মিয়ানমারে যৌথ বাহিনীর অভিযান নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা

॥ মো.আবুল বাশার নয়ন, নাইক্ষ্যংছড়ি ॥ মিয়ানমারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ছাউনীতে হামলা পরবর্তী রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় নতুন করে উদ্বেগ ও আতংক দেখা দিয়েছে সীমান্ত অঞ্চলে। এতে করে বাংলাদেশে আবারো নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যার কারণে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) গত কয়েক দিন ধরে সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েনের মাধ্যমে সীমান্ত সুরক্ষার অব্যাহত চেষ্টা করে আসছেন।
সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় খোজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমার সীমান্তের কাছে আরাকান রাজ্যে গত ১০ অক্টোবর নিরাপত্তা বাহিনীর তিনটি ছাউনীতে হামলা চালায় একটি চরমপন্থিগোষ্টী। এতে ৯জন পুলিশ অফিসারসহ অন্তত ১৪জন নিহত হয়। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের এক কর্মকর্তার দাবী- বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থানরত রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরাএসও) এ হামরা করেছে। এ ঘটনার পর গত ছয় দিনের হামলায় অন্তত ৩৯জন নিহত হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপর হামলার ঘটনার পর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাড়াশি অভিযান শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। অভিযানের নামে মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর চরম নির্যাতন করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে। এতে শঙ্কা জেগেছে রোহিঙ্গাদের আবারো বাংলাদেশ মুখী হওয়ার। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন কুটনৈতিক ভাবে এ সমস্যার সমাধান করা না হলে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও রাখাইনদের যৌথ নির্যাতনে রোহিঙ্গারা দলে দলে দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাবে।
মিয়ানমার সীমান্তে বসবাসরতদের সাথে আলাপে জানা যায়, পর পর তিনটি হামলার ঘটনার পর থেকে থমথমে অবস্থার মধ্যদিয়ে রাখাইন রাজ্য থেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে শত শত রোহিঙ্গা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে সেসব এলাকায়। গত বুধবার এ হামলার পর রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি অভিযানে নামে সীমান্তরক্ষি বাহিনী। মংডুর সিতুউবিং গ্রামে অভিযানকালে সরকারী বাহিনীর উপর অস্ত্র ও লাঠি নিয়ে হামলা করে গ্রামবাসী। নিরাপত্তা বাহিনীর পাল্টা গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা মুসলিম। এছাড়াও শত শত ঘরবাড়ি ও চেকপোষ্টে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এদিকে এক ভিডিও বার্তায় মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে রোহিঙ্গাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হরকাতুল ইয়াদি নামে একটি চরমপন্থি গোষ্ঠী। ওই ভিডিও বার্তা ইসলাম, আরাকান, মা-বোনদের ইজ্জত ও মসজিদ-মাদরাসার রক্ষার জন্য সকল রোহিঙ্গাদের জিহাদের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানান।
সূত্র মতে, বর্তমানে অন্তত চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে অবৈধভাবে বসবাস করছে। আবার অনেকেই বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। তবে প্রায় ২ দশক আগে সামরিক জান্তা সরকারের নির্যাতনে পালিয়ে আসা আড়াই লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মধ্যে অধিকাংশকে নিজদেশে ফেরত পাঠানো হলেও এখনো প্রায় ২৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী মর্যাদায় উখিয়া ও টেকনাফের শিবিরে বসবাস করছে।
এদিকে কক্সবাজারের টেকনাফ, নাইক্ষ্যংছড়ি, ঘুমধুম, দোছড়ি, চাকঢালা, আশারতী সীমান্তে বিজিবি টহল জোরদার করা হয়েছে। সেই সাথে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। গত রবিবার থেকে সীমান্তে এ সতর্কতা নেন বলে জানিয়েছেন টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.কর্ণেল আবু জার আল জাহিদ। তিনি জানান, মিয়ানমারে অজ্ঞাতনামা গোষ্ঠি মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (পুলিশ) ক্যাম্পে হামলার পর টেকনাফে বাংলাদেশ সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। সীমান্তে সব বিওপি চৌকিতে বিজিবির সদস্য বাড়ানো হয়েছে। অধিনায়ক আরো জানান, বিশেষ করে সীমান্ত দিয়ে কোন অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেদিকে নজরদারি রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তে যাতে কোন লোকজন চলাচল না করে সবাইকে অবহিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আরাকানে রোহিঙ্গাদের বসবাস শুরু হয় সপ্তম-অষ্টম শতাব্দীতে। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম ও স্থানীয় আরাকানের মুসলিমদের সংমিশ্রনে রোহিঙ্গা জাতির উদ্বুভ। পরবর্তীতে চাঁটগাইয়া, রাখাইন, আরাকানী, বার্মিজ, বাঙ্গালী ভারতীয়, মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদ্ভুত এ সংকট জাতী রোহিঙ্গা জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রজম্মের পর প্রজম্ম রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে বসবাস করলেও তাদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে মিয়ানমার।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031