জায়গা ঠিক হলেই চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ

জায়গা নির্ধারণ করা হয়ে গেলেই চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা যাবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
মঙ্গলবার (২৪ মে) কেসি দে রোডের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় চট্টগ্রাম বিভাগের সিভিল সার্জনরা জনবল ও অ্যাম্বুল্যান্স সংকটসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।
মন্ত্রী বলেন, দুই বছর আগে চট্টগ্রামের জনগণের নেতারা বলেছিলেন এখানে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় চাই। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়টি আইনে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী চান, নতুন জায়গায় নতুন ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়টি হোক। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ঠিক থাকবে। সবার মতামতের ভিত্তিতে জায়গা ঠিক হয়ে গেলে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা যাবে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) নেতাদের শেখ হাসিনার প্রতিনিধি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, দাবির শেষ নেই। এখন আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। জয় বাংলা বা জিন্দাবাদ নয়, কাজের মাধ্যমে দেখিয়ে দিতে হবে আপনারা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাস্থ্যখাতে যে অগ্রগতি হয়েছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। সুরম্য ভবন, সুন্দর যন্ত্রপাতি দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু ডাক্তার-নার্সরা কাজ না করলে কিছুই হবে না।
লোকবল সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লোকবল দীর্ঘদিনের সমস্যা। অনেকবার চেষ্টা করেছি। ২৬ মে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বসবো। জুনের মধ্যেই অনেক অ্যাম্বুল্যান্স পাবো। যেখানে যেখানে নেই সেখানে অ্যাম্বুল্যান্স পাবেন। তিন দিন পর অনেক নতুন ডাক্তার দিচ্ছি। এনেসথেসিস্ট যেখানে কম আছে সেখানে পাবেন।
তিনি পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বৈমাত্রেয় ভাইয়ের মতো না হয়ে একযোগে প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। মন্ত্রী চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরটি টিনশেডের স্থলে পাকা ভবন করে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
এর আগে মন্ত্রী বেলা ১টা ২২ মিনিটে স্কাইপিতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২৫০ শয্যার কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আইসিইউ উদ্বোধন করেন। এ সময় মন্ত্রী বলেন, জেলা পর্যায়ে আইসিইউ করতে যাচ্ছি আমরা। কক্সবাজার দিয়ে যাত্রা শুরু করলাম। প্রাথমিকভাবে ছয় শয্যা থাকবে, পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে।
কক্সবাজারের স্বাস্থ্যসেবা দেখতে মন্ত্রী যাবেন উল্লেখ করে ডাক্তারদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা দিনরাত পরিশ্রম করবেন। রোগীদের সেবা দেবেন। কক্সবাজারের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল আন্তরিক ছিলেন বলেই কক্সবাজারে আইসিইউ হলো। ছয় শয্যা দিয়ে যাত্রা শুরু হলো। আগামী দিনে শয্যার সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আলাউদ্দিন মজুমদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক, বিএমএ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান, চমেক অধ্যক্ষ ডা. সেলিম মো. জাহাঙ্গীর, চমেক হাসপাতালের পরিচালক বি. জেনারেল জালাল উদ্দিন, ডা. বদিউজ্জামান ডাব্লিউ প্রমুখ। সঞ্চালনায় ছিলেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী।
কক্সবাজার হাসপাতালে স্বাগত বক্তব্য দেন বিএমএ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. শরীফ। তিনি বলেন, ১০ বছর পর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসে একজন মন্ত্রী এলেন। আমরা চাই আগ্রাবাদের পরিবার পরিকল্পনা ভবনের মতো এ পাহাড়ে একটি আধুনিক কমপ্লেক্স করা হোক।
ডা. মুজিবুল হক খান তার বক্তব্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে হলে জনগণ উপকৃত হবে বলে মন্তব্য করেন।
লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. গোলাম ফারুক ভূঁইয়া বলেন, আমরা সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সিজার, গলব্লাডার অপারেশনে এক পয়সাও নিচ্ছি না। সরকারি, বেসরকারি, সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন উৎস থেকে তিন কোটি টাকার কাজ করেছি। কিন্তু ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই ১০০ শয্যার সেবা দিতে হচ্ছে। আয়া নাই, সুইপার নাই। বলতে গেলে ৫০ শতাংশ লোকবল নাই। অ্যাম্বুল্যান্সটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। দয়া করে একটি অ্যাম্বুল্যান্স দিন।
কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ৪৫৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে আমরা দেড় কোটি রোগীকে সেবা দিয়েছি। ৩ লাখ ২২ হাজার রোগীকে রেফার করেছি। ঢাকার কাছে হওয়ায় আমাদের ডাক্তাররের সংকট নেই। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চার শতাধিক পদ খালি আছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এএনএম শামসুল করিম বলেন, আমাদের হাসপাতাল ভবনটি অকেজো ঘোষণা করেছে গণপূর্ত বিভাগ। কিন্তু ওই ভবনে ৩০০ রোগী থাকতে দিতে হচ্ছে। ভবনটি পুনর্নির্মাণ করে না দিলে শেষ বয়সে আমাকে জেলখানায় কাটাতে হতে পারে!
তিনি অ্যাম্বুল্যান্স, মরদেহ রাখার জন্য হিমাগারসহ মেডিকেল কলেজের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ডা. নিশিতনন্দী মজুমদার দীঘিনালাসহ উপজেলা পর্যায়ে ১০ শয্যার জীর্ণশীর্ণ হাসপাতালগুলোতে আধুনিক ভবন ও শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় একজনেরও প্রাণহানি ঘটেনি বলে দাবি করেন।
বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. উদয় শঙ্কর চাকমা মন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি কমিটমেন্ট দিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু আমরা ডেলিভারি করাতে পারছি না।’
তিনি তিন বছর ধরে বান্দরবান সিভিল সার্জনের জন্যে গাড়ি বরাদ্দ নেই বলে জানান।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031