহতদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, ওই মসজিদের নিচ দিয়ে তিতাসের যে গ্যাসের পাইপ গেছে, সেখানে লিকেজ থেকে গ্যাস জমে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছে।
ফায়ার ব্রিগেডের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, “এসিতে ব্যবহৃত ফ্রেয়ন গ্যাসের অস্তিত্ব আমরা মসজিদের ভেতরে বাতাসে পেয়েছি। এর পেছনে অন্য কোনো ঘটনা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
এ ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, জেলা প্রশাসন, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি, সিটি করপোরেশন আলাদা পাঁচটি কমিটি গঠন করেছে।
